ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

রেকর্ড উৎপাদনের বছরেও লবণ আমদানি

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৮:২৭ এএম, ১১ নভেম্বর ২০২৩

গত ৬২ বছরের মধ্যে দেশে এবার রেকর্ড লবণ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও ক্রমাগত চাহিদা বাড়ায় লবণ সংকটের আশঙ্কা করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। যে কারণে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে চাষি, মজুতদার ও মিল মালিকদের মধ্যে। এ সিদ্ধান্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ২২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে লবণ চাষে গত ৬২ বছরে কখনো এত লবণ উৎপাদন হয়নি। সবশেষ ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল।

jagonews24

এরপরও লবণের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম। এ কারণে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ২৬৪ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘প্রাকৃতিক কারণে এবার লবণ উৎপাদন মৌসুম অন্তত ১৫ দিন পরে শুরু হয়েছে। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন>> ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি পেলো ২৬৪ প্রতিষ্ঠান 

এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন লবণ চাষিরা। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে চাষি ও মজুতদারদের কাছে এবং মিলে বর্তমানে যে লবণ মজুত আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নতুন উৎপাদন মৌসুম। চাষিরা উৎপাদনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আমদানির অনুমতির কারণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের দাবি, বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ টন লবণ মজুত রয়েছে। তাই ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঘাটতি হওয়ার শঙ্কা নেই। বর্তমানে কক্সবাজারে প্রতি মণ লবণের দাম ৫৫০ টাকার আশপাশে। লবণের বাজার ঠিক থাকায় এবার চাষের জমি এবং চাষিও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন>> লবণ উৎপাদনে ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ 

তবে আগস্টের সরবরাহ বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংকট দেখিয়ে আমদানির পাঁয়তারা করেছেন মিলাররা। কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিল মালিকরা বিসিককে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আমদানির অনুমতি নিয়েছে। ফলে এ মৌসুমের লবণ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে চাষিরা, যা বড় প্রভাব ফেলবে।’

আমদানির পক্ষে যুক্তি দিতে মিল মালিকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত আগস্টে মাঠ থেকে লবণ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে চাহিদার চেয়ে লবণের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে বেড়েছে অপরিশোধিত লবণের দাম, রয়েছে সংকটও। তাই আমদানি করা সঠিক সিদ্ধান্ত।

দেশে একমাত্র উৎপাদিত পণ্য লবণ, যা দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ পুরো দেশ। এটি দেশের দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু জায়গায় এবং কক্সবাজারে উৎপাদন হয়। তবে উৎপাদনের সিংহভাগই হয় কক্সবাজারে। নভেম্বর থেকে মে মাস ধরা হয় লবণের মৌসুম। এখন আগামী মৌসুমের লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

jagonews24

বিসিক প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও লবণ সেলের প্রধান সারওয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার টন। এবছর চাহিদা ছিল ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টন।’

আরও পড়ুন>> অর্ধেকে নেমেছে দাম/লবণ উৎপাদন থেমে যাওয়ার শঙ্কা 

তিনি বলেন, ‘এ মৌসুমের শুরুতেই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় হামুনের জন্য সিজন ১৫ দিন লেট হয়। পূর্ব সর্তকতা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

চাষিদের অভিযোগ উড়িয়ে দেন মিল মালিকরা। তারা বলছেন, কক্সবাজারে চাষি নামধারী কিছু মজুতদার একচেটিয়া ব্যবসা করছেন। এক মাসের ব্যবধানে ১২শ টাকার লবণের বস্তা (অপরিশোধিত ৮০ কেজি) দাম বেড়ে হয়েছে ১৩শ টাকা। সরকারের উচিত, বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। তা না হলে পরিশোধিত লবণের দাম আরও বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির আগে লবণ পুরোপুরি উৎপাদন হবে না। এছাড়া কক্সবাজারে মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে রাখছে। তাদের বেঁধে দেওয়া দরে লবণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে অপরিশোধিত লবণের দাম বাড়তে বাড়তে ৬শ টাকার বস্তা ১২শ টাকায় উঠেছে। এক মাসের ব্যবধানে আরও ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩শ টাকার বেশি। এ লবণ আমদানিতে চাষিদের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ এখন লবণ মজুতদারদের হাতে রয়েছে।’

প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। তবে বছরজুড়ে মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম বেশি পাওয়া ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কারণে চাষিরা আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে চাষের পরিধি, লবণ চাষি, মৌজার সংখ্যাও বেড়েছে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন, যা গত মৌসুমে ছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টন।

এনএইচ/এএসএ/জিকেএস