ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

এলডিডিপি প্রকল্পের সহায়তা

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৪

মাত্র দুই দশক আগেও বাইসাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে দুধ বেচতেন তিনি। এখন সেসব এলাকাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজের প্রাইভেটকারে। দুধ কেনাবেচা হয় এখন ৬৮টি গাড়িতে। তার প্রতিষ্ঠান এখন প্রতিদিন সংগ্রহ করছে ২৫ হাজার লিটার দুধ। সারাদেশে একক কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে সর্বোচ্চ দুধের কেনাবেচা এটি। এমনকি দেশের অনেক কোম্পানিও এত দুধ একদিনে কিনছে না। দুই বছর আগে তিনি পান ডেইরি আইকনের খেতাবও।

তিনি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দুধ ব্যবসায়ী জরিপ শেখ। বড় ভাই মোস্তফা শেখকে নিয়ে তার এ দুধের কারবার অল্প সময়ে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুধের কারবারের পাশাপাশি তিনি এখন একাধারে চালাচ্ছেন দই-মিষ্টির কারখানা, বানাচ্ছেন ঘি মাঠাসহ অন্য মিষ্টান্ন পণ্য। উৎপাদিত শেখ দইঘরের সব পণ্য এখন উত্তরাঞ্চলে ভালো প্রসিদ্ধ।

শুধু নিজ উদ্যোগে সীমাবদ্ধ নন জরিপ শেখ। যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে (এলডিডিপি)। সরকারের দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা অনুদানের সঙ্গে নিজস্ব প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বিনিয়োগে তিনি গাইবান্ধা জেলার পাশাপাশি রংপুর জেলার দুটি উপজেলা নিয়ে গড়ে তুলেছেন শেখ ডেইরি হাব। যার আওতায় এখন ২০টি ভিএমসিসি (ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার) নির্মাণ করছেন তিনি। পাশাপাশি প্রকল্পের সহায়তায় তার ব্যবসায় যুক্ত করতে যাচ্ছেন পাস্তুরিত দুধ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি মিষ্টি ঘি ও রসমালাই। আনছেন শেখ ব্র্যান্ডের আইসক্রিম।

বড় চিন্তা সব সময় ছিল। কিন্তু প্রকল্পে সহায়তা ছাড়া এত বড় বিনিয়োগের সাহস ছিল না। এত বড় বড় মেশিনপত্র কিনতে পারতাম না। এখন কোনোভাবে দুধ নষ্ট হচ্ছে না। বিক্রি না হলে ক্রিম সেপারেশন মেশিনে ক্রিম আলাদা করছি। তাতে দুধের দাম অনেকটা উঠে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক পণ্য নতুন করে যুক্ত করেছি এ প্রকল্পের সহায়তায়।- জরিপ শেখ

যেভাবে শুরু
সাদুল্লাপুর বাজারের অদূরে শেখ দইয়ের কারখানা। সেখানে প্রতিবেদকের কথা হয় জরিপ শেখের। পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অসুস্থ বাবা আবু বকর শেখের অভাবের সংসার চালাতে প্রথমে সাইকেলে করে গাইবান্ধা সদরের বিভিন্ন বাড়িতে ফেরি করে দুধ বিক্রি শুরু করেন ২০০৪ সালে। সে সময় গ্রাম থেকে দু-চারজনের গরুর দুধ সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। প্রতিদিন ২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গ্রাম থেকে যেতেন শহরে।

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

শুরুতে ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ বিক্রি হলেও ২০০৮ সালে এসে জরিপের ১৫০ থেকে ২০০ লিটার দুধ বিক্রি হতো প্রতিদিন। সে সময় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন তিনি ও তার ভাই মোস্তফা। যে কারণে চার বছর বাদে গাইবান্ধার অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে দুধ সরবরাহের দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে চাপে।

আরও পড়ুন

ওই সময় মাঝে মধ্যে চাহিদামতো দুধের জোগান পাওয়া যেত না। প্রতিদিন তার অর্ডার বাড়তে থাকে। আটজন কর্মচারী দুধ বিক্রি করতেন। কিন্তু গ্রামগঞ্জে তত দুধের জোগান পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় দুধ কিনতেন জরিপ ও তার ভাই। তারপরও জোগান চাহিদার চেয়ে কম।

ব্যবসার পরিস্থিতি বেশ ভালোর দিকে। দুই ভাই গ্রামের মানুষকে দুধের গাভি পালনে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। ছোটখাটো সহায়তা লাগলে দিতেন, পরে দুধ কিনতেন তাদের কাছ থেকে। এভাবে আরও চার বছর বাদে তাদের প্রতিদিনের বিক্রি গিয়ে দাঁড়ায় আড়াই হাজার লিটারে।

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

ওই সময় গ্রামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক একটি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র চালু করে। এরপর একে একে আসে আড়ং ও প্রাণ। তখন শেখ দইঘরও চালু হয়েছে। দই-মিষ্টি তৈরি করতে নিজেরা দুধ ব্যবহার করতেন। এরপর বিভিন্ন কোম্পানির কাছেও নতুন করে দুধ বিক্রি শুরু করেন জরিপ শেখ। গ্রামে গ্রামে তাদের কালেকশন ভ্যান যেত সকাল-বিকেল। খামারিরা ঘরে বসে দুধ বিক্রি করতে পারতেন।

সারাদেশে ২০টি হাবের অধীনে চারশটি কালেকশন সেন্টার হবে। এগুলোর সঙ্গে সারাদেশের খামারিদের সংযোগ স্থাপন হবে। ডেইরি প্রডিউসার গ্রুপের সঙ্গে সংযোগ হবে। বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর স্থাপন সম্ভব হবে।- এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী

একপর্যায়ে জরিপ শেখ খামারিদের দুধের গাভি কেনার অগ্রিম টাকা দিতে শুরু করেন, যা পরবর্তীসময়ে দুধ বিক্রি করে পরিশোধ করতেন খামারিরা। ফ্রি দিতেন প্রতি মাসের কৃমির ওষুধসহ নানা প্রয়োজনীয় ওষুধের টাকা।

এখন যেমন চলছে শেখের কারবার
এখন শেখের বিপণন হাবে সাড়ে চার হাজার দুগ্ধ খামারি। ভরা মৌসুমে তাদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ হয় প্রতিদিন ২৫ হাজার লিটার পর্যন্ত। এলাকাজুড়ে ৬৮টি কালেকশন ভ্যান রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন নিজস্ব কারখানায় ৭ থেকে ৮ হাজার লিটার দুধ থেকে পণ্য উৎপাদন হয়। সেখানে কাজ করছে ২২০ জন কর্মচারী। যার মধ্যে প্রায় ৫০ জন কর্মচারী উচ্চশিক্ষিত। এ বিপণন কেন্দ্রে ৩০ হাজার লিটার দুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে সাতদিন পর্যন্ত দুধ সংরক্ষণ সম্ভব।

সরেজমিনে তার কারখানায় দেখা যায়, উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দই উৎপাদনের কারখানা শেখ দইঘর। একসঙ্গে পঞ্চাশটি চুলায় দই তৈরি হচ্ছে। এছাড়া মিষ্টির আলাদা কারখানায় প্রতিদিন শত শত মণ মিষ্টি তৈরি হয়। গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন যাচ্ছে দই-মিষ্টিসহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য। শুধু সাদুল্লাপুরে এ ব্র্যান্ডের তিনটি আউটলেট রয়েছে।

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

জাগো নিউজের টিম যখন কারখানায়, ওই সময় কয়েকটি গাড়িতে দুধ সংগ্রহ, দই-মিষ্টি সরবরাহ ও অন্যান্য পণ্যের মোড়ক ও দইয়ের হাঁড়ি সংগ্রহ চলছিল। সঙ্গে কারখানার সামনের আউটলেটে প্রচুর ক্রেতার ভিড়। যেন এক হুলুস্থুল কারবার। শ্রমিক-কর্মচারী কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রত্যেকে ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে। এর মধ্যে একটি অফিস রুমে চলছে লেনদেনের হিসাব। কয়েকটি কম্পিউটারে বসে কয়েকজন কর্মচারী এসব সামলাচ্ছেন।

কথা হয় জরিপ শেখের সঙ্গে। কীভাবে এত কম সময়ে ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘খামারিরা অনেক সহজ-সরল মানুষ। তাদের জন্য সামান্য করলে তারা বুক পেতে দেয়। হাজার হাজার লিটার দুধ এখন আমি কিনতে পারি প্রতিদিন। এ বিশ্বাস ও ভালোবাসা আমরা তৈরি করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘আগে এ এলাকার দুধ বিক্রি হতো না। অনেকে হাটে নিয়ে দুধ বিক্রি করতে পারেনি। নদীতে ফেলে দিয়ে বাড়ি এসেছে। সে সময় আমরা দুধ কিনেছি। নিজের খামারের ৫৭টি গরু বিক্রি করে করোনার সময় দুধ কিনেছি। জমিও বিক্রি করেছি। লোকসান জেনেও দুধ কিনেছি- সে প্রতিদান খামারিরা দিয়েছেন। তারা সব দুধ আমার কাছে বিক্রি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকায় কোম্পানিগুলোর কালেকশন হয় ৩শ থেকে ৫শ লিটার প্রতিদিন। সেখানে আমরা কিনি ২৫ হাজার লিটার। সারাদেশ মিলে কোনো কোম্পানি ছাড়া এককভাবে কেউ এত দুধ কিনতে পারে না। অনেক কোম্পানিও পারে না। এখন কোম্পানি আমার কাছ থেকে দুধ কিনছে। প্রতিদিন ব্র্যাক-মিল্কভিটায় দুধ বিক্রি করছি।’

জরিপকে এগিয়ে দিয়েছে এলডিডিপি প্রকল্প
সরকারের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) অর্থায়ন পেয়েছেন জরিপ। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প থেকে সহায়তা পেয়ে চিলিং সেন্টার করেছি। এটা আমার ব্যবসা আরও সহজ করে দিয়েছে। এখন প্রচুর দুধ সংগ্রহ করতে পারছি। আগে অনেক সময় দুর্যোগের কারণে দুধ নষ্ট হতো, তখন বড় লোকসানে পড়তাম।’

জরিপ শেখ বলেন, ‘বড় চিন্তা সব সময় ছিল। কিন্তু প্রকল্পে সহায়তা ছাড়া এত বড় বিনিয়োগের সাহস ছিল না। এত বড় বড় মেশিনপত্র কিনতে পারতাম না। এখন কোনোভাবে দুধ নষ্ট হচ্ছে না। বিক্রি না হলে ক্রিম সেপারেশন মেশিনে ক্রিম আলাদা করছি। তাতে দুধের দাম অনেকটা উঠে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক পণ্য নতুন করে যুক্ত করেছি এ প্রকল্পের সহায়তায়।’

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

‘এ প্রকল্প থেকে আমার চার হাজার খামারির মধ্যে অধিকাংশই করোনাকালীন সাহায়তা পেয়েছিল। এছাড়া তারা নিয়মিত ট্রেনিং পাচ্ছে, মনিটরিংয়ের মধ্যে রয়েছে। যে কারণে এলাকায় দুধের উৎপাদন বেড়েছে।’

এ প্রকল্পের আওতায় শেখ ডেইরি হাব করছেন জরিপ শেখ। যার আওতায় এখন ২০টি ভিএমসিসি (গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) নির্মাণ করবেন তিনি। এর মধ্যে ১২টির কাজ প্রায় শেষ, একটি উদ্বোধন করেছেন। পাশাপাশি প্রকল্পের সহায়তায় তার ব্যবসায় যুক্ত করছেন দুধ পাস্তুরিতকরণ মেশিনসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি মিষ্টি, ঘি ও রসমালাই তৈরির মেশিন।

জরিপ শেখের এসব কার্যক্রম কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন ড. মো. মাছুদার রহমান। তিনি গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা থেকে সদ্য পিআরএলে গেছেন। তিনি বলেন, ‘এ এলাকার একজন আশ্চর্য দুগ্ধ বিপণনকারী জরিপ শেখ। এখানে কয়েকটি কোম্পানি দুধ সংগ্রহ করলেও তেমন আস্থা পায়নি খামারিদের, যেটা শেখ পেয়েছেন। তিনি এ এলাকার দুধ কোম্পানির সিন্ডিকেট ভেঙেছেন। এলাকার দুগ্ধশিল্পে এক অন্যরকম ভ্যালু অ্যাড তার মাধ্যমে হয়েছে।’

এ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে আরও এগিয়ে নিতে এলডিডিপি প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে। আশা করি সারাদেশের দুগ্ধ শিল্পের জন্য এমন আরও বহু জরিপ শেখ তৈরি করবে এ প্রকল্পটি। তাতে সব দুগ্ধসমৃদ্ধ এলাকায় দুধের দুর্বল ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা সঠিক মূল্যে তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারবে।’

এলডিডিপি ডেইরি হাব কী ও কেন?
গাইবান্ধা দেশের দুধ উৎপাদনে একটি অন্যতম এলাকা। সেখানে শেখ ডেইরি হাব করা হচ্ছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। এমন দেশের বিভিন্ন উৎপাদনকারী এলাকায় দুধের একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ২০টি হাব করা হচ্ছে। যার প্রধান উদ্দেশ্য যেন খামারিরা ন্যায্যমূল্যে তাদের দুধ বিক্রি করতে পারেন।

প্রতিটি হাবের সঙ্গে গড়ে ২০টি করে ভিএমসিসি থাকছে। ম্যাচিং গ্রান্ট ম্যানুয়াল অনুসরণ করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০টি হাব স্থাপনে প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানা যায়। যেগুলো বাস্তবায়ন কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বাকিগুলো স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব ডেইরি হাব দেশের দুগ্ধ শিল্পের দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা দূর করবে। খামারিরা ন্যায্যমূল্যে তাদের দুধ বিক্রি করতে পারবে।’

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সারাদেশে ২০টি হাবের অধীনে চারশটি কালেকশন সেন্টার হবে। এগুলোর সঙ্গে সারাদেশের খামারিদের সংযোগ স্থাপন হবে। ডেইরি প্রডিউসার গ্রুপের সঙ্গে সংযোগ হবে। বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর স্থাপন সম্ভব হবে।’

প্রান্তিক খামারিদের জন্য আশীর্বাদ ভিএমসিসি
ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার বা ভিএমসিসি দুধ উৎপাদনকারীদের জন্য দুধ বিক্রয় কেন্দ্র। যেখানে খামারিরা তাদের উৎপাদিত দুধ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। সারাদেশে চারশটি ভিএমসিসি মধ্যে ১৭৫টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বা মিল্ক কুলিং সেন্টার চালু করা হবে। দুধ শীতলীকরণ ব্যবস্থা দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের একটি অন্যতম স্থাপনা, যা দুধ সঠিক মানে ও নিরাপদে রাখবে।

দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনে জরিপ শেখের বাজিমাত

এ ভিএমসিসিগুলো এমন এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে, যা চারদিক থেকে নির্ধারিত খামারিদের জন্য সহজ স্থান। বিশেষ করে নারীরা যেন সহজে সেখানে দুধ বিক্রি করতে পারেন। বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনায় দুজন করে দক্ষ জনবল নিয়োজিত থাকবে, যারা দুধ পরীক্ষার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দুধের মানের (চর্বি ও এসএনএফ-এর পরিমাণ) ওপর ভিত্তি করে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করবেন।

জরিপ ডেইরি হাবের আওতায় জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলায় একটি ভিএমসিসি উদ্বোধন হয় গত ১২ মার্চ। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একদম প্রান্তিক এলাকায় হয়েছে এ ভিএমসিসি, যেখানে এখনো অনেক রাস্তা মাটির আর আধাপাকা। এর মধ্যে এক হাজার ২শ লিটার ধারণক্ষমতার এ ভিএমসিসি বসেছে গ্রামের মাঝামাঝি বাজারের একটি দোকানে।

ওইদিন সেখানে জড়ো হন এলাকার শত শত খামারি। তারা বলছেন, মাঝে মধ্যেই দুধ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। গ্রামে দুধ বিক্রি করতে পারেননি। বাড়ি থেকে শহরের বাজার দূরে হওয়ায় অনেক সময় যেতে পারেননি। ঝড়-বৃষ্টিতে দুধ নষ্ট হয়েছে। এ ভিএমসিসি তাদের জন্য আশীর্বাদ।

ওই এলাকার খামারি আবুল কালাম। তিনি বলেন, তিনটি ফ্রিজিয়ান গরুর প্রায় ৫০ লিটার দুধ হয়। কোনোদিন অসুস্থ হলে, দুর্যোগ হলে বা দুধ সংগ্রহের গাড়ি না এলে দুধ নিয়ে খুব বিপদ হতো। এখন সে সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে এ উদ্যোগের কারণে। যে কেউ এখানে ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারবে।

এনএইচ/এএসএ/এএসএম