রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ পেতে চান না পোশাক রপ্তানিকারকরা
মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সংকট, জ্বালানির বাজারে অস্থিরতাসহ নানান চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের রপ্তানি খাত। এরই মধ্যে রাজপথে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতি। বিদেশি প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও দেশের নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত দিচ্ছে পর্যবেক্ষণ। নির্বাচনকেন্দ্রিক চলমান রাজনৈতিক সংকটের সুষ্ঠু সমাধান না হলে রপ্তানিখাত ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের রপ্তানিখাতের নেতৃত্বে রয়েছে পোশাক শিল্প। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এ খাত থেকে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয় বিশ্বের এমন নামি-দামি কয়েকটি বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি সম্প্রতি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সময়মতো পণ্য হাতে পাওয়া নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। দেশগুলো নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে। তবে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন বিজিএমইএর উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাইহোক রপ্তানিমুখী শিল্পকে সব কিছুর বাইরে রাখার আহ্বান রপ্তানিকারকদের।
আরও পড়ুন>> বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে কমেছে রপ্তানি
২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ বা তার আগের মাস ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি বাড়াচ্ছে। থাকছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। কয়েকটি সমাবেশে বিশৃঙ্খলার ঘটনাও ঘটেছে। পদযাত্রা, সমাবেশে অচল হয়েছে ঢাকা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সঙ্গে গুলির ঘটনাও ঘটেছে কোথাও কোথাও। এ পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও সাধারণের মধ্যে।
বিজিএমইএ-বিকেএমইএর কয়েকজন পরিচালক ও শিল্প উদ্যোক্তা জানান, দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। এ শঙ্কা শুধু আমাদেরই না ক্রেতাদেরও। পোশাকখাতের ক্রেতাদের আশঙ্কা এদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টি হলে পণ্য উৎপাদনে বিঘ্ন হবে। কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে। আবার কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাকপণ্যের দাম কম দিতে চাচ্ছেন। তবে সময়মতো পণ্য সরবরাহের বিষয়ে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা।
আরও পড়ুন>> রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির শেষ কোথায়?
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম জাগো নিউজকে বলেন, উদ্যোক্তারা এখনো কোভিডের সময়কার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখনো স্বাভাবিক ক্যাশফ্লো ফিরে আসেনি। ব্যবসায়ী নেতৃত্বদের মাথায় রাখতে হবে যে সমস্যাগুলো কী। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামনে যাইহোক এসব সমস্যার সমাধান কী হবে তা বের করা। রপ্তানির জন্য বিকল্প পথ তৈরি করতে হবে, নন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে আমাদের শিফট করতে হবে।
এখন ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) বিপরীতে পোশাকের পিসের সংখ্যাও কমছে। এটি আমদানি সনদ। আগে ইউডির আওতায় গড়ে পাঁচ হাজার পিস পোশাক থাকলেও এখন একেকটি ইউডি কমে পাঁচশ পিসে এসেছে। গত মে মাসে ইউডির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৩৪০টি। পরের মাস জুনে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ২৯টিতে। তবে দেশের রাজনীতির পরিবেশ যাইহোক এর সঙ্গে পোশাকখাতকে না জড়ানোর কথা বলেছেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।
আরও পড়ুন>> অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি এবং এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাম মুর্শেদী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতি আর রপ্তানি এক নয়। রাজনীতির সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক নেই। দেশের পরিবেশ যাইহোক এর সঙ্গে রপ্তানিখাত যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এ দাবি উদ্যোক্তাদের।’
এফবিসিসিআইর বর্তমান সভাপতি এবং বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজীনতিবিদরা সংসদ সদস্য হয়ে আইন প্রণয়ন করেন, দেশের জন্য কাজ করেন। ব্যবসায়ীরাও দেশের জন্য কাজ করেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেন। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান তৈরিতে বেসরকারিখাতই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এসব দিক বিবেচনায় ব্যবসাকে রাজনীতির সঙ্গে মেলানো যায় না। যদিও উভয়ই দেশ গঠনে কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘এখন চ্যালেঞ্জটা বিশ্বব্যাপী। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে নিতে হবে। এখনো এলসি লিমিটেশন আছে, পণ্যের দাম বেশি, মূল্যস্ফীতি আছে। তাছাড়া সেক্টর চ্যালেঞ্জ, ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ আছে। দেশের স্বার্থে শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে। রপ্তানিখাতকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য। সবকিছুর বাইরে রাখতে হবে শিল্পকে।’
ইএআর/এএসএ/এমএস