ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

‘কর বৈষম্য নয়, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রণোদনা চাই’

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০২৩

আর মাস দুয়েক পরেই উত্থাপিত হবে নতুন (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেট। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনী বছরে বর্তমান সরকার উত্থাপন করবে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট। একদিকে বিশ্ব অর্থনীতির টানাপোড়েন, অন্যদিকে দেশের বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আগামী বাজেট কেমন হবে ও কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে কৌতূহল সবার মনে।

বাংলাদেশের প্রধান কৃষিপণ্য ধান। রাইস মিল সরাসরি কৃষি ও কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বড় বড় শিল্পগ্রুপ চালের ব্যবসা শুরু করায় ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ছোট বা পাঁচ কোটি টাকার কম মূলধন আছে এমন চালকলগুলো। ১০ থেকে ১২ হাজার চালকল বিলীন হওয়ার পথে। আগামী বাজেটে তাই চালকলগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা চাইছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে নিজের ভাবনা ও বাজেট প্রস্তাবনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফুল হক মিঠু।

আরও পড়ুন>> ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: সিপিডি

জাগো নিউজ: চালকল কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যবসা করছে।

সহিদুর রহমান: আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বড় পুঁজির কোম্পানির বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতার কাছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চালকলগুলো আজ অনেকটাই হুমকির মুখে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বৈষম্যের পাশাপাশি অনেক চালকল রুগণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। যাদের বিনিয়োগ পাঁচ কোটি টাকার নিচে তারা বিলীন হয়ে যাচ্ছে, প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। যে কারণে চালের বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর। দেশে প্রায় ১৫ হাজার চালকল, পাঁচ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে দেড় হাজারেরও বেশি চালকলের। ক্ষুদ্র মিলগুলো ১০-১২ হাজার, এরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। অনেকেই এ ব্যবসা থেকে সরে আসছে।

জাগো নিউজ: এক্ষেত্রে বাজেটে কী ধরনের সহায়তা প্রত্যাশা করছেন?
সহিদুর রহমান: ছোট মিলগুলোকে বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সেটা কয়েকভাবে করা যায়। একটা হলো পাঁচ কোটি টাকার নিচে যাদের কর অব্যাহতি, ব্যাংকঋণে সুদের হার কমানো ইত্যাদি সুবিধা দেওয়ার প্রত্যাশা করছি। প্রায় ১০ হাজার রুগণ রাইস মিলের উন্নয়নের জন্য স্বল্প সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাইছি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকঋণে সুদের হার কমানোর বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?

সহিদুর রহমান: কৃষককে দুই শতাংশ ইন্টারেস্টে কৃষিঋণ দেওয়া হয়। করপোরেট লেভেলে দেয় ৯ শতাংশ হারে। উদ্বুদ্ধ করতে ঋণের এই রকমফের। সরকার চাইলেই পারে, যাদের পাঁচ কোটি টাকার নিচে বিনিয়োগ তাদের কাছ থেকে ৯ শতাংশের জায়গায় ৪ শতাংশ বা তারও কম হারে সুদটা নিতে পারে। একইভাবে যাদের পাঁচ কোটি টাকার নিচে বিনিয়োগ তাদের করের হার কমিয়ে দিতে পারে। এমন সুবিধা দিয়ে সরকার যদি ছোট মিলগুলো টিকিয়ে রাখে তাহলে ধান-চালের বাজার বিস্তৃত হবে। সেটা হলে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, চালের মূল্য নিম্নমুখী রাখা সম্ভব।

জাগো নিউজ: আগামী বাজেটে কী ধরনের নীতি সহায়তা প্রত্যাশা করছেন?

আরও পড়ুন>> সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি

সহিদুর রহমান: রাইস মিলগুলো পুনঃজীবিত করে ভোক্তাদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাল সরবরাহ বা বিপণন করার লক্ষ্যে আমাদের এই শিল্পের জন্য ১০ কোটি টাকার নিচে মূলধন রাইস মিলের ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরের কর অব্যাহতির প্রত্যাশা করছি। বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ধান উৎপাদন অনেক বেড়েছে, ধানের মূল্যও বেড়েছে। একই সময়ে বিদ্যুতের ইউনিট মূল্যও বেড়েছে, রাইস মিলের কাঁচামাল, ধান, প্রভৃতির মূল্য বাড়ার কারণে উৎপাদনের গ্রস প্রফিট অনেক কমেছে। বর্তমানে সেটা ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে এসেছে।

আরও পড়ুন>> চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক বাজেট সহায়তা কমছে: সংসদে অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চালকলের গ্রস প্রফিট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্নভাবে ধরে। আমাদের প্রস্তাব হলো সব জেলায় একই রকম বা ৫ শতাংশ করা হোক। এই চালকল বা রাইস মিল শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্নভাবে কর নির্ধারণের নিয়ম না করে একই নিয়মে করার অনুরোধ করছি। এখানে আমরা কর বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছি।

জাগো নিউজ: সেটা কীভাবে?
সহিদুর রহমান: কর যখন নির্ধারণ করে কোথাও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে ধরে, কোথাও গ্রস প্রফিটের ওপর আবার কোথাও এই দুটির কোনোটাই ধরে না। সেখানে লেনদের ওপর কর নির্ধারণ করা হয়। তিন ধরনের পদ্ধতি চাই না। একটাই চাই গোটা বাংলাদেশে। একেক জায়গায় একেক নীতি চলছে, এটা ঠিক নয়।

জাগো নিউজ: এই ব্যবসার আকার কত?

সহিদুর রহমান: দেশে ১৪-১৫ হাজার চালকলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০-৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ধান থেকে শুরু করে চাল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয় এ ব্যবসায়।

জাগো নিউজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সহিদুর রহমান: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এসএম/এএসএ/জেআইএম