সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আরও বাড়বে ডিম-মুরগির দাম
দেশে ডিমের দামে অস্থিরতা চলছেই। বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এর পেছনে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী করপোরেট কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে প্রান্তিক ডিলার ও খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে হুটহাট ডিম-মুরগির দাম বাড়ছে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম নিয়ন্ত্রণ যেমন সম্ভব হবে না, ডিম-মুরগির দামও আরও বাড়তেই থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেড়েছে উৎপাদন খরচ, এক ডিমের দামই ১৪ টাকা
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় পোল্ট্রি শিল্পে করপোরেটদের আধিপত্যের খেসারত দিচ্ছে জনগণ। এতদিন ন্যায্যমূল্য না পেয়ে প্রান্তিক খামারিদের অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ কারণে ডিম-মুরগির দাম বাড়ছে হু হু করে।
সেখানে আরও বলা হয়, দেশের ৫০ লাখ প্রান্তিক উদ্যোক্তার অধিকাংশ খামারি এখন ব্ল্যাংক চেকের মাধ্যমে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। কারণ, করপোরেট কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিক ফার্মিংয়ের নামে দাদন ব্যবসা করছে। কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের লোকসান করাচ্ছে, যেন তারা চুক্তিতে ফার্ম নিয়ে নিতে পারে। প্রান্তিক খামারিদের ডিম-মুরগি বাজারে এলেই দাম কমে যায়। তখন তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়। এ কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: করপোরেট কোম্পানির ‘কারসাজিতে’ নিঃস্ব প্রান্তিক খামারিরা
সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। অথচ প্রান্তিক খামারিদের বাধ্য হয়ে কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে চাইলেই যখন-তখন ডিম-মুরগির দাম বাড়ানো বা কমানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করপোরেট কোম্পানিগুলো ডিম-মুরগি বাজারে এনে দ্বিগুণ লাভ করছে। কারণ, করপোরেটদের একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৯ থেকে ১৩০ টাকা। প্রান্তিক ও করপোরেটদের উৎপাদন খরচের এ ব্যবধাই বাজারে দাম নিয়ে অস্থিরতা তৈরি করে।
ডিম ও মুরগির দাম সহনীয় রাখতে ও খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য সংযোজনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: মুরগির দামে সিন্ডিকেটের থাবা
সংগঠনটি আরও বলছে, প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট কোম্পানিগুলোকে মুরগি দেওয়ার শর্তে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে দাদন ব্যবসার ফাঁদে পড়ছে। ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ২৬০০ টাকা এবং সব সময়ের জন্য একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে হিসাব করা হয়। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে না গেলে ফিডের বস্তার দাম ৩৫৫০ টাকা ও মুরগির বাচ্চার দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়। অনেক সময় চুক্তির বাইরে বাচ্চা বিক্রি করা হয় না।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, একদিকে প্রান্তিক খামারি হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে করপোরেট কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এ বৈষম্য দূর করে বাজারে প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিম-মুরগি উৎপাদনে ৮০ শতাংশ শেয়ারের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দেশে আমিষের ঘাটতি চরম রূপ নিতে পারে।
আরও পড়ুন: মুরগির দাম বাড়িয়ে ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লুট
এনএইচ/এমকেআর/জেআইএম