মাতারবাড়ি সংযোগ সড়ক
কাজ কমলেও বাড়ছে ব্যয়, জাইকার ঋণ দাঁড়ালো ৭৯১ কোটি
সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহজে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন ও মেরামতের জন্য একটি সহযোগী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পে সড়ক নির্মাণ ও পুনর্বাসন এবং সাইট ফ্যাসিলিটি ও মেরামত কাজ কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে কাজ কমলেও প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়েছে। সঙ্গে বাড়ছে সময়ও।
প্রকল্পের বাড়তি এ ব্যয় মেটাতে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মূল প্রকল্পে জাইকার ঋণ ছিল ৫০৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে জাইকার ঋণ বাড়ছে ২৮৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জাইকা থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাড়তি ঋণের বিষয়টি নিশ্চিতও করেছে।
সংশোধিত এ প্রকল্পে মোট ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪ কোটি টাকা। একইসঙ্গে নতুন করে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মোট সময় বেড়ে ঠেকছে ৯ বছরে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা রয়েছে। ওই সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, প্রকল্পটিতে সড়ক নির্মাণকাজ তিন কিলোমিটার কমেছে। তবে ব্যয় বেড়ে গেছে ১০৪ কোটি টাকা। সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসনের কাজও কমেছে। তবুও সেখানে ব্যয় বেড়েছে পাঁচ কোটি টাকা। আর সাড়ে ১৯ কিলোমিটার জেনারেল সাইট ফ্যাসিলিটিজ ও মেরামত কাজ কমার বিপরীতে ব্যয় কমেছে মাত্র ১৬ কোটি। ফলে এক কিলোমিটার সড়কের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। এটিকে ‘অস্বাভাবি’ মনে করা হচ্ছে। ‘অস্বাভাবিক’ এ ব্যয়ের প্রস্তাবই একনেকে অনুমোদন হতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়লো
প্রকল্পটিতে মূল ডিপিপির তুলনায় জেটি নির্মাণে ৯৪ লাখ টাকা, সাইন, সিগন্যাল, গার্ড রেইল, পোস্ট ইত্যাদি নির্মাণে ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ব্রিজ (ফেল্ডার ও লাইটিং) নির্মাণে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বাঁধ নির্মাণে ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ইউটিলিটি স্থানান্তরে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ডিজাইন ও সুপারভিশনে পরামর্শক খাতে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, কর্মকর্তাদের বেতনে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা, এনজিও সার্ভিসে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ব্রিজ নির্মাণে ৪০ কোটি টাকা মূল ডিপিপির তুলনায় কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তির জন্য রিজার্ভ পেমেন্ট খাতে ২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, দুই কিলোমিটার কালভার্ট নির্মাণে সাত কোটি ১০ লাখ টাকা, ২২ মিটার রেগুলেটর বা ওয়াটার ইনলেট নির্মাণে ৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ৫৪ মিটার আরসিসি ব্রিজ নির্মাণে ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ি প্রকল্পে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা দিল জাইকা
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘এ প্রকল্পের পিইসি সভায় আগে যে এখানে সদস্য ছিলেন, তিনি এটি করেছেন। যেহেতু একনেকের জন্য সুপারিশ করেছেন, সেহেতু প্রস্তাব যৌক্তিক হওয়ায় সেটি অনুমোদন দিয়েছেন। তবে বেশকিছু অঙ্গ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। তার কারণে ব্যয়ও বেড়েছে।’
প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের জুনে প্রকল্পটি প্রথমে ৬০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে পাঁচ বছরের জন্য অনুমোদন পায়। তবে প্রকল্প শুরুর এক বছর না গড়াতেই ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু তাতেও সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় ব্যয় বাড়ানো ব্যতিরেকে সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। অর্থাৎ সময় বেড়ে প্রকল্পটি এখানেই শেষ হতে পারতো।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে খরচ বাড়ছে ১২ হাজার কোটি টাকা
তবে ২০২২ সালের জুনেও প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় কিছু খাত ও ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে দেখা যায়, মূল প্রকল্প প্রস্তাবের তুলনায় ৫৫ দশমিক ২৮ শতাংশ বায় বাড়িয়ে এক হাজার ২৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সময়ও চাওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯ বছরে।
প্রকল্পটির প্রায় পুরো অর্থায়নই জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার। দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেখা যায়, এতে জাইকার ঋণের পরিমাণ ৭৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মূল প্রকল্প প্রস্তাবে তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পটিতে জাইকার অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এমওএস/এএএইচ