‘পাখি প্রেমির’ সঙ্গে বাড়ছে বাজারও, খাবারের দাম নিয়ে ক্ষোভ
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের। একসময়ে শহরের মানুষও পাখির কিচির মিচির শুনতে পেতেন। সেসময় বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি ও সবুজের সমারোহ ছিল ঢাকার শহরে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেসব স্থানে জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় দালান। ফলে পাখিরাও স্থান ত্যাগ করেছে। এখন শহরে শুধুই কাকের দেখা মেলে। কালে-ভদ্রে চোখে পড়ে অন্যান্য পাখি।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভাবনারও পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন সখের বসে পাখির পুষতে শুরু করেছেন। যারা অল্প জায়গায় স্বল্প পরিসরে পাখির কিচির মিচির শুনতে চান নগরে বসেই। স্বল্প পুঁজিতে অনেকেই আবার পাখির ব্যবসাও শুরু করেছেন। ব্যবসা জনপ্রিয় হওয়ায় সপ্তাহে বাজারও বসছে একাধিক স্থানে। তবে, পাখির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ-প্রকাশ করেছেন পাখি প্রেমিদের অনেকে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মুগদা বাজারে কথা হয় পাখি প্রেমি সানাউল্লাহর সঙ্গে। যাত্রাবাড়ীর মিরহাজারিবাগ এলাকা থেকে আসা সানাউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বাবার মুখে শুনেছি একসময় ঢাকার সবখানে গাছ ছিল। পাখির বাসা থাকতো সবখানে। পাখির ডাকে সকালে উঠতেন তারা। এখন গাছের স্থানে বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে। সেই পাখির ডাক আর পাওয়া যায় না। তবে, বাসার মধ্যেই বেলকুনিতে খাঁচায় পাখি পালন করা শুরু করেছি।
সানাউল্লাহ বলেন, আমার বাসায় কবুতর বেশি। প্রতি মাসেই বাচ্চা-ডিম দেয়। কিন্তু মাংস খেতে মায়া হয়। এ কারণে বেবি (বাচ্চা) বড় হলেই খাঁচা বাড়িয়ে দিই অথবা বিক্রি করে দিই। দেশি মুরগি ছিল। কয়েকদিন আগে মুরগিটা মারা গেছে। এ কারণে কয়েকটা কবুতর বিক্রি করে, ডিম দেওয়া একটা মুরগি কিনতে এখানে এসেছি। এখানে হাসিল (খাজনা) নেই, খাঁচা প্রতি ২০ টাকা নেওয়া হয়। এ কারণে এ বাজারের পরিধির সঙ্গে বাড়ছে ক্রেতার আগমনও।
সখের বসে পাখি পালন করেন ফজলুল হক। তিনি বলেন, গ্রামে বড় হয়েছি, এখন শহরে এসেছি চাকরির সুবাদে। গ্রামের সেই পাখির ডাক মিস করতে চাই না। তাই বাসায় কয়েক ধরনের বিদেশি পাখি রেখেছি। আজ কবুতর কিনতে এলাম। কবুতর কিনেছি তিন জোড়া। তবে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় পাখি পালনে সমস্যা তৈরি হয়। পাখির খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকলে অনেকের জন্য পাখি পালন সহজ হতো। অনেক উদ্যোক্তাও তৈরি হতো। এতে বেকার সমস্যাও অনেকটা কাটতো।
খাবারের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুল্লা মিয়াজি বলেন, পাখির ব্যবসা করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। তবে, এ ক্ষেত্রে খাবারের দাম কমাতে হবে। আমার এক জোড়া কবুতরের বাচ্চা বড় করতে খরচ হয় ৪০০ টাকা, অথচ বিক্রি করে পাওয়া যাবে ৪০০ টাকা। প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার খাবার প্রয়োজন। খাবারের দাম কমালে পাখি পালনের মাধ্যমে আমিষের জোগান সহজ হবে। সবাই গৃহে পালনের সঙ্গে সঙ্গে মাংসের জোগানও হতো।
পাখি প্রেমির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পাখির ব্যবসার পরিধিও। রাজধানীর মুগদা, গুলিস্তান, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুরসহ আরও কয়েটি স্থানে বসে কবুতর, বিদেশি পাখিসহ দেশি মুরগির বাজার। তবে, মুগদা স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাজার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বাজারটিতে হাসিল খরচ কম হওয়ায় অনেকেই আসেন এখানে।
সপ্তাহে প্রতি শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে এ বাজার। এখানে বাজরিগার পাখির জোড়া ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, বাবুই ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, ঘুঘু (আকার ও প্রকারভেদে) ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। এ বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশি-বিদেশি কবুতর বেচা-কেনায়। এখানে প্রতি জোড়া লক্ষা কবুতরের বাচ্চা এক হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, বড় লক্ষা দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
এছাড়া বিউটি হোমা (বেবি) দুই হাজার টাকা, বড় তিন থেকে চার হাজার টাকা, গিয়া চুল্লি কবুতরের জোড়া ৮০০ টাকা, লাহোরি সিরাজি পায়রা রেড ২৫০০ টাকা, কিং জোড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা, জ্যাক কিং চার হাজার টাকা, ডেনিশ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, রেসার মাদি কবুতর দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়া ডিম দেওয়া দেশি মুরগি (বড়) দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
এ বাজারের বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, আগে বেচাকেনা খুবই ভালো ছিল। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই পাখির সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন। তবে, পাখি প্রেমির সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। দু-একটি করে অনেকেই পাখি।
পাখি ব্যবসায়ী মো. শরিফ বলেন, মুগদা বাজারে হাসিল খরচ কম (খাচা প্রতি ২০ টাকা) হওয়ায় এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দিন দিন বাড়ছে। সবাই আসেন এ বাজারে। তবে এখন খাবারের দামটা একটু বেশি। এ কারণে অনেকে চাইলেও একাধিক পাখি পুষতে পারেন না।
ইএআর/এমএএইচ/জেআইএম