ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

অর্থনৈতিক মন্দায় কমছে ক্রয়াদেশ, শঙ্কায় রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৩

রাজস্ব আহরণের মতো রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও বরাবরই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন রপ্তানিনীতিতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অস্থিতিশীল বাজার ও রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল এবং পরিবহন খরচ বাড়ায় সরকারের সামনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর এবারের চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্নমাত্রিক। তবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ২০২৪ সাল নাগাদ রপ্তানি আয়ের এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে চায় সরকার।

এর পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীলরা যুক্তি খণ্ডনও করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, তৈরি পোশাক আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও ৫-৬টি পণ্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করবে। ২০২৪ সাল নাগাদ রপ্তানির আকার ৮০ বিলিয়নে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

jagonews24

আরও পড়ুন: কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যমূলক নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর পরপর রপ্তানিনীতি প্রণয়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রপ্তানিনীতি ২০২১-২০২৪ দিয়েছে সরকার। যেখানে আট হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করতে হলে তিনটি অর্থবছরেই আগের অর্থবছরগুলোর চেয়ে রপ্তানি আয় দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে।

শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট নিরসন না হলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। সরকার রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও উৎপাদন বাড়াতে আন্তরিক। এ লক্ষ্যে দেশের আনাচে-কানাচে ইকোনমিক জোন বা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা। তবে সবকিছুর পর এখনো দেশের মূল রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। এ খাতের হাত ধরেই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), চামড়া ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।

পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছিল ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে পণ্য খাতে ৬২ বিলিয়ন আর সেবা খাতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে সরকার।

jagonews24

আরও পড়ুন: রপ্তানি সহায়ক তহবিলের ঋণ পেতে নতুন নির্দেশনা

দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছর ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা ৪৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রপ্তানির আকার ১০০ বিলিয়নে উন্নীত করতে চান এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে চলতি বছর পোশাক খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠান।

রপ্তানিতে নতুন বাজার সম্প্রসারণ, উৎপাদন খরচ হ্রাস, রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহার, কৃত্রিম বা ম্যানমেড ফাইবার ও ফেব্রিক এবং রিসাইকেলড ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চান উদ্যোক্তারা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল নাগাদ দেশের পোশাক ব্যবসা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে পারে। তবে ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হার, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনো পোশাকশিল্পের জন্য বড় বাধা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ্ আজিম জাগো নিউজকে বলেন, বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ হলে এটা অর্জন করা কঠিন হবে না। এজন্য আমরা ২০টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

jagonews24

আরও পড়ুন: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীতিমালা হচ্ছে

জানতে চাইলে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, সিইপিজেডে (চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) আমরা নতুন কারখানা স্থাপন করেছি। আগামী নভেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হতে পারে। বছর শেষে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ৬০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) অন্যতম সদস্য এবং জিন্স কনসেপ্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী গাজী আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ চলছে, আমেরিকায় চলছে মূল্যস্ফীতি। এ কারণে ক্রেতারা এখন পণ্য কিনছেন না। পশ্চিমা বহু দেশে আমাদের পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের বিদেশি মিশনগুলোকে এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এজন্য ইউরোপে যুদ্ধের ইতি টানা প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো।

সম্প্রতি আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ বিষয়ে নীতিসহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সাভারের ট্যানারি শিল্পের সিইটিপি (সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ত্রুটিমুক্ত করে মানদণ্ডের উন্নয়ন করা খুবই জরুরি। বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে দেশের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। তবে যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে এ খাতের আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব।

jagonews24

আরও পড়ুন: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সামঞ্জস্যে আমদানি শুল্ক-কর 

২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের। যার মধ্যে চামড়া ১২, চামড়াজাত পণ্য ৪০ ও চামড়ার জুতা ৭০ কোটি ডলারের। সামগ্রিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পৌনে ২ শতাংশ।

অন্যদিকে দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) পণ্য ও সেবা। তবে রপ্তানি খাতে এর প্রভাব অত্যন্ত নগণ্য। যদিও বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তির বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০৩০ সালে আইটি পণ্য ও সেবার আকার ছাড়াবে হাজার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেরও এ খাতে রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জুবায়ের কবির জাগো নিউজকে বলেন, আইটি খাতে রপ্তানির বড় বাজার ধরার সুযোগ আমাদেরও আছে। আমাদের অবকাঠামো ও জ্ঞান আছে। সঠিক সার্ভিস ও ব্যবস্থাপনায় আসতে পারলে এ খাত থেকে ভালো আয় করা সম্ভব।

এসএম/এমকেআর/জিকেএস

আরও পড়ুন