ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

আমদানির পরদিনই ২০০ টাকায় নামলো কাঁচা মরিচ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ০৩ জুলাই ২০২৩

ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে আসার পর রাজধানী ঢাকায় পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে পাইকারিতে কাঁচা মরিচের দাম নেমে এসেছে ২০০ টাকার নিচে। আর খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচের কেজি আড়াইশ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, যা দুইদিন আগে উঠেছিল ৬০০ টাকায়।

সোমবার (৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি করছেন ৬০ টাকা। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী এখনো এক পোয়া কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করছেন। এছাড়া পাইকারিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজি।

সম্প্রতি হুট করেই দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে কাঁচা মরিচের দাম। অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ২৫ জুন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সেদিন কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সারাদিনে (২৫ জুন) ৩০টি আইপি-তে ১১ হাজার ৬০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: একদিনে এলো আমদানির ৫৫ টন কাঁচা মরিচ

সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর একদিনের ব্যবধানে ২৬ জুন রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে কাঁচামরিচের দাম ১০০ টাকা বেড়ে যায়। ২৫ জুন কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল। ২৬ জুন তা আরও বেড়ে ৪০০ টাকা হয়।

ঈদের পর কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পালে আর এক দফা হাওয়া লাগে। গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা বিক্রি হয়। তবে আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে আসার পর গতকাল সকালে দাম কিছুটা কমে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ পরিস্থিতিতে বিকেলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঈদের ছুটির পর রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৫৫ টন কাঁচা মরিচ দেশে এসেছে। রাতে আরও আসবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশে এসেছে মোট ৯৩ টন।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ৮০০ ছুঁয়েছে কাঁচা মরিচ

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই তথ্য প্রকাশের পর সন্ধ্যার আগেই কাঁচা মরিচের দাম কমে কেজি ৩০০ টাকায় চলে আসে। আর আজ সকাল হতেই কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকার নিচে চলে আসলো।

কাঁচা মরিচের দাম কমার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। এখন আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাজারে চলে এসেছে। এ কারণে দাম কমেছে।

তিনি বলেন, আমদানি করা কাঁচা মরিচ আসার পর গতকাল থেকেই দাম কমতির দিকেঅ দুইদিন আগে আমরা কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন তা দুইশ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচা মরিচ আসতে থাকলে দাম আরও একটু কমতে পারে।

কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ইদ্রীস আলী বলেন, বৃষ্টি ও কোরবানির ঈদের কারণে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন আমদানির মরিচ আসায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমেছে।

আরও পড়ুন: কাঁচা মরিচ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার সহজ পদ্ধতি

তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পেছনে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। গণমাধ্যমের খবরেই এসেছে ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে কাঁচা মরিচ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হলে বিক্রিও বেশি দামে করতে হবে। এখন কম দামে কিনতে পেরেছি, তাই কম দামে বিক্রি করছি।

ঢাকায় একলাফে কাঁচা মরিচ নামলো ২০০ টাকায়

রামপুরা বাজারে ৬০ টাকা পোয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি করা মো. জয়নাল বলেন, গতকাল সকালে এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ আড়ত থেকে কম দামে কিনতে পেরেছি, তাই ৬০ টাকা পোয়া বিক্রি করছি। দাম কম হলেও এই মরিচের ঝাল ভালো, এটা দেশি মরিচ।

রামপুরা বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শরিফুল এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা বিক্রি করছিলেন। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কাঁচা মরিচের পোয়া ৬০ টাকা বিক্রি করলেও আপনি ১০০ টাকা চাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে শরিফুল বলেন, ৬০ টাকার মরিচ ৬০ টাকা। আমার এই মরিচ নিতে হলে এক পোয়ার দাম ১০০ টাকা দিতে হবে।

এই মরিচ কি গতকাল কেনা? এমন প্রশ্ন করলে শরিফুল বলেন, ভাই আমার এই মরিচ গতকাল কেনা এটা ঠিক ধরেছেন। দেখেন, গতকাল কেনা হলেও এই মরিচ এখনো কত টাটকা। অথচ আজ যারা মরিচ এনেছেন দেখেন সব দম ধরা। মরিচ হাত দিয়ে উল্টায়ে দেখবেন নিচে গরম। এ মরিচ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। ঝালও কম।

আরও পড়ুন: কাঁচা মরিচ খাবেন কেন?

মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে কাঁচা মরিচের পোয়া ৬০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। বৌবাজারের ব্যবসায়ী আলম বলেন, আমদানির কাঁচা মরিচ চলে আসায় দাম কমে গেছে। গতকালও এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ ৬০ টাকা বিক্রি করেছি। আমাদের ধারণা সামনে দাম আরও কমবে।

হাজীপাড়া বৌবাজার থেকে কাঁচা মরিচ কেনা রাহেলা বেগম বলেন, দুইদিন আগে এই বাজারেই এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগে দুইদিন বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসে ফিরে গেছি। বাসায় শুকনা মরিচ ছিল, তাই দিয়ে রান্না করেছি। আজ এক পোয়া ৬০ টাকা দিয়ে কিনলাম। আমার কাছে কাঁচা মরিচের এই দামও বেশি মনে হচ্ছে। এক পোয়া ২০-৩০ টাকা হলে ঠিক আছে।

খিলগাঁও তালতলা বাজার থেকে ৮০ টাকা পোয়া কাঁচা মরিচ কেনা মইনুদ্দিন বলেন, বাজারে কিছু কিছু ব্যবসায়ী কাঁচা মরিচের পোয়া ৬০ টাকা বিক্রি করছেন। কিন্তু ওই কাঁচা মরিচ খুব একটা চকচকে না। চকচকে টাটকা কাঁচা মরিচ একটু বেশি দাম দিয়ে কিনলাম।

তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের পোয়া ১৫০ টাকা হবে কোনো দিন কল্পনাও করিনি। এবার বাস্তবে দেখলাম। এখন দাম কমে ৮০ টাকা হয়েছে। তবে আমার মতে কাঁচা মরিচের এই দামও বেশি। ঠিকভাবে বাজার মনিটরিং হলে কাঁচা মরিচের দাম আরও কমবে।

এমএএস/কেএসআর/জেআইএম