ঈদবাজার
মানুষ খাবে নাকি নতুন কাপড় কিনবে, প্রশ্ন ব্যবসায়ীর
বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। পরিবার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় ঈদে নতুন কাপড় অনেকের কাছেই বিলাসিতা বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রশ্ন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে এখন মানুষ খাবে নাকি নতুন কাপড় কিনবে?
রাজধানীর চকবাজারের হাজি ভবনের বদর ব্রাদার্স অ্যান্ড কোংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. মনির হোসেন বলেন, আগে শবে-বরাতের রাত থেকে চকবাজারে ঈদের নতুন জামাকাপড় পাইকারি বিক্রি শুরু হতো। এবার রমজান চলে যাচ্ছে, কিন্তু বাজারে পাইকারের দেখা নেই। খুচরা বেচাবিক্রিও কম। আর ক্রেতা আসবেইবা কীভাবে? বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে পরিমাণ ঊর্ধ্বগতি, এখন মানুষ খাবে নাকি নতুন কাপড় কিনবে? ঈদে নতুন কাপড় অনেকের কাছে বিলাসিতা।
আরও পড়ুন: ফের বেড়েছে চিনি-ব্রয়লার মুরগির দাম
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন তিনি। মনির হোসেন জানান, তার এ দোকানের বয়স প্রায় ৯০ বছর। এ দীর্ঘ সময় তার দাদা এবং বাবা দোকানটি পরিচালনা করতেন। গত এক দশক ধরে তিনি নিজেই ব্যবসার হাল ধরেছেন।
মনির হোসেন আরও বলেন, দোকানে ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মূল্যের লুঙ্গি আছে। আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা লুঙ্গি নিয়ে যেতেন। এখন দূরের ক্রেতা আর তেমন দেখা যায় না। পুরান ঢাকার পরিচিত ক্রেতারাই আসেন। পাইকারি বিক্রি নেই।
বাচ্চাদের জামাকাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছে চকবাজারের আফিফা ফ্যাশন। এ দোকানে ছেলেদের প্যান্ট, টি-শার্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, পাজামা সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। একই সঙ্গে মেয়েদের নানা ধরনের পোশাক রয়েছে এখানে। কিন্তু দোকানে বেচাকেনা তেমন দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: আল্লাহ বাঁচিয়েছে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হয়নি
আফিফা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মো. নিয়াজ জানান, তার দোকানের অধিকাংশ জামাকাপড় পুরান ঢাকার উর্দু রোডের গার্মেন্টসে তৈরি। সেখান থেকে ভালো মানের জামাকাপড় তারা কিনে আনেন। ঈদের আগে পাইকারি বিক্রি করেন। কিন্তু এবার পাইকারি বিক্রি কম। তবে ১০ রমজানের পর থেকে খুচরা বিক্রি বেড়েছে। যদিও পাইকারি দোকানে খুচরা বিক্রি শুভ নয় বলে মনে করেন তিনি।
সালমান ফ্যাশনে ছেলে-মেয়েদের জামাকাপড় বিক্রি করছেন নিজাম উদ্দিন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, দোকানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পোশাক রয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের জন্য চারশ টাকায় থ্রিপিস বিক্রি করছি। কিন্তু তারপরও ক্রেতা পাচ্ছি না। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আগেতো খেতে হবে, তারপর নতুন জামাকাপড়।
৬৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি বিক্রি করছে ‘আবুরু পাঞ্জাবি’। দোকানটির বিক্রয়কর্মী রুবেল রানা জাগো নিউজকে জানান, শত ডিজাইনের পাঞ্জাবি তাদের দোকানে রয়েছে। কিন্তু দোকান অনুযায়ী বিক্রি নেই। সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজার টাকার জামাকাপড় বিক্রি হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এটা অনেক কম।
আরও পড়ুন: সবজিতে মিলছে না হিসাব
রুবেল রানার সঙ্গে যখন জাগো নিউজের প্রতিবেদকের কথা হচ্ছিল তখন ওই দোকানে পাঞ্জাবি দেখছিলেন যশোরের পাইকারি ক্রেতা হাসিব। তিনি বলেন, রমজানের আগে অল্প কিছু মালামাল নিয়েছিলাম। সেগুলোর বিক্রি শেষ পর্যায়ে। এখন ঈদের আগ মুহূর্তে বিক্রি বাড়তে পারে। তাই আরও কিছু পাঞ্জাবি দেখছি।
এমএমএ/কেএসআর/জিকেএস