ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সাত মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল সঞ্চয়পত্র বিক্রি

প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিনিয়োগে খরা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা আর পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতার কারণে কয়েকবছর ধরেই সঞ্চয়পত্রের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহটা একটু বেশি। আর সঞ্চয়পত্রের বিক্রির এ উল্লম্ফন ভবিষ্যতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় কমানো হয়েছে এর সুদহার। তারপরও প্রতিমাসে বেড়েই চলেছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। যার ফলে সাত মাসেই ছাড়িয়েছে চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৬ হাজার ৬০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৬০২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল সরকারের।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৮৬৪ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৭০ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে এক হাজার ৯৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার

মাস

সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার (কোটি টাকায়)

জুলাই (২০১৫)

১,৯৭৬

আগস্ট (২০১৫)

২,৬৫১

সেপ্টেম্বর (২০১৫)

২,০৬৫

অক্টোবর (২০১৫)

২,২৫২

নভেম্বর (২০১৫)

২,৩৮২

ডিসেম্বর (২০১৫)

১,৯৭৯

জানুয়ারি (২০১৬)

৩,২৯৭

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৮ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্রে বিক্রি বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, অনিয়ম আর কারসাজির কারণে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যও তেমন ভালো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে চলছে বিনিয়োগ মন্দা। ফলে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েই আমানতে সুদহার কমিয়েছে। অন্যদিকে এখন সঞ্চয়পত্রে সুদহার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। যার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকেই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে।

ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করেন অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনো অন্য যেকোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে।’

উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ঋণের ভার কমাতে গত বছরের ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ করে কমায় সরকার। ২৩ মের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ৪৫ ও ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যেত। সুদের হার কমানোর পর এখন কেউ পাঁচ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনলে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে সুদ পাচ্ছেন। আর পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে সুদহার ঠিক করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় গত ছয় মাসে ব্যাংকখাত থেকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি, বরং পরিশোধ করেছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এতে সরকারে নিট ঋণের স্থিতি কমে ১ লাখ ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

এসআই/এনএফ/আরআইপি

আরও পড়ুন