তালতলা মার্কেটে বেশি চাহিদা ছোটদের পোশাকের
মধ্যবিত্ত আর গরিবের নিউমার্কেট খ্যাত রাজধানীর তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট। বছরের প্রায় সময়ই ক্রেতাসাধারণের পদচারণায় মুখর থাকে মার্কেটটি। রমজানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে রোজায় অন্য দিনের চেয়ে বিক্রি বাড়লেও অন্য ঈদের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ মার্কেটে এখন পর্যন্ত সেসব পণ্যের চাহিদা বেশি তার মধ্যে রয়েছে ছোটদের রেডিমেড পোশাক, জুতা, জুয়েলারি আর কসমেটিকস।
তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এবার সব পণ্যের দাম বেড়েছে, এতে ক্রেতারা কিনতে সাহস করছেন না। শেষ মুহূর্তে অনেক সময় ছাড় দেওয়া হয়। অনেকেই সেই ছাড়ের অপেক্ষায় আছেন।
রোববার (৯ এপ্রিল) ১৭ রোজার দিনে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এ মার্কেটে কথা হয় আপন ফ্যাশনের সেলস এক্সিকিউটিভ সাকিবের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারের ঈদ বেচাকেনা খুব ভালো, তেমন বলা যাবে না। কারণ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেচাকেনা বেশি হলেও অন্যান্য ঈদের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম। যা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে বাচ্চাদের পোশাকই বেশি।’
আরও পড়ুন>> ভরা মৌসুমে ক্রেতাশূন্য নান্নু মার্কেট
একই কথা জানান জান্নাত ফ্যাশনের মো. রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘এবছর ক্রেতাদের কাছে টাকা-পয়সা বেশি নেই। তাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যোর দাম বেড়েছে, এতে কেনার আগ্রহ কমে গেছে অনেকের। আবার মালের দাম ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে এবার। অনেকেই শেষ সময়ের ছাড়ের জন্য অপেক্ষা করেন। চাঁদরাতেও বিক্রি হয়।’
সেখানে তাসনিন তানিশা নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার সবকিছুর বাড়তি দাম। ইফতার বাজার থেকে রাতের খাবার বা ওষুধে...। খরচা বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই টাকা কম আছে ক্রেতার কাছে। এ কারণে মার্কেটমুখী হচ্ছেন না অনেকে। আমরা নিজেদের জন্য কিছু কিনছি না, তবে বাচ্চার জন্য কিনতেই আজ মার্কেটে আসা।’
এ মার্কেটে এবার বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক এসেছে। ১৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এসব পোশাক। এর মধ্যে জিরো সাইজের বাচ্চার (নবজাতক) বিভিন্ন ফ্রগ এসেছে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। ছোটদের সারারা-গারারা পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। বড়দের এ পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন সাইজের গেঞ্জি সেট পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া মেয়েদের প্লাজো পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, ছোটদের প্লাজো ১৫০ টাকার মধ্যে। বড়দের এক পিস কামিজ (ওয়ান পিস) পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বিভিন্ন থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া মার্কেটের সামনে লটের মাল বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। সেখানে ছোটদের পোশাক মিলছে ১০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়, থ্রি-পিস রয়েছে ৩৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এক পিস কামিজ রয়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> শপিংমল ক্রেতাশূন্য, জমজমাট ফুটপাত
তালতলা মার্কেটে বিক্রি বেড়েছে জুতা ও জুয়েলারি পণ্যের। জুতার মধ্যে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নাগড়া, স্টোন নাগড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাচের নাগড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, স্লিপার ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং হিল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ছোটদের বিভিন্ন জুতা পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া বড়দের বিভিন্ন জুতা পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
জুতা বিক্রেতা মো. রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্রেতা আসছে, বিক্রিও ভালো। ইফতারির পর ক্রেতা সমাগম বাড়ে।’
সেখানে মার্কের স্লিপার জুতা কিনতে এসেছেন কলেজশিক্ষার্থী জেসমিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দিনের বেলায় ক্রেতা কম থাকায় জুতা কিনতে এসেছি। সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ায় দরদাম করার সুযোগ থাকে না, আবার পছন্দমতো কেনাও কষ্টকর।’
এবার দাম কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতবারের তুলনায় বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। নতুন নতুন পণ্যও এবার বেশি এসেছে।’
এ মার্কেটে জুয়েলারি আইটেম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে টপ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, চুড়ি ৮০ থেকে ২৫০ টাকা, মালা রয়েছে ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামের। এছাড়া কানের রিং ৯০ থেকে ১৫০ টাকা, দুল ও ঝুমকা পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
জুয়েলারি বিক্রেতা রাজু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি বেড়েছে তবে অন্য ঈদের তুলনায় একেবারে কম। বলা যায় অর্ধেকে নেমেছে বিক্রি। তবুও ক্রেতা আসছে, বিক্রি করছি, সামনের দিনগুলোর অপেক্ষায় আছি। রাতের দিকে ক্রেতা সমাগম মোটামুটি বাড়ে, দিনের বেলায় ফাঁকা থাকে মার্কেট।’
আরও পড়ুন>> ডিএনসিসি হলিডে মার্কেটে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা
ঈদের সময় আত্মীস্বজনের আগমন ঘটে বাসাবাড়িতে। ঈদকে ঘিরে অনেকেই ঘর সাজান ফুল দিয়ে, বিশেষ করে কৃত্রিম ফুল দিয়ে। অন্যান্য কেনাকাটার সঙ্গে এ মার্কেট থেকে কৃত্রিম ফুল ও স্টিক কিনছেন অনেকেই। এ মার্কেটে বিভিন্ন ফুলের তোড়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আর ক্যান্ডি স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
এসব আইটেমের সম্পর্কে কথা হয় গিফট ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার পারভেজের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগে আগে কেনাকাটার সঙ্গে কৃত্রিম অনেক আইটেম কেনেন ক্রেতারা। বাসার সৌন্দর্য বাড়াতে এসব পণ্য কেনেন তারা।’
বিক্রি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্কেটের অন্যান্য পণ্য বিক্রির সঙ্গে আমাদের পণ্য বিক্রির মিল থাকে এসময়। মার্কেটে ক্রেতা সমাগম বেশি হলে আমাদের এখানেও বিক্রি বাড়ে। তবে এবার বেচা-বিক্রি অনেক কম।’
ইএআর/ইএ/জিকেএস