ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ভালো কোম্পানির আইপিও আনতে আইন বাজারবান্ধব করতে হবে

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে এমকম এবং সাউথ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (ইউকে ক্যাম্পাস) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) উপপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। এর আগে তিনি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকিন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার অব ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং (এমএফপি) ও মাস্টার্স অব প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিং (এমপিএ) অধ্যায়নের জন্য এইউএস এইড স্কলারশিপ লাভ করা তারিকুজ্জামান পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফিন্যান্সে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

পিএইচডি শেষ করে তিনি নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের স্কুল অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড কমার্শিয়াল ল’তে লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএসইসিতে দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা, নিউজিল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ও পুঁজিবাজারের বিষয়ে অভিজ্ঞ ড. তারিকুজ্জামান গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এ পদেই দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন>> ডিএসই’র এমডি পদে যোগ দিলেন তারিকুজ্জামান

প্রফেশনাল মেম্বারশিপ হিসেবে সিপিএ (অস্ট্রেলিয়া), দ্য ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরস (আইওডি) এবং নিউজিল্যান্ড ইনকরপোরেশন থেকে দ্য ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্স প্রফেশনালস নিউজিল্যান্ড ইনফিঞ্জ (আইএনএফআইএনজেড) অর্জন করা তারিকুজ্জামান সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। ভালো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনার পরিকল্পনার পাশাপাশি লেনদেনের গতি বাড়ানো, ফ্লোরপ্রাইস, বিনিয়োগকারীদের আচরণসহ নানা বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ শিপন

জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের শেয়ারবাজারে এক ধরনের মন্দা প্রবণতা দেখা দেয়। তবে সংসদ নির্বাচনের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তারিকুজ্জামান: সরকারের ওপর সবার একটা আস্থা দেখতে পাচ্ছি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সরকার বাজার উন্নয়নে এবং সংস্কারমূলক কাজ করবে। আইন-কানুনগুলো বাজারবান্ধব করবে। মানুষের এ রকমই প্রত্যাশা। আমার ধারণা, এ প্রত্যাশা থেকেই মানুষের মধ্যে একটা পজিটিভ ধারণা তৈরি হয়েছে।

‘আমাদের আইনগত কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা আইনগুলো সহজ ও ফ্রেন্ডলি মনে করলে বাজারে আসবেন, জোর করে আনার কোনো বিষয় না।’- ড. এটিএম তারিকুজ্জামান

আরও পড়ুন>> ভোটের পর ইউনিয়ন ক্যাপিটালের চমক

জাগো নিউজ: বাজার এখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

তারিকুজ্জামান: সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব জ্ঞান-বুদ্ধি, সক্ষমতা, আর্থিক ক্ষমতা, পরিকল্পনা অনুসারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেবে। এটা পুরোপুরি বিনিয়োগকারীর নিজের সিদ্ধান্ত। একজন বিনিয়োগকারী কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন? তিনি কী পরিমাণ রিটার্ন চান, কতদিনের মধ্যে চান? এটা পুরোপুরি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তারা জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাজারে যখন প্রত্যাশা তৈরি হয়, বাজারে যখন আস্থার নমুনা দেখা দেয়, আস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বা আস্থা পুনরুদ্ধার হচ্ছে এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরাই তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

জাগো নিউজ: আইপিও’র ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের তেমন ক্ষমতা বা ভূমিকা নেই। এতে ভালো আইপিও আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে কি?

তারিকুজ্জামান: ভালো আইপিও আসার ক্ষেত্রে যেসব মার্কেটবান্ধব রুলস থাকা উচিত— আমার মনে হয়, সেই জায়গায় একটু কাজ করতে হবে। ডিএসইর একটা ভূমিকা আছে এখানে। ডিএসইর পর্যবেক্ষণ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় ডিএসই যখন এটা দেখে বিএসইসিকে রিকমেন্ডেশন দেবে, তখন বিএসইসির সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে এবং বিষয়গুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করতে পারবে। আইপিও অনুমোদন দিক বা না দিক বিএসইসির সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায় যখন ডিএসই থেকে পর্যবেক্ষণ যায়। আমার মনে হয় এ প্রসেসটা হওয়া উচিত।

আমাদের আন্ডাররাইটার এবং ইস্যু ম্যানেজাররা যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে ডিউ ডিলিজেন্স দেয়, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিএসইসির কাজ করা সহজ হয়। আইপিও অনুমোদন দেওয়ার সময় কমে আসে। ওই জায়গায় দেরি হয় বলে একটা নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়।

আরও পড়ুন>> ভোটের পর বাজার মূলধনে যোগ হলো ৫ হাজার কোটি টাকা

জাগো নিউজ: আমাদের দেশে অনেক ভালো কোম্পানি আছে, তারা শেয়ারবাজারে আসছে না। এসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনতে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

তারিকুজ্জামান: আমাদের কিছু প্রোগ্রাম আছে। যেটা করে যাচ্ছি এবং আরও কিছু করবো। তবে অনেকে হয় তো জানে না শেয়ারবাজারে এলে তারা কী ধরনের সুবিধা পাবেন। এছাড়া আরও কারণ থাকতে পারে। যেমন আইনগুলো যেন বাজারবান্ধব হয়, তাদের জন্য সহজীকরণ হয়। যদি একটা কোম্পানি এসে ওভার বার্ডেন হয়ে যায়, রেগুলেটরি বার্ডেন হয়ে যায়, তাহলে অনেকে আসতে চাইবে না। সেই জায়গাগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের আইনগত কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে হবে। আইনগুলো রিভিজিট করতে হবে, যাতে যারা আসবেন তারা আইনগুলো সহজ মনে করবেন এবং ফ্রেন্ডলি মনে করেন। তাহলে আসবে, জোর করে আনার কোনো বিষয় না।

‘ভালো আইপিও আসার ক্ষেত্রে যেসব মার্কেটবান্ধব রুলস থাকা উচিত— আমার মনে হয়, সেই জায়গায় একটু কাজ করতে হবে। ডিএসইর একটা ভূমিকা আছে এখানে। ডিএসইর পর্যবেক্ষণ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’- ড. এটিএম তারিকুজ্জামান

জাগো নিউজ: ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য হওয়া ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করে কি?

তারিকুজ্জামান: এটা একটা কারণ হতে পারে। যদি আমরা একটা কোম্পানিকে প্রশ্ন করি, তাহলে এর উত্তর পাবো। ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাওয়ার একটা ইস্যু আছে, তারপর কমপ্লায়েন্স ইস্যু আছে। স্টক মার্কেটে এলে জবাবদিহি বাড়ে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকের কাছে তার জবাবদিহি থাকে। আর যখন স্টক মার্কেটে আসে, তখন অনেকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সে কারণে আমি বারবার বলছি, রেগুলেটরি রিকোয়ারমেন্টগুলো যেন ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ হয়। যেন সহজীকরণ হয়, বাজারবান্ধব হয়। তার মানে এ নয়, কোনো আইন মানতে হবে না। আইন-কানুনগুলো আরও বাজারবান্ধব হওয়া প্রয়োজন।

jagonews24

আরও পড়ুন>> সংসদে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ১৪ এমপি

জাগো নিউজ: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের প্রবণতা দেখা যায়- তারা যখন গুঞ্জন শুনে কোনো কোম্পানির শেয়ারে মার্কেট প্লেয়ার আছে, তখন তারা কোম্পানির মৌলভিত্তি পর্যালোচনা না করেই সেই শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকে যায়। এটা কতটা যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত?

তারিকুজ্জামান: এখানে দুটি জিনিস আছে। একটা হলো, ফান্ডামেন্টাল (মৌলভিত্তি), আর একটা টেকনিক্যাল। অনেক টেকনিক্যাল ইনভেস্টর আছেন, যারা ফান্ডামেন্টালকে গুরুত্ব কম দেন। তাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ এটা সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের ইস্যু, টেকনিক্যাল ফ্যাক্টর। যখন কোনো বিনিয়োগকারী দেখে একটি সিকিউরিটিজের ওপর ডিমান্ড বেশি, তখন ফান্ডামেন্টালের পাশাপাশি তিনি ডিমান্ডের বিষয়টি দেখে কিনতেই পারেন। এ ধরনের বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট আছে। ফান্ডামেন্টাল বাদ দিয়েও কিন্তু বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

জাগো নিউজ: বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে ফ্লোরপ্রাইসের কারণে বাজারের প্রকৃত গতি ফিরে আসছে না। ফ্লোরপ্রাইসের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

তারিকুজ্জামান: আমি আগেও বলেছি ফ্লোরপ্রাইস কোনো সমাধান না। ফ্লোরপ্রাইস দিয়ে বাজারকে আটকে রাখা ঠিক না। আমি মনে করি, ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেওয়া উচিত, যতদ্রুত সম্ভব। আমার মনে হয়, ফ্লোরপ্রাইসের কারণেই লেনদেনের পরিমাণ কমে গেছে। লেনদেনে গতি আনতে হলে ফ্লোরপ্রাইস উঠাতেই হবে।

আরও পড়ুন>> টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ডিএসইর অভিনন্দন

জাগো নিউজ: আমাদের শেয়ারবাজারে প্রতিদিন কী পরিমাণ লেনদেন হলে তাকে স্বাভাবিক বলা যেতে পারে?

তারিকুজ্জামান: শেয়ারবাজারে প্রতিদিন কত লেনদেন হলে তাকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক বলা যাবে, সেটা আমি বলতে পারবো না। যদি হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের দাম ও লেনদেন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, সেটাকে আমরা অস্বাভাবিক বলবো। তখন অনুসন্ধান করতে হয় কেন দাম এবং লেনদেন বেড়ে গেলো। সেটার জন্য আমাদের সার্ভিলেন্স আছে, ইনভেস্টিগেশন আছে।

জাগো নিউজ: অনেকে বলেন আমাদের বাজারে প্রতিদিন দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হতেই পারে। কিন্তু গত দেড়-দুই বছরে আমরা এমন লেনদেন দেখছি না।

তারিকুজ্জামান: লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা স্বাভাবিক বা তিন হাজার কোটি টাকা স্বাভাবিক বা ১০ হাজার কোটি টাকা স্বাভাবিক এটার কোনো মানদণ্ড নেই। আমাদের দেখতে হবে বাজারের স্বচ্ছতা। লেনদেন ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এটা বাজারের ওপর নির্ভর করবে। বাজারই নির্ধারণ করে দেবে কত লেনদেন হবে।

আরও পড়ুন>> ভোটের পর শেয়ারবাজারে সূচকের বড় লাফ

জাগো নিউজ: আপনি যখন বিএসইসিতে দায়িত্বে ছিলেন, সে সময় মার্কেট মেকার তৈরির বিষয়টি বেশ আলোচনায় ছিল। কিন্তু একযুগের বেশি হয়ে গেলেও কেন মার্কেট মেকার তৈরি করা সম্ভব হয়নি?

তারিকুজ্জামান: মার্কেট মেকার রুলস যেটা হয়েছিল, সেটাকে আমাদের রিভিজিট করার সময় হয়েছে। আমাদের দেখা উচিত কেন কাজ করছে না। যখন করা হয়েছিল, কী কারণে এটা কার্যকর না সে ধরনের কোনো স্টাডি আমাদের কাছে নেই। কেউ করেনি। আমার মনে হয়, সেই জায়গাটা আমাদের দেখা উচিত।

এমএএস/এমএএইচ/এমএস