প্রতি বছর সংকট
ভারতনির্ভরতার বৃত্তে দেশীয় পেঁয়াজের বাজার
• ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ে দেশে
• গত বছরের নভেম্বরে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়
• দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও ঘাটতির সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই
• বিকল্প বাজার থেকে আমদানি হয়নি সেভাবে
• বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের তাগিদ
পণ্য আমদানিতে ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশ। কোনো নিত্যপণ্যে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিলেই বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ে। গত ডিসেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। এর মধ্যে দাম কখনোই প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে নামেনি, ১৫০ টাকাও ছাড়িয়েছে কয়েকবার। কয়েক বছর ধরেই চলছে এমনটি।
তথ্য বলছে, আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়, ডিসেম্বরে হালি পেঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত বাজারে টান থাকে পণ্যটির। বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের বাজারে এরকম পরিস্থিতি ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই হয়ে আসছে বাংলাদেশে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে বাড়তে থাকে দাম, যা গত নভেম্বর মাসে কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এ সমস্যা নিয়ে কথা হয় কয়েকজন ব্যবসায়ী, কৃষি ও বাজার বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে। তারা জাগো নিউজকে জানান, পেঁয়াজ সংকট কাটাতে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণতার চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই। পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন ও ঘাটতি নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন, যা আছে তা বিতর্কিত। এজন্য প্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা দরকার।
আরও পড়ুন
• সোনামসজিদ দিয়ে ৩৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
• বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলো ভারত
পাশাপাশি তারা বলছেন, ভারত বাদে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির বাজার সৃষ্টি করতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেট ও মনোপলি ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। কারণ প্রতি বছর ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সুযোগ কাজে লাগায় দেশি ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। প্রকৃতপক্ষে যেটুকু সংকট তৈরি হয়, তারচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া পেঁয়াজ খাওয়ার পরিমাণ কমানোও সংকট মোকাবিলার একটি পথ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত/ফাইল ছবি
উৎপাদন ও চাহিদার হ-য-ব-র-ল তথ্য
দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও ঘাটতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এটি একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর দাম বাড়লে বিষয়টি সামনে আসে, কিন্তু এখনো তা স্পষ্ট হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং কৃষি মন্ত্রণালয় উৎপাদনের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেয়। আর চাহিদার যে তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেয়, ব্যবসায়ীরা বলেন সেটি অনেক কম।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ২৫ থেকে ২৬ লাখ টনের মধ্যে থাকে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ দুই সংস্থার উৎপাদনের তথ্যে বড় ফারাক।
বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু পেঁয়াজের ব্যবহার ১৫ কিলোগ্রাম (ভারতে ১৬ কিলোগ্রাম)। সেই হিসাবে ১৭ কোটি মানুষের জন্য ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। সে জায়গায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৮ লাখ টন পেঁয়াজ প্রয়োজন বলে জানায়। সেখানে আবার ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদা আরও বেশি!
এর আগে (২০২৩ এর আগে) প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত বছর (২০২৩) আমদানি ৯ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ উৎপাদনের দিকে যেমন সাফল্যের তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তেমনি আমদানিও বাড়ছে। যে কারণে সঠিক ঘাটতির হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
দেখা যায়, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। আবার জাতীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিবিএসের পরিসংখ্যান মেলে অনেক দেরিতে, তাতে অনেক কম উৎপাদনের তথ্য থাকে। আবার বিদেশি সংস্থাগুলো এসব তথ্য আমলেই নেয় না। তাদের তরফ থেকে আসে উৎপাদন চাহিদা ও আমদানির ভিন্ন তথ্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজের যেসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে গরমিল আছে। এজন্য দেশের একেক মন্ত্রী একেক কথা বলেন। একেকজনের দপ্তরের তথ্য একেক রকম। সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। এটি দেশের বড় একটি সমস্যা।’
আরও পড়ুন
• মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভারত থেকে আসছে পেঁয়াজ
• ভারত থেকে ‘পেঁয়াজ আসার খবরে’ অস্থির খাতুনগঞ্জের বাজার
তিনি বলেন, ‘উৎপাদনের সঠিক তথ্য না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। দুঃখজনক যে, মোটাদাগের জিনিসগুলোর তথ্যে আগে কিছুটা সামঞ্জস্য ছিল। এখন তাও নেই। প্রকৃত উৎপাদন কতটুকু হলো, কতটুকু মানুষ খেয়েছে? এ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন তথ্য দেয়। তাহলে আমাদের সমস্যা কোথায়, আর সেটা কীভাবে সমাধান হবে তা চিহ্নিত হবে কীভাবে?’
ড. এম আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তার কত অংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব এবং কত অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।’
উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রোডম্যাপ, সাফল্য কতটুকু?
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এখন দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের উৎপাদন হয়, কিন্তু সংরক্ষণের প্রযুক্তি না থাকায় অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর এই আমদানিনির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে ২০২১ সাল থেকে।
ওই সময় নেওয়া চার বছরের রোডম্যাপে দেশে ১০ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথম বছর রোডম্যাপ অনুযায়ী পেঁয়াজের ফলন দুই লাখ টন, পরের বছর (২০২১-২২) তিন লাখ ২২ হাজার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিন লাখ ৫০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক লাখ টন পেঁয়াজ অতিরিক্ত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ওই সময়।
সোনামসজিদ দিয়ে ৩৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি/ফাইল ছবি
এখন কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, রোডম্যাপ ব্যবস্তবায়ন হয়েছে। গত চার বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বেড়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বলেন, ‘পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করায় এবার দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ মেট্রিক টন বেড়েছে।’
তবে উৎপাদনের এ সাফল্যের সঙ্গে একমত নন অনেক কৃষি বিশেষজ্ঞ। এ বিষয়ে এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এত উৎপাদন হলে দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। দেশে পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন হওয়ারও কথা নয়। তাহলে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন কেন দেয় প্রতি বছর? কেন প্রতি বছর মরিয়া হয়ে আমদানি করতে হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে?
সমস্যা সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর
বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এ সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার পেঁয়াজের সংকটের সময়ের একটি চিত্র জানিয়েছেন। যেখানে গত কয়েক বছর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের সংকট হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাধারণত পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই অবস্থা থাকে। কারণ তাদের উৎপাদন মৌসুমও প্রায় একই সময়। যে কারণে ওই চার মাসের মধ্যেই ভারত পেঁয়াজে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তখন যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মজুতদাররা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করে।’
আরও পড়ুন
• রমজানে ভারত থেকে পেঁয়াজ-চিনি আনতে পারবো
• রোজার আগেই ভারত থেকে দেড় লাখ টন পেঁয়াজ-চিনি আনা হবে
তিনি বলেন, ‘দেশীয় উৎপাদনের বড় অংশ হয় বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে। সেসময় মোট দেশীয় উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তোলেন। তাই পেঁয়াজের দাম মার্চ-এপ্রিলের দিকে সবচেয়ে কম থাকে। মার্চ-এপ্রিলের এই পেঁয়াজই বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রধান পেঁয়াজ। এটি ছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও জুন-জুলাইয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। তবে মূল উৎপাদনের পেঁয়াজগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। যে কারণে সেপ্টেম্বরের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন হওয়ার আগের এই সময়ে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে।’
‘এখন সরকার এ সময়ে পেঁয়াজের জোগান বাড়াতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এ পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো গেলে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ বাড়বে। সেজন্য এখন প্রতি বছর কৃষকদের বীজ, সার, প্রযুক্তিসহ সব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গত বছর ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রণোদনা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ প্রণোদনার আওতায় ১৯ জেলার ১৮ হাজার কৃষক বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছেন। প্রণোদনা হিসেবে একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় এক কেজি বীজ, ২০ কেজি ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ২০ কেজি এমওপি সার পাবেন।’ বলেন এ কর্মকর্তা।
তথ্য বলছে, ২০২০-২১ সালে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ৩০০ টন। সরকারের প্রণোদনার কারণে ২০২১-২২ সালে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা জমি বেড়ে হয় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর, উৎপাদিত হয় ৩৭ হাজার টন। ২০২২-২৩ সালে আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদিত হয়েছে ৩৯ হাজার ৮০০ টন।
সংকটে ভরসা শুধু ভারত
বছরে ঘাটতির যে আট থেকে নয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। ভারত ছাড়াও মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়, তবে নগণ্য।
কেন শুধু ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ- এমন প্রশ্নে শ্যামবাজারের পুরোনো পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সড়কপথে সহজে আনা যায় এবং আমদানি খরচ কম থাকার কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ আনেন। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসে স্থলপথে, ট্রাক দিয়ে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ যদি মিশর বা তুরস্ক থেকে আনি তাহলে আনতে হয় জাহাজে। তখন খরচও বেড়ে যায় বেশ কয়েকগুণ, আর অনেকদিন জাহাজে থাকার ফলে পেঁয়াজ নষ্টও হয় বেশি পরিমাণ।’
এছাড়া ভারত বাদে অন্য দেশের পেঁয়াজের ধরন, রং, আকার ও স্বাদ বাংলাদেশের থেকে অনেকটা ভিন্ন। এ পেঁয়াজের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। বিক্রি করতে হয় তুলনামূলক কম দামে।’ বলেন আব্দুল মাজেদ।
এ বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে চাহিদা মেটানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। তবে এরপরও বিকল্প বাজার থেকে সেভাবে আমদানি হয়নি।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বিকল্প দেশ মিয়ানমার, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, মিশর ও নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মোট আমদানির এক শতাংশ। গত জুলাই (২০২৩) থেকে ফেব্রুয়ারি (২০২৪) পর্যন্ত দেশে মোট পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টন। এর মধ্যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে ভারতীয় পেঁয়াজই এসেছে প্রায় পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার টন।
আরও পড়ুন
• রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ে, আমরা সজাগ আছি: কৃষিমন্ত্রী
• হালি পেঁয়াজেও লাভের স্বপ্ন চাষিদের
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ মিয়ানমার। তবে দেশটির রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। ফলে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এর বাইরে রয়েছে পাকিস্তান, মিশর, চীন, নেদারল্যান্ডস। তবে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সরবরাহকারী খুঁজে বের করা, এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমতি, ঋণপত্র খোলার মতো প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। চলমান ডলার সংকটে ঋণপত্র খোলা এখন জটিল হয়েছে। এ কারণে আমদানিতে শুধু সমুদ্রপথেই সময় লাগে ১৩ থেকে ৩০ দিন। এতে অনেক বেশি খরচ ও পেঁয়াজের মান কমে যায়। পেঁয়াজ নষ্টও হয় বেশি পরিমাণে। আর্থিকভাবে লোকসানের শঙ্কা থাকে।
কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের/ফাইল ছবি
পেঁয়াজ খাওয়া কমাতে হবে
তথ্য বলছে, সারাবিশ্বে আট বিলিয়ন জনসংখ্যার বিপরীতে ৯০ থেকে ৯৫ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সংগ্রহ-উত্তর ক্ষতি বাদ দিলে বিশ্বে মাথাপিছু পেঁয়াজ খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ১০ কেজি।
কিন্তু বাংলাদেশে মাথাপিছু পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ২২ কেজি, যা উপমহাদেশে সর্বোচ্চ। কয়েকজন বিশ্লেষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পেঁয়াজের কোনো বাণিজ্যিক ব্যবহার নেই। তাই বাঙালির পেঁয়াজ বিলাসিতার জন্য পেঁয়াজ আমদানির যৌক্তিকতা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। প্রয়োজন পেঁয়াজ খাওয়া কমানো।’
ফলন বাড়াতে হবে আরও
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত ১০ বছর পেঁয়াজ আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ। যেখানে ২০১১-১২ সালে এক লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হতো তা ২০২১-২২ সালে দুই লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর হয়েছে।
তবে বিশ্বের তৃতীয় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশে পেঁয়াজের ফলন এখনো সবচেয়ে কম। গড়ে বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে ১০ টন পেঁয়াজ হচ্ছে। যেখানে চীন প্রতি হেক্টরে ২২ টন, যুক্তরাষ্ট্র ৬০ টন, মিশর ৩৫ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। এত ফলন না হলেও পার্শ্ববর্তী ভারতের মতো প্রতি হেক্টরে ১৯ টন ফলন হওয়া সম্ভব। সেজন্য উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা দরকার
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করছেন, অধিকাংশ সময় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিতান্তই মুনাফা লাভের জন্য। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে সংকট হলেও বেশিরভাগ সময় অযৌক্তিক এবং এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ থাকে না। ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা প্রবণতায় এটা করেন। যেমন- ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে থাকা সব পেঁয়াজের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যেগুলো অল্প দামে কেনা সেগুলোও বাড়ে।’
গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘দেশীয় উৎপাদন দুইভাবে বাড়ানো যায়। এক. কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়ানো। দুই. উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। দেশের কৃষকরা যেন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান, সেজন্য মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করতে হবে। আবার মৌসুম শেষে শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে ভোক্তারা যুক্তিসংগত মূল্যে পেঁয়াজ পান।’
এনএইচ/ইএ/জিকেএস
সর্বশেষ - অর্থনীতি
- ১ লক্ষ্মীপুরে জুয়েলারি ব্যবসায়ী হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি বাজুসের
- ২ বিজিএমইএ প্রশাসক-তাইওয়ান টেক্সটাইল ফেডারেশন প্রতিনিধিদলের বৈঠক
- ৩ সর্বাধুনিক মেশিনে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদন শুরু করলো প্রাণ
- ৪ রোববার থেকে ঢাকার ১৩ স্থানে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি
- ৫ পেঁয়াজ-মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, সর্বোচ্চ দামে আলু