ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

রাজস্ব সম্মেলন

ব্যবসায়ীদের তোপে এনবিআর, করজাল বাড়ানোর দাবি

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সদ্য শেষ হলো প্রথমবারের মতো আয়োজিত রাজস্ব সম্মেলন। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নেন সারাদেশের রাজস্ব বোর্ডের তিন উইং আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কের কর্মকর্তারা। দুদিনে তিনটি সেশনে কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক নিয়ে সভা-সেমিনার করে রাজস্ব বোর্ড। উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এক প্ল্যাটফর্মে নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের সবাইকে পেয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের হয়রানির কথা জানিয়ে তুলে ধরেন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া।

ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে এনবিআর
সম্মেলনের প্রথম দিন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী এবার শুল্ককর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি জেলা শহরের এক ব্যবসায়ীর চার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়লেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। উল্টো পরে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘বিশেষ লেনদেন’ করে পুরো বিষয়টির সুরাহা করা হয়। এতে সরকারের অন্তত চার কোটি টাকার ভ্যাট হাতছাড়া হয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে ওইদিন ‘জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ভ্যাট আদায়ে এ অনিয়মের কথা তুলে ধরেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

আরও পড়ুন>> রাজস্ব সম্মেলন এনবিআরের একটি চমৎকার উদ্যোগ: প্রধানমন্ত্রী

করজালের আওতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ছয় কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। কিন্তু ৭০ লাখ মানুষও ট্যাক্স দিচ্ছে না। বেশি রাজস্ব আদায় করলে বা ভ্যাট ফাঁকি বের করলে কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। কিন্তু যারা বেশি রাজস্ব দেবে সে সব ব্যবসায়ীদেরও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দিলে কর দেবে না কেন।

1.jpg

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রথম সভায় ‘আয়কর ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আয়করের ভূমিকা’ এবং ‘আয়কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে ব্যবসায়ী আকবর আলী ফের রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমার আয় ফিক্সড। বিভিন্ন কোম্পানি ডিভিড্যান্ড দেয় আর বাড়িভাড়া পাই। তারপরেও ওনারা এগুলো অ্যাকসেপ্ট করেন না। এটা নাই ওটা নাই বলে অ্যাসেসমেন্ট করে। এটা স্বচ্ছ করতে হবে। স্বচ্ছ না হলে যারা ট্যাক্স দেয় তাদের প্রতি জুলুম হচ্ছে। যারা দিচ্ছে না তারা অনেক ভালো আছে। অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে রাজস্ব বোর্ড বড় অংকের কর থেকে বঞ্চিত হয়।

আরও পড়ুন>>রাজস্ব মিউজিয়ামে ইতিহাসের দর্শন

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, করের হার নয়, করদাতার সংখ্যার মধ্য দিয়ে কর আহরণ বাড়াতে হবে। রাষ্ট্র আমাদের যেসব সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেসব সেবা দিতে হলে বাড়াতে হবে কর আহরণ।

স্বতন্ত্র রাজস্ব বিভাগ গঠন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জোর

অনুষ্ঠানের প্রথম দিন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একীভূত করে স্বতন্ত্র রাজস্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারটের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রতিটি জেলায় নিজস্ব ভবন ও খাগড়াছড়ির মতো দুর্গম এলাকাসহ সব জায়গা পৌঁছাতে রাজস্ব বোর্ডের পর্যাপ্ত লজিস্টিক সুবিধা দরকার।

জিডিপিতে অবদান রাখা ৫০ শতাংশ পণ্য ও সেবায় ভ্যাট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে কর–জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না।

‘জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ সেমিনারে তিনি আরও বলেন, আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এই পথপরিক্রমায় দৃশ্যমান হচ্ছে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং খুলে যাচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। জুলাই ২০১৯-এ নতুন ভ্যাট আইনটি কার্যকর করা এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ। এখন সময় এসেছে এ বিধি-বিধানগুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।

1.jpg

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (অব.) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাজস্ব বোর্ডের গবেষণা, পরিসংখ্যান ও আইসিটিতে বিনিয়োগ বাড়ালে সুফল আসবে।

আরও পড়ুন>> দেশের দৃশ্যমান উন্নতি অনেকেই স্বীকার করতে চান না: টিপু মুনশি

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, ভ্যাটের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের চর্চা খুব পুরোনো নয়। এটা ১৯৯১ সালে শুরু হয়েছে কিন্তু রাজস্ব আহরণের এই নতুন প্রক্রিয়া এরপর অনেক হোঁচট খেয়েছে। ভ্যাটের নেট বৃদ্ধিতে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ‘আয়কর ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন।

তিনি বলেন, কর জিডিপির অনুপাত এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না পৌঁছেনোর প্রধান কারণ সংকুচিত কর ভিত্তি। শিল্পোন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণসহ বিশেষ খাতগুলোকে স্বল্প করহার সুবিধা, কর অব্যাহতি এবং কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ায় কর ভিত্তি ২ দশমিক ২৮ শতাংশ সংকুচিত হয়ে গেছে।

করজাল বাড়াতে রাজস্ব বোর্ড কাজ করছে জানিয়ে দ্বিতীয় দিনের সভায় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর ধাপে ধাপে দক্ষতা, আইটিনির্ভর সক্ষমতা আনছে। দিন দিন এনবিআর অনেক বদলে যাচ্ছে। সামনের দিনে এনবিআর আরও বদলে যাবে, বদলে দেবে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিকেলে দ্বিতীয় সেশনে ‘কাস্টমস এর আধুনিকায়ন ও সংস্কার: ডিজিটাল কাস্টমস হতে স্মার্ট কাস্টমস’ শীর্ষক প্রবন্ধে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফয়জুর রহমান বলেন, স্বয়ংক্রিয়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিনির্ভর এবং নিরাপদ কাস্টমস মিলেই স্মার্ট কাস্টমস। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, বন্ড অটোমেশন, কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপন (বর্তমানে ৩০টি), ই-অকশন সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কাস্টমস তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে।

এসএম/এএসএ/এমএস