গভীর সমুদ্রবন্দর
আঞ্চলিক হাব হবে মাতারবাড়ি, বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি
দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়িতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে লবণ চাষের জন্য খ্যাত এ ইউনিয়নে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বন্দরটির কর্মকাণ্ড। ২০২৬ সালে চালু করা গেলে এই সমুদ্রবন্দর হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক হাব। ভিড়বে মাদার ভেসেল। বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের হাতছানি নিয়ে বদলে দেবে গোটা দেশের অর্থনীতি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাতারবাড়ি বন্দর হলে সেখানে সাড়ে ১৮ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো বন্দরে এ ধরনের মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) ভেড়ার মতো সমুদ্রবন্দর নেই। তাই এ বন্দরটি হয়ে উঠবে আঞ্চলিক হাব। বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
আরও পড়ুন>> মাতারবাড়ি সংযোগ সড়ক/কাজ কমলেও বাড়ছে ব্যয়, জাইকার ঋণ দাঁড়ালো ৭৯১ কোটি
মাতারবাড়ির অবস্থান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৫ কিলোমিটার (৩৪ নটিক্যাল মাইল) দূরে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাদার ভেসেল হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা নেই। লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পন্য খালাস করতে হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য পাঠাতে হয় সিঙ্গাপুর কিংবা অন্য বন্দর হয়ে। মাতারবাড়ি হলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় ও ব্যয় দুটোই কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দরের কারণে বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, মাতারবাড়ি বন্দরের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে বন্দরের চ্যানেল প্রস্তুত। প্রথম পর্বে জেটি, টার্মিনাল নির্মাণ, বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জাহাজ কেনার কাজ চলমান। দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বন্দরকে যুক্ত করতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজও।
সরেজমিনে মাতারবাড়ি পরিদর্শনে চট্টগ্রাম বোটক্লাব জেটি থেকে সকাল ১০টায় কোস্ট গার্ডের জাহাজে রওনা হয়ে মাতারবাড়ি পৌঁছাতে লাগে দুই ঘণ্টা। সমুদ্রের মধ্যে বয়াবাতি দিয়ে চিহ্নিত করা আছে চ্যানেলের শুরুটা। এরপর এগোলে চোখে পড়ে দুপাশে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধ (ব্রেক ওয়াটার)। উত্তর পাশের বাঁধ ধরে এগোলো অস্থায়ী জেটি। দক্ষিণ পাশের বাঁধের দিকে হবে মাতারবাড়ি বন্দর।
আরও পড়ুন>> মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র/জুনে পরীক্ষামূলক উৎপাদন, ডিসেম্বরে পুরোদমে চালু
অস্থায়ী জেটিতে নেমে পূর্বদিকে এগোলে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানেই চ্যানেলটি শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনেই কয়লার জাহাজ ভেড়ার জেটি। বাঁক নিয়ে পশ্চিম দিকে গেলেই বন্দর এলাকা শুরু। এখনো জায়গাটি লবণ উৎপাদনের ক্ষেত। প্রথমপর্বে যেখানে দুটি জেটি নির্মাণ করা হবে, সেই স্থানটি লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
পূর্বদিকে বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা ও টাউনশিপের কাজ। মাতারবাড়ি, মহেশখালী ও চকরিয়া এলাকা নিয়ে জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে বন্দরের সংযোগ সড়কের কাজও চলছে পুরোদমে।
কতটা এগোলো বন্দরের কাজ
মাতারবাড়ি বন্দর ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বন্দরের জন্য ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি এবং সড়কের জন্য ব্যয় হবে ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। ১২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা দেবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। বাকি টাকা সরকারের তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
বন্দর নির্মাণের কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে মাতারবাড়ি বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে পরিচালিত হবে। আর সংযোগ সড়কের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সার্বিকভাবে কার্যক্রম তদারকি করছে জাইকা।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশের প্রকল্প পরিচালক মীর জাহিদ হাসান বলেন, ‘যেখানে জেটি হবে, সেখানে লাল পতাকা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। পুরো জায়গাটা ড্রেজিং করা হবে। বন্দর নির্মাণে তিনটি ক্রয় কার্যক্রম হবে। সিভিল প্যাকেজের মাধ্যমে জেটি টার্মিনাল ইয়ার্ড এবং আনুষঙ্গিক ভবনাদি নির্মাণ হবে। প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে আমরা কার্গো হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি কিনবো। এর মধ্যে কি-গ্যান্টি ক্রেইন রয়েছে দুটি। মাল্টিপারপাস গ্যান্টিক্রেন আছে একটি, রাবার টায়ার্ড গ্যান্টিক্রেন ছয়টি, রিচ স্ট্যাকার দুটিসহ অন্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। প্যাকেজ-২বি’র মাধ্যমে আমরা কয়েকটি বোট কিনবো। এর মধ্যে রয়েছে সার্ভে বোট, পাইলট বোট ও টাগবোট।’
তিনটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিভিল প্যাকেজের কারিগরি মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। পাঠানো হয়েছে জাইকার অনাপত্তির জন্য। প্যাকেজ-২এ’রও কারিগরি মূল্যায়ন শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২বি’র প্রথমবার আমরা কোনো দরপত্র পাইনি। পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি এপ্রিলের ১৭ তারিখ এর ড্রপিং হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘মাতারবাড়িটা মূলত লবণের মাঠ ছিল। সেখান মানুষকে উচ্ছেদ করে বন্দর করতে হচ্ছে এমন নয়। মাত্র ৪০টি বাড়ি পড়েছে। তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন>> মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন সহজ করেছে বিদ্যুৎ প্রকল্প
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবেচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ, এক্ষেত্রে সেটি নেই। নির্ধারিত সময়ই এটি চালু হবে। এরই মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দরের ডিটেইল ডিজাইন হয়ে গেছে। ভূমি রি-সেটেলমেন্টের ইস্যুগুলোও নিষ্পত্তি হয়েছে।’
‘প্রথম পর্যায়ে ৭০০ মিটারের দুটি জেটি হবে। একটি টার্মিনাল হবে। প্রতিটি জেটিতে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। ২০২৬ সালের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে দুপাশে চারটি করে আরও আটটি জেটি হবে।’
বন্দরের ১৪ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চ্যানেল হয়ে গেছে জানিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, ‘চ্যানেলটি সাড়ে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত। গভীরতা হবে সাড়ে ১৮ মিটার। কুতুবদিয়া চ্যানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে চ্যানেল শুরু হয়েছে। চ্যানেলের দুপাশে ব্রেক ওয়াটার (প্রতিরক্ষা বাঁধ) রয়েছে। উত্তর পাশে ৩ হাজার ৭০০ মিটার ও দক্ষিণ পাশে ২ হাজার ৬০০ মিটার।’
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) পাঁচ হাজার একর জায়গা নিয়েছে। বন্দরের জন্য এক হাজার ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সড়ক অংশের প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে মাতারবাড়ি বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সংযোগ সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। রাস্তা হবে চার লেনের। ২৭ কিলোমিটারকে তিনভাগে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করেছি। তিনটি প্যাকেজে মোট সেতু রয়েছে ১৪টি, এর মধ্যে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস।’
দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়নের পর তা জাইকার কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘প্রকল্পের (সড়ক) মোট খরচ ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ৬ হাজার ১৫০ কোটি এবং সরকার দেবে ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। আমরা আশা করছি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে ফেলতে পারবো।’
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ২০২৬ সালে মাতারবাড়ি বন্দরের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। শুরু করার প্রক্রিয়াগুলো এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তা আছে। এটা প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকেই বলছেন। আমাদের বিশাল সামুদ্রিক অঞ্চল ব্যবহার করতে পারছি না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে এ সমুদ্রসীমানাকে কাজে লাগাতে হবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এখন দৃশ্যমান। আঞ্চলিক অন্য দেশও এ বন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে।’
সম্ভাবনার হাতছানি
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘মাতারবাড়ি চালু হলে জাহাজ ভাড়া তিনভাগের একভাগে নেমে যাবে। এটা হাব হলে এখান থেকে নতুন একটা সার্ভিস চালু হবে। সেটা হলো ফিডার সার্ভিস বিটুইন মাতারবাড়ি-পায়রা, মাতারবাড়ি-চট্টগ্রাম, মাতারবাড়ি-মোংলা অর্থাৎ, মাতারবাড়ি থেকে অন্য আঞ্চলিক বন্দরগুলোতে। যে পণ্যের জন্য আগে তিন হাজার ডলার ভাড়া লাগতো, মাতারবাড়ি হলে তা এক হাজারে নেমে যাবে।’
এখন প্রতিবছর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আকার ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর ১২ শতাংশও যদি ভাড়া ধরি সেক্ষেত্রে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভাড়ায় যায়। এ বন্দরটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে, আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে। আমাদের রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
আরও পড়ুন>> মাতারবাড়ী ‘গভীর সমুদ্রবন্দরে’ ভিড়ল প্রথম জাহাজ
‘কোথাও আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট চার্জ দিতে হবে না। স্বনির্ভর হবো। এখন ইউরোপে পণ্য পাঠাতে সিঙ্গাপুরে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ১৪ দিন পথেই চলে যায়। মাতারবাড়ি চালু হলে সেটা আর থাকবে না।’
বিভিন্ন দেশে সরাসরি পণ্য পৌঁছানো গেলে সময় ও ব্যয় দুটোই কমবে জানিয়ে শাহজাহান বলেন, ‘তখন আমরা অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবো। সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে পারলে আমরা আরও বেশি অর্ডার পাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন কনটেইনার যখন চট্টগ্রাম বন্দরে আসে তখন চারদিন ফ্রি থাকে। এরপর ডিটেনশন চার্জ আরোপ করা হয়। সেটা আমরা পাই না, সেটা পায় এমএলওরা। জাহাজের ফিক্সড অপারেটিং কস্ট পায় ফিডার ভেসেল অপারেটরা। আমি যখন মাদার ভেসেল এখানে আনবো, তখন বেশি জাহাজও লাগবে না, জাহাজের সময়ও লাগবে না। সরাসরি জাহাজ আসবে, সরাসরি চলে যাবে। ডিটেনশন চার্জ ও ফিক্সড অপারেটিং কস্টের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে আমাদের।’
প্রকল্প পরিচালক মীর জাহিদ হাসান বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প শেষ হলে আমরা আশা করছি ২০২৬ সালের পর দশমিক ৬ থেকে এক দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) পণ্য আনতে সক্ষম হবো প্রতি বছর। ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের টার্গেট ১ দশমিক ৪ থেকে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন টিইইউএস আনা সম্ভব হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান বলেন, ‘২০২৬ সালে এ বন্দর চালু করতে পারলে আমাদের সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো হাব পোর্টের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এখান থেকে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চলে যেতে পারবে। এতে আমাদের রপ্তানি খরচ অনেক কমে যাবে, কারণ সময় অনেক কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সিতুই, কলকাতার হলদিয়া, ভাইজাক, আন্দামানসহ বঙ্গোপসাগরের এ বেল্টে কোনো বন্দরে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে না। এখানে যদি এ বন্দর হয়, এটি এখানকার রিজওনাল হাব হতে পারে।’
‘মাতারবাড়িতে বন্দর করতে যে বিনিয়োগ করা হবে তা ৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে ফেরত আসবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর প্রতি বছর ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা নিট লাভ করে। মাতারবাড়ি বন্দর অবকাঠামো নির্মাণে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। সেটা ৭-৮ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। প্রতি বছর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে।’
এখন বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় কোনো পণ্য যেতে ৪৫ দিন লাগে জানিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, ‘মাতারবাড়ি থেকে সরাসরি যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৩ দিন। সময় কমলে খরচ কমবে। সবকিছু মিলিয়ে যদি বলি তাহলে মাতারবাড়ি প্রতি বছর আমাদের পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তখন কলম্বো ও সিঙ্গাপুরের বন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবো। বঙ্গোপসাগরের উত্তর বেল্টে যারা আসবেন তাদের অপশন একটাই, মাতারবাড়ি। কারণ আশপাশের কোনো বন্দরে এত বড় জাহাজ হ্যান্ডেল করতে পারে না। ভারত, নেপাল, ভুটানকে এ বন্দরকে ব্যবহার করতে হবে। কলকাতার হলদিয়া বন্দরে মাত্র সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। খরচ যেখানে কম হবে স্বাভাবিকভাবেই সবাই সেখানে যাবে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মাতারবাড়ি বন্দর হলে আমাদের সময় ও ব্যয় কমে যাবে। এটা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। এখানে লবণ ক্ষেত ছিল। এখানে একটা স্মার্ট নগরী ও স্মার্ট বন্দর হচ্ছে। এখানকার স্মার্টনেস সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে যাবে।’
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘এখানে আমরা লবণ চাষ করতাম, চিংড়ি উৎপাদন করতাম। এখন এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের পাশাপাশি পেশার পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে এখানে সম্ভাবনা রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দরসহ ইকোনমিক জোন, পাওয়ার হাবসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো হচ্ছে। কারিগরি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় করার চেষ্টা করছি। মানুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।’
‘এসব প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ বা হতাশা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পর তিনি বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কারণে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পাচ্ছি। লোকজন একটা পর্যায় থেকে আরেকটা পর্যায়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে তারা নিজেদের অভ্যস্ত করে নিচ্ছে।’
সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ আরও বলেন, ‘এখানে কর্মসংস্থানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, যারা বেড়িবাঁধের ওপর ছিন্নমূলভাবে ছিল, তাদের সবাইকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেটি এখনো চলমান।’
আরএমএম/এএসএ/এএসএম