ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

‘দ্রব্যমূল্য বাড়লে আঘাতটা প্রথমে আসে গরিবের ওপর’

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শীতের মৌসুম প্রায় শেষ। তবে এখনো সবজির দাম আকাশছোঁয়া। শিম, বেগুন, আলুর দাম কমেনি ভরা মৌসুমেও। চালের দামও বাড়তি। একবার বাড়লে আর যেন কমতে চায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেরই দাম এখন চড়া। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের নাভিশ্বাস। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষেরা দিশেহারা।

বরাবরের মতো এবারও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চালের গুদামে অভিযানের কথা বলছেন খাদ্যমন্ত্রী। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছেও বটে। দুই-এক জায়গায় মন্ত্রী নিজেও অভিযানে হাজির হয়েছেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো ফল আসছে না। বরং রমজান আসার আগেই প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন: দুর্নীতিই বাংলাদেশকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে দিচ্ছে না

বাজার পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

মূল্যস্ফীতি বাড়লে দ্রব্যমূল্য বাড়বেই- এমন মন্তব্য করে ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এটি গাণিতিক হিসাব। সরকার মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে যে কথা বলেছিল, তা ছিল অবাস্তব। চলমান পরিস্থিতিতে তার প্রমাণ মিলেছে। ১০-এর ঘরে মূল্যস্ফীতির হার। অথচ, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের মূল্যস্ফীতি কমে আসছে।’

সরকার মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে যে কথা বলেছিল, তা ছিল অবাস্তব। চলমান পরিস্থিতিতে তার প্রমাণ মিলেছে। ১০-এর ঘরে মূল্যস্ফীতির হার। অথচ, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের মূল্যস্ফীতি কমে আসছে।

তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনা এবং বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশে দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এসব মানুষের জন্য সরকার আশু কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে নজরে আসেনি। সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এর আগে সুশাসন এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবতে হবে। সুশাসন না থাকলে কোনো পদক্ষেপ-ই কাজে আসবে না।’

আরও পড়ুন: বেড়েছে ডিমের দাম, সবজি-চালের কমেনি
আরও পড়ুন: রিজার্ভ এখন ১৯ বিলিয়নের ঘরে

গরিব মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় টিসিবি সৃষ্টি করা হয়। সেসময় টিসিবির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পণ্য আমদানি করে দুস্থদের মধ্যে প্রায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হতো। একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তায় পল্লীবিদ্যুৎ এবং পোল্ট্রি খাবারের সংস্থান করে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ১৯৯৮ সালে ব্যাপক বন্যার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় কোটি মানুষকে ৯ মাস ধরে খাইয়েছিলেন ভিজিএফের মাধ্যমে। ১০ লাখ টন খাদ্যপণ্য মজুত করা হয়েছিল এবং খোলাবাজারে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়।’

খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘এখনো খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সেটা অপ্রতুল বলে মনে করছি। মানুষ বাঁচাতে হলে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়াতে হবে। ন্যূনতম তিন মাস থেকে যতদিন প্রয়োজন ততদিন নিত্যপণ্য বিক্রি করতেই হবে। এতে করে যারা পণ্য মজুত করে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেন তারা শায়েস্তা হয়ে যাবেন। সরকার পণ্যবিক্রি বাড়িয়ে দিলে তারা মজুত করা পণ্য বাজারে ছাড়তে বাধ্য হবেন। নইলে গুদামে পচবে।’

সবাই আখের গোছাতে ব্যস্ত। মার খায় সাধারণ জনগণ। রিজার্ভ সংকটে টাকার মান কমছে। টাকার মান কমলে মূল্যস্ফীতি হয়। দ্রব্যমূল্য বাড়লে ধনীর ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না, আঘাতটা প্রথমে আসে গরিব মানুষের ওপর।

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমি আরেকটি বিষয় সুপারিশ করবো। যদি কোনো পণ্য আমদানির ৫টি লাইসেন্স থাকে সেখানে বাড়িয়ে একশটি লাইসেন্স দিতে হবে। আমদানিকারক বাড়াতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে আমরা এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম।’

আরও পড়ুন: রোজার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ছোলা-ডাল, সবজি-চালেও অস্বস্তি
আরও পড়ুন: চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাইস মিলে অভিযান, নেতৃত্বে খাদ্যমন্ত্রী

তবে বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করছেন আরেক অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিই বাংলাদেশকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে দিচ্ছে না। দুর্নীতির কশাঘাত পড়ে প্রথমে সাধারণ মানুষের ওপর। (দেশ থেকে) হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। যে রেমিট্যান্স আসছে, সেই পরিমাণ অর্থ বাইরে পাচার হচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরের এজেন্টরা টাকা পাচারে সহায়তা করছেন। সরকার জানে কীভাবে (পাচার) হচ্ছে। সরকার কিছুই জানে না- এটা বলার সুযোগ নেই।’

সুশাসন এবং জবাবদিহি না থাকলে সেই সমাজে সব কিছুই বৈধতা পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবাই আখের গোছাতে ব্যস্ত। মার খায় সাধারণ জনগণ। রিজার্ভ সংকটে টাকার মান কমছে। টাকার মান কমলে মূল্যস্ফীতি হয়। দ্রব্যমূল্য বাড়লে ধনীর ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না, আঘাতটা প্রথমে আসে গরিব মানুষের ওপর। সহজ হিসাব।’

এএসএস/কেএসআর/এএসএম