বিশ্ববাজারে আম রপ্তানির পথ সুগম হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
অচিরেই বিশ্ববাজারে দেশের আম রপ্তানির পথ সুগম হবে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে রপ্তানিযোগ্য আমের উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের অনেক চাহিদা রয়েছে। দেশে আমের উৎপাদন অনেক বেড়েছে, রপ্তানির সম্ভাবনাও অনেক। রপ্তানির ক্ষেত্রে আম নিরাপদ ও রোগজীবাণুমুক্ত এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। কিন্তু আমরা এখনো সেই নিশ্চয়তা দিতে পারিনি, আমাদের প্রস্তুতি চলছে। উত্তম কৃষিচর্চা মেনে আম উৎপাদন, ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ এবং কৃষক, ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারকদের প্রশিক্ষণসহ নানান উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এছাড়া এরই মধ্যে ৪৭ কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ফলে অচিরেই বিশ্ববাজারে দেশের আম রপ্তানির পথ সুগম হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে পারলে আম চাষিরা ভালো দাম পাবেন, পোস্ট হারভেস্ট লস কমবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাজারেও আরও নিরাপদ ও রোগজীবাণুমুক্ত আম পাওয়া যাবে।’
সভায় জানানো হয়, বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশে বছরে আমের উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ টন। আম পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদন পর্যায় আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার না করায় উৎপাদিত আমের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১ দমমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আম রপ্তানি বাণিজ্য হয়। আর বাংলাদেশ থেকে ২০১৮-১৯ সালে ৩১০ টন, ২০১৯-২০ সালে ২৮৩ টন, ২০২০-২১ সালে ১৬৩২ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে।
আম উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে থাকলে রপ্তানিতে শীর্ষ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভবনা রয়েছে।এর মধ্যে ইংল্যান্ড, জাপান, রাশিয়াসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। বিশ্বে ২১ জাতের আম রপ্তানি হয়ে থাকে, যার অনেকগুলোই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭২ জাতের আম উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে জনপ্রিয় জাতগুলো হলো- খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা ও আম্রপালি ইত্যাদি। এর মধ্যে বাংলাদেশের দু’টি জাত (খিরসাপাত, ফজলি) জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আমের রপ্তানি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এর মধ্যে ৪৭ কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে (২০২২-২৭)। এর মাধ্যমে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান আম বাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার (প্রুনিং ব্যাগিং ও বালাই ব্যবস্থাপনা) মানসম্মত আম উৎপাদন। কৃষক, রপ্তানিকারক, বাজারজাতকারী, আম পরিবহন ও কার্গো ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের প্রশিক্ষণের কাজ চলছে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থা প্রধান, আম চাষি, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এমএএইচ/জেআইএম