পোশাকশ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১২৫০০ টাকার খসড়া গেজেট প্রকাশ
পোশাকশ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে খসড়া গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ মজুরি হারের ওপর কারও কোনো সুপরিশ বা আপত্তি থাকলে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যে পাওয়া আপত্তি বা সুপারিশ বিবেচনার পর বোর্ড সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
রোববার (১২ নভেম্বর) ঢাকার নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা স্বাক্ষরিত খসরা গেজেটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়। গত ৭ নভেম্বর বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরির ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
সে সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করছি। পূর্বের ৮ হাজার টাকা থেকে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হবে। এছাড়া তাদের জন্য বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।
খসরা গেজেটে বলা হয়েছে, ন্যূনতম মজুরি সমন্বয় করে এক বছর কর্মরত থাকার পর শ্রমিক-কর্মচারীরা মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ভিত্তিতে মজুরি বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তী বছরে ক্রমবর্ধমান হারে পুনরায় মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। সোয়েটারসহ অন্যান্য গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরে ফুরন ভিত্তিক মজুরিতে কর্মরত শ্রমিকরাও বার্ষিক ভিত্তিতে মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন।
শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি অনুযায়ী ভাতাদি এবং অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।
গেজেটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেড-১ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৮ হাজার ২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ১০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
গ্রেড-২ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৮০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৯০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
গ্রেড-৩ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৭০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
গ্রেড-৪ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৩ হাজার ২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৫০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৫২৫ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
একইভাবে গ্রেড-৫ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
অন্যদিকে পোশাক কারখানার কর্মচারীদের জন্য মজুরির চারটি গ্রেড সুপারিশ করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। গ্রেড-১ এ ১০ হাজার ৯০০ টাকা মূল মজুরিতে মোট বেতন সুপারিশ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ টাকা। গ্রেড-২ এ ৯ হাজার টাকা মূল বেতনে কর্মচারীদের মোট বেতন হবে ১৫ হাজার ৯৫০ টাকা।
এছাড়া গ্রেড-৩ এ ৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে মোট বেতন ১৫ হাজার ২০০ টাকা এবং গ্রেড-৪ এ ৬ হাজার ৯০০ টাকা মূল বেতনে মোট বেতন ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের মতো পোশাক কারখানার কর্মচারীদেরও মূল বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা এবং খাদ্য ভাতা যোগ করে মোট বেতন সুপারিশ করা হয়েছে।
পোশাক কারখানর শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে কে কোন গ্রেডের আওতায় বেতন পাবেন, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এমএএস/জেএইচ/জিকেএস