আগ্রহ হারানোর শীর্ষে গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড
গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় ছয়গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের। এতে সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এ পতনের বাজারে দাম কমার তালিকায় নেতৃত্ব দিয়েছে ‘আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড’।
গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ স্থানটি দখল করে এ মিউচ্যুয়াল ফান্ডটি। বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডটির ইউনিট কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার শীর্ষস্থানটি দখল করেছে গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
গত সপ্তাহজুড়ে ফান্ডটির দাম কমেছে ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি ইউনিটের দাম কমেছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে মিউচ্যুয়াল ফান্ডটির ইউনিটের দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা।
মূলত ফান্ডটির ঘোষণা করা লভ্যাংশে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হওয়ায় এ দরপতন হয়েছে। গত বুধবার ফান্ডটির ট্রাস্টি ডিএসইর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য ১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন>> মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সময় এখন: বিএসইসি চেয়ারম্যান
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর এটিই মিউচ্যুয়াল ফান্ডটির প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা। নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করায় বুধবার ফান্ডটির ইউনিটের দাম এক ধাক্কায় ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ৩ টাকা কমে যায়। তবে, পরের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ফান্ডটির দাম ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়ে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল রূপসী বাংলায় এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। ওইদিন ‘ঘণ্টা বাজিয়ে’ ফান্ডের লেনদেন শুরুর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে ফান্ডটির লেনদেন শুরু হয়।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএল) এবং আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের জন্য এ মিউচুয়াল ফান্ডটি চালু করে।
আরও পড়ুন>> গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০০ কোটি টাকা। ফান্ডটির উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএল) ৫০ কোটি টাকা এবং আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইসিবি এএমসিএল) ২০ কোটি টাকা দিয়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টের ৫ কোটি টাকা দেয়। বাকি ২৫ কোটি টাকা সব বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। যা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। ফান্ডটির ইউনিট প্রতি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আসা হয়। গত বছরের ৩১ মার্চ সিএমএসএফ ফান্ডের ট্রাস্ট ডিড এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা চুক্তির বিষয়ে বিএসইসি অনুমোদন দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১১ এপ্রিল একটি ট্রাস্ট চুক্তি সই হয়। ‘আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড’র স্পন্সর হয় ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে আছে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া ফান্ডটির কাস্টোডিয়ান হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ও ট্রাস্টি হিসেবে বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে।
অন্যদিকে, দাম কমে যাওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডটি কিনতে খুব একটা আগ্রহী হননি। ফলে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পরেই গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় ছিল ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন। সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম কামার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস।
এছাড়া গত সপ্তাহে দাম কমার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- ওরিয়ন ইনফিউশনের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ, ই-জেনারেশনের ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, বিডি থাই ফুডের ৭ দশমিক ৭৯ শতংশ এবং জেনেক্স ইনফোসিসের ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ দাম কমেছে।
এমএএস/এমএএইচ/এএসএম