ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২৩

প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম- এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। গোপালগঞ্জ, রংপুর, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ ও বরগুনা এই আট জেলা এবং জেদ্দা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর বৈদেশিক মিশনে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এ সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর কারণ জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভার্চুয়ালি সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরে ৮টি জেলা (গোপালগঞ্জ, রংপুর, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ, বরগুনা) এবং বৈদেশিক মিশন (জেদ্দা, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর) এ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন।

আরও পড়ুন: চালু হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিম

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সুবিধাভোগী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর এ কাজকে যুগান্তকারী এবং সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ সংযোজন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

অর্থমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা থেকে ২০০৮ সলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা) এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে তিনি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেন। যার ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে এরই মধ্যেই জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট-সম্বলিত এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম।

আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে কারা অংশ নিতে পারবেন?

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় আছে। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিধায় একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, বিধায় সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু

এতে আরও বলা হয়েছে, এ উদ্দেশে আইনের আওতায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এবং গভর্নিং কাউন্সিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালাও জারি করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মোট ৬ স্কিম থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি স্কিম চালু হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের (বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা আয়সীমা) মানুষের জন্য অংশ প্রদায়ক ‘সমতা’ স্কিম।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

সমতা স্কিমে ব্যক্তি প্রদত্ত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ সরকার প্রদান করবে। সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সুবিধামত সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।

যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু

চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন চালু হলে মাসে মিলবে ৬৪৭৭৬ টাকা

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং ৪টি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা প্রদান শুরু হয়েছে। সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে দেশে এবং বিদেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এমএএস/এমকেআর/জেআইএম