অর্থবছর ২০২৩-২৪
কলম-টিস্যু-খেজুর-সিগারেটের খরচ বাড়বে
নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে টয়লেট টিস্যু, কলম, সিমেন্ট, কাজু বাদাম, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজষপত্র, সিগারেট, জর্দা-গুল, খেজুর, বিদেশি টাইলস, মোবাইল ফোন, বাসমতি চাল, চশমার ওপর শুল্ক-কর অথবা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে নিত্যব্যবহার্য এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বা উৎসব-পার্বন বিরিয়ানি, তেহারি খেতে পছন্দ করেন। এই শখের খাবার খেতেও বাড়তি খরচ করতে হবে। কারণ বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে বিরিয়ানি-তেহারির অন্যতম প্রধান উপকরণ এই চালের দাম বাড়তে পারে। এতে যারা শখ করে উৎসব-পার্বন বিরিয়ানি, তেহারি খেতে পছন্দ করেন, তাদের সামনে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে।
বাড়তি অর্থ গুনতে হবে প্লাস্টিকের তৈরি সবধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রীর জন্য। কারণ এসব পণ্যের উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব পণ্যের উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে।
একই হারে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজষপত্রের (হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন) ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম সামনে বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ৮ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২০ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা
যারা বাদাম-খেজুর খেতে পছন্দ করেন তাদেরও খরচের বোঝা বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরের বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। মূলত শুল্ক ফাঁকি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিধায় আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়ায়, সামনে বাদামসহ বিভিন্ন ফলের দাম বাড়তে পারে।
শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সবধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য দেশে ওভেন উৎপাদনের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। ফলে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়লেও দেশি ওভেনের দাম নাও বাড়তে পারে।
বর্তমানে সারাদেশে রান্নার কাজে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে সামনে সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেটের আগে রাজস্ব ঘাটতির চাপ
ধুমপায়ীদের জন্যও এবারের বাজেটে দুঃসংবাদ থাকছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সবধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) সিগারেটের দাম ১৩৪ টাকা, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) সিগারেটের দাম ২২৬ টাকা এবং অতিউচ্চ স্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জর্দা-গুলের দামও বাড়াতে পারে। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
এবার আইএমএফের পরামর্শে মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজাটে ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
লেখার প্রধান উপকরণ কলমের দামও সামনে বাড়তে পারে। কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে। চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে সামনে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
নতুন অর্থবছরে সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শিরিষ কাগজ আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার আঠা বা গ্লু সংরক্ষণমূলক শুল্ক বাড়ানোরে পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
আসন্ন বাজেট বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়াবে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলের দাম বাড়তে পারে।
এমএএস/এমআরএম