ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বেহাল শেয়ারবাজার, নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১০:১৭ এএম, ১৮ মার্চ ২০২৪

•বাজারে আস্থার সংকট
•বাজার মূলধন কমেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে
•প্রায় ৫০০ পয়েন্ট হারিয়েছে সূচক
•ফ্রেশ বিনিয়োগ হচ্ছে না- আবু আহমেদ
•ব্যাংকে টাকার সংকট- রিচার্ড ডি রোজারিও
•সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান অপপ্রচার চালানো হচ্ছে- ছায়েদুর রহমান

দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের শেয়ারবাজারে। মাঝে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের শেয়ারবাজারে চলছে অব্যাহত দরপতন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারের এমন দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানান গুজব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলদের নিয়ে নানান কটু কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে এখন চরম আস্থার সংকট।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের চার বছর মেয়াদের শেষ সময়ে এসে শেয়ারবাজার এমন দরপতনের মধ্যে পড়ায় কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নানানভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান কটু কথা বলছেন।

 

নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানান গুজব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দায়িত্বশীলদের নিয়ে নানান কটু কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে এখন চরম আস্থার সংকট।

 

করোনা মহামারির কারণে শেয়ারবাজারে যখন বড় ধরনের ধস নামে, সেই কঠিন সময়ে বিএসইসির হাল ধরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। চার বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়া এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মে মাসে। দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুসহ বেশ কয়েকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বর্তমান কমিশন।

তবে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম এক জায়গায় আটকে রেখে বড় ধরনের সমালোচনার মধ্যে পড়ে বর্তমান কমিশন। বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। লেনদেন বেড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে আসে। সূচক বেড়ে ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে ‘জেড’ গ্রুপ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতা শেয়ারবাজার আবার অস্থিতিশীল করে তোলে। কীসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে হুট করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঘোষণা আসে নতুন করে আর কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নেওয়া হবে না। কিন্তু পরবর্তীসময়ে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়।

এভাবে কিছু কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দরপতনের মধ্যে পড়ে শেয়ারবাজার। প্রায় এক মাস ধরে ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে এরই মধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকার ওপর। আর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৫০০ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজারের এ অব্যাহত দরপতনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে কারেকশন হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। গত ৪ থেকে ৫ বছরে লিজিং কোম্পানির শেয়ারে মানুষ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। পাওয়ার সেক্টরেও সরকার আগের মতো সুবিধা দিচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মেয়াদ শেষ। এই তিন সেক্টর বাদ দিলে আর কতটা কোম্পানি থাকে?’

‘আবার (ব্যাংকে) সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। এখন মানুষ চিন্তা করবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে আমি কত টাকা লভ্যাংশ পাবো, আর ব্যাংকে রাখলে কত টাকা পাবো। মানুষ তো এভাবে চিন্তা করে। বহু বড় বড় ইনভেস্টর, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার তারা তাদের টাকা বন্ড ও এফডিআরে খাটাচ্ছেন’- যোগ করেন এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক।

তিনি আরও বলেন, ‘আইসিবির কোনো টাকা নেই। তারা নেট সেল করে খালি। এই যে এ খাতে তারল্য সংকট, এটাই মূল কারণ। দেখতে হবে এখন শেয়ারগুলোর পেছনে কত টাকা ছুটছে, এই টাকার সরবরাহ তো কমে গেছে। তাহলে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হবে না তো কী হবে!’

 

বাজারে আস্থার সংকট রয়েছে। তবে বাজার সব সময় তো একরকম থাকে না। মাঝেমধ্যে এ রকম হয়, আবার এখান থেকে বেরিয়ে আসে। এগুলো থাকবেই বাজারে। আশা করি মানুষ যদি ভালো শেয়ার কিনে রাখতে পারে, মানুষের কাছে যদি ভালো শেয়ার থাকে, তাহলে তারা অপেক্ষা করবে, আলটিমেটলি আবার ওই রেট ক্রস করবে।

 

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কিছু শেয়ার তো জুয়াড়িরা নিয়ে নিয়েছে। সেগুলো কি ওখানে থাকবে? এখানে তো ফ্রেশ কেউ বিনিয়োগ করছে না। ব্যাংক আগে যা বিনিয়োগ করেছে এখন সেগুলো বিক্রি করছে। আইসিবি বিক্রেতা, আইসিবির কোনো টাকা নেই। এটা এখন একটা দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান। তাহলে শেয়ার কিনবে কে?’

কথা হয় ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিওর সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতেই এখন সংকট, ব্যাংকগুলোতে টাকা-পয়সার সংকট, এফডিআরের রেট বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর একটা চাপতো আছেই। পাশাপাশি বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও বাড়তি চাপ তৈরি করছে। ‘জেড’ গ্রুপের ইস্যু নিয়ে বাজারে সিদ্ধান্তহীনতা আছে। একবার সিদ্ধান্ত হলো পরবর্তী এজিএমের (বার্ষিক সাধারণ সভা) পর থেকে কার্যকর হবে। পরে আবার দেখা গেলো ২২টিকে জেড গ্রুপে আনা হলো। সবকিছু মিলিয়ে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘এসব বিষয়ে বাজারে আস্থার সংকট রয়েছে। তবে বাজার সব সময় তো একরকম থাকে না। মাঝেমধ্যে এ রকম হয়, আবার এখান থেকে বেরিয়ে আসে। এগুলো থাকবেই বাজারে। আশা করি মানুষ যদি ভালো শেয়ার কিনে রাখতে পারে, মানুষের কাছে যদি ভালো শেয়ার থাকে, তাহলে তারা অপেক্ষা করবে, আলটিমেটলি আবার ওই রেট ক্রস করবে।’

বেহাল শেয়ারবাজার, নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পপ্রচার হচ্ছে এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। আমার কাছে এগুলো দৃশ্যমান মনে হয়েছে।’

কী ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক খুললেই আপনি দেখবেন কত রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কেউ কমিশনকে গালি দিচ্ছে, আবার কোনো কোনো আইটেমের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন কেউ কেউ। এগুলোর কোনোটাই কাম্য নয়। এসব বিষয় বাজারে আতঙ্ক ছড়ায়। আপনার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে যদি ফেসবুকে আজেবাজে কথা বলেন, সেটা তো বাজারের জন্য ভালো হতে পারে না।’

আরও পড়ুন

বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষের পথে, এর কোনো প্রভাব বাজারে আছে কি না? এমন প্রশ্নে ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘কমিশনে কে আসলো, কে গেলো- আমাদের বিনিয়োগের সঙ্গে এটার সম্পর্ক কী? আমি বিনিয়োগ করবো কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দেখে। বিনিয়োগ করবো লভ্যাংশের জন্য। কে চেয়ারম্যান হলেন, কে কমিশনার হলেন, কে আসলো কে গেলো- এটার সঙ্গে সম্পর্ক কী। আমি তো দেখবো যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবো, সেই প্রতিষ্ঠান ঠিক আছে কি না।’

তিনি বলেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ওখানে (বিএসইসি) পরিবর্তন আসতে পারে। আবার পরিবর্তন নাও আসতে পারে। পরিবর্তন আসবে বা আসবে না কোনোটাই তো আমরা বলতে পারি না।’

‘বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ার অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যাংকের শেয়ার ৪ থেকে ৫ পিইতে (মূল্য আয় অনুপাত) পড়ে আছে। সেটা আপনি না কিনে কিনছেন বন্ধ কোম্পানির শেয়ার। এর দায় কে নেবে? কমিশনে যেই থাকুক, এটা কি কমিশনের দায়িত্বের বিষয়? আপনার টাকা দিয়ে আপনি শেয়ার কিনবেন, সিদ্ধান্ত আপনার, লাভ-লোকসান আপনার। বিনিয়োগকারী যতক্ষণ পর্যন্ত না সচেতন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এসব ঝামেলা থাকবে।’

 

কমিশনে কে আসলো, কে গেলো- আমাদের বিনিয়োগের সঙ্গে এটার সম্পর্ক কী? আমি বিনিয়োগ করবো কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দেখে। বিনিয়োগ করবো লভ্যাংশের জন্য। কে চেয়ারম্যান হলেন, কে কমিশনার হলেন, কে আসলো কে গেলো- এটার সঙ্গে সম্পর্ক কী। আমি তো দেখবো যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবো, সেই প্রতিষ্ঠান ঠিক আছে কি না।

 

ছায়েদুর রহমান আরও বলেন, ‘এই যে খান ব্রাদার্স, কেপিপিএল এগুলোর দাম কি আমরা সাপোর্ট করি? ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের দাম কি আমরা সাপোর্ট করি? এসব বন্ধ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু লোকজন তো এসব বন্ধ প্রতিষ্ঠানের দিকে দৌড়াচ্ছে, দাম বাড়াচ্ছে। এই দায় কে নেবে?’

বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এমন তথ্য উপস্থান করা হলে তিনি বলেন, ‘বাজারে কতরকম গসিপ (গুজব) হয়, এসব গসিপের নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য না জেনে এর ওপর মন্তব্য করা তো কঠিন। কোন বিনিয়োগকারী কখন বিনিয়োগ করবেন বা করবেন না এটা একমাত্র তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

সূচক নেই প্রায় ৫০০ পয়েন্ট

দীর্ঘদিন পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়ে সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর শেয়ারবাজার কিছুটা গতি ফিরে পায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় প্রায় প্রতিদিন বাড়তে থাকে মূল্যসূচক। এতে ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে উঠে আসে। কিন্তু চলমান ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক এখন ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অর্থাৎ অব্যাহত দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমছে ৪৭৯ পয়েন্ট।

বাজার মূলধন কমেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন সেই বাজার মূলধন কমে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকায় নেমে গেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমে গেছে।

তিন ভাগের একভাগে নেমেছে লেনদেন

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১১ কার্যদিবসে ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তার আগের কার্যদিবস ৮ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয় এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখন সেই লেনদেন পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। সর্বশেষ ১৪ মার্চ ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। তার আগের কার্যদিবস ১৩ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয় ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

শঙ্কায় ব্রোকারেজ হাউজের কর্মীরা

দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লেনদেনের গতি বাড়তে থাকায় শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী ব্রোকারেজ হাউজের কর্মীরা। আসন্ন ঈদে ভালো বোনাস পাওয়ার প্রত্যাশা করছিলেন অনেকে। তবে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে এবং রমজানের শুরুতে শেয়ারবাজারে দরপতনের সঙ্গে লেনদেনে খরা দেখা দেয়। এতে তাদের মধ্যে ফের অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আসন্ন ঈদে বোনাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ।

ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেয়ারবাজার ভালো থাকলে ব্রোকারেজ হাউজের মালিকের মন ভালো থাকে, কর্মীরাও ভালো থাকেন। দীর্ঘদিন বাজার মন্দা থাকায় অনেক ব্রোকারেজ হাউজ লোকবল কমিয়েছে। খরচ কমিয়ে মালিকরা হাউজ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

তারা বলেন, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে সম্প্রতি বাজার ভালো হওয়ার আভাস পাওয়া যায়। এতে এবার ঈদে ভালো বোনাস পাওয়া যাবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন নতুন করে শেয়ারবাজারে আবার মন্দা দেখা দিয়েছে। ধারাবাহিক দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতি কমে এসেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পরিচালন খরচ তুলে আনাটাও কঠিন হয়ে পড়বে। তখন ঈদে ভালো বোনাস নাও পাওয়া যেতে পারে। এমনকি দরপতন দীর্ঘায়িত হলে মালিকরা আবার নতুন করে লোকবল কমাতে পারেন এমন শঙ্কাও রয়েছে।

এমএএস/কেএসআর/জিকেএস