সর্বজনীন পেনশনে একক চাঁদায় এগিয়ে প্রবাসীরা
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা সবার নিচে থাকলেও জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ায় সবার ওপরে রয়েছেন তারা। তবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবার ওপরে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।
প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা— এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু করেছে সরকার। শুরুতেই এই পেনশন স্কিমে মানুষের বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু
নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদার কিস্তি পরিশোধ করার তালিকায় সব থেকে বেশি রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। মোট যে সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, তার অর্ধেকের বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী।
অপরদিকে সব থেকে কম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন প্রবাসীরা। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাদের মধ্যে এককভাবে চাঁদা দেওয়ায় সবার ওপরে রয়েছেন প্রবাসীরা। প্রথম সপ্তাহে যেসব প্রবাসী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, তাদের জমা দেওয়া গড় চাঁদার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা।
আর স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ায় সবার নিচে রয়েছেন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারীরা। তাদের জন্য চালু করা স্কিমে জনপ্রতি গড়ে চাঁদা জমা পড়েছে এক হাজার ৪৪৪ টাকা। অবশ্য সবকয়টি স্কিমেই গড়ে জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ, ওই স্কিমের মাসিক সর্বোচ্চ চাঁদার পরিমাণের থেকে বেশি।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদার হার কত?
এর কারণ হলো সবকয়টি স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া অগ্রীম চাঁদা দেওয়ার সুযোগও আছে। এ কারণে মাসিক চাঁদার সর্বোচ্চ হারের তুলনায় জমাপড়া গড় চাঁদার পরিমাণ বেশি।
গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পর পরেই প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিমের আবেদন শুরু হয়। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনেই নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেন এক হাজার ৭০০ জন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন।
পরের দুইদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। এই দুইদিনে আরও ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই নিবন্ধন করে করে চাঁদা পরিশোধের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৯০ জনে। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি
পরের পাঁচদিনে (২০ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত) নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন আরও ৪ হাজার ৩৯০ জন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত মোট চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৮ হাজার ৫৫১ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৪ হাজার ৫১৯ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি গড়ে চাঁদা দিয়েছেন ৫ হাজার ৫২১ টাকা। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি প্রভৃতি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ২ হাজার ৯০৭ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি জমা করা চাঁদার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪ টাকা। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে কারা অংশ নিতে পারবেন?
যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ৯১০ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি গড়ে চাঁদা দিয়েছেন এক হাজার ৪৪৪ টাকা। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার এক হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
এছাড়া প্রবাসীদের জন্য চালু করা প্রবাস স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ২১৫ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। জনপ্রতি গড় চাঁদার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশনের টাকা কোথায় যাবে?
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন। একই সঙ্গে মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
এমএএস/কেএসআর/জেআইএম