ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

১১ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে চারগুণ

ইসমাইল হোসাইন রাসেল | প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ০১ জুন ২০২৩

দুধ শরীরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পুুষ্টিবিদদের মতে, সুস্থ-সবল শরীরের জন্য সব বয়সী মানুষেরই নিয়মিত দুধ পান করা উচিত। সুস্থ জীবনযাপনে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের অপরিহার্য উপাদান হওয়া উচিত দুধ। দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুসম খাবার দুধের উৎপাদনও বেড়েছে। গত ১১ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দুধের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিতকল্পে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুধপানের অভ্যাস গড়ে তোলায় সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১৩০ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০১০-২০১১ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে চারগুণ বেশি। ফলে প্রতিদিন জনপ্রতি প্রাপ্যতা ২০৮ দশমিক ৬১ মিলিতে উন্নীত হয়েছে। বিগত এক যুগে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ডেইরি স্টকের সংখ্যাগত উত্থান দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, আত্মকর্মসংস্থান সৃজন এবং সর্বোপরি, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান অনস্বীকার্য। সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং দুধ উৎপাদনে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ৫০ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ (বিবিএস, ২০২১)।

মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাণিজ আমিষের সহজলভ্যতার ফলে খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রাণিজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণসহ বাণিজ্যিক উদ্যোগের প্রসার ঘটেছে। গত এক যুগে ডেইরি ও ছোট রোমন্থক পশুর (ছাগল/ভেড়া) খামার যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪ গুণ বেড়েছে। বর্ণিত সময়ে খামারের আকার, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে, যা খামারের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদা পূরণে মিল্ক ও মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্বের ৪০ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয় এশিয়া মহাদেশে। এর মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী দেশ ভারত। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই বাংলাদেশের।

জানা গেছে, দুধ পাওয়ার পর সেটি যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে বড় কোম্পানিগুলো। কিন্তু খামারি পর্যায়ে এ বিষয়ে ধারণা কম থাকায় এবং ব্যবস্থাপনা না থাকায় যথাযথভাবে দুধ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মেশিনারিজের অভাবে অনেক সময় কোম্পানিগুলোর কাছেও দুধ পৌঁছায় না। দেশের দুধ উৎপাদক কোম্পানিগুলো ১০-১৫ শতাংশ দুধ ব্যবহার করতে পারে। বাকি সব দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। ফলে সারাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এসব সমস্যা সমাধানে দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য বিভাগভিত্তিক প্রসেসিং প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দুগ্ধ খাতের ৪১ সফল খামারিকে সম্মাননা

১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের’ (এলডিডিপি) সহযোগিতায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন ও ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে চারটি ক্যাটাগরিতে দেশের দুগ্ধ খাতের ৪১ জন সফল খামারি ও উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

দেশে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ পুরস্কারের খাতভিত্তিক সংখ্যা হলো- ডেইরি খামার ক্যাটাগরি ২০টি, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরি আটটি, দুধ-মাংস প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরি নয়টি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরি চারটি। সফল খামারি নির্বাচনের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শুরুতেই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ প্রশাসন এবং এলডিডিপি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলার জেলা প্রশাসনকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়। ডেইরি আইকন সেলিব্রেশনের তথ্য জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, প্রকল্প দপ্তর এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে।

আয়োজকরা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে চেম্বার অব কমার্স ও খামারিদের সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি করে জেলা নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলো স্ব স্ব জেলার সেরা খামারি ও উদ্যোক্তাদের তথ্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে প্রেরণ করে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি জেলা পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তালিকার তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানগুলোর র‌্যাংকিং তালিকা চূড়ান্ত করে। এর মধ্য থেকে নির্বাচিত ৪১ খামারি ও উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ টাকা। সেই সঙ্গে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে ক্রেস্ট ও সনদ। দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে র‌্যালি আয়োজন করা হচ্ছে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ঢাকার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল মিল্ক ফিডিং’ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মিল্কভিটা, প্রাণ ডেইরি, আকিজ ডেইরি, ব্র্যাক ডেইরি এবং রংপুর ডেইরি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা, খামারি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকার বাইরেও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলায় বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানামুখী কর্মসূচি। নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়-এতিমখানার শিশুদের দুধ খাওয়ানো, কুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র‌্যালি, সভা, পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৩ উদযাপন’ ও ‘ডেইরি আইকন ২০২২ সেলিব্রেশন’ উপলক্ষে নির্বাচিত আইকনদের নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি দুধ উৎপাদন ও দুধের বহুমুখী ব্যবহারে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। দুধের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিতকল্পে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তোলায় সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গত ১১ বছরে দুধের উৎপাদন সাড়ে চারগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ডেইরি স্টকের সংখ্যাগত উত্থান দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খামারিদের সংগঠিত করে প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি, ফার্মার্স স্কুল পরিচালনা, ভিলেজ মিল্ক কালেকশন প্রতিষ্ঠা, ডেইরি হাব তৈরিসহ নানা উদ্যোগ দেশে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আইএইচআর/ইএ/এএসএম

আরও পড়ুন