ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে নতুন মুদ্রানীতি, উঠছে না সুদের হার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে বিশ্ব। এর ভয়াল থাবা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামাল দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

যদিও সংকট সমাধানে বাজারে নগদ ডলার সহায়তা দিয়ে তেমন কোনো ফল পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ নিয়ে শনিবার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসি নির্ধারণকারী কমিটির সঙ্গে তফসিলি ব্যাংক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়। বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। যদিও ব্যবসায়ীরা বিষয়টির বিরোধিতা করেন।

যদিও এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সভায় কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, ঋণে সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মতকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন গভর্নর। সেক্ষেত্রে আপাতত ঋণের বিপরীতে সুদের যে হার নির্ধারিত আছে তা ওঠানোর সম্ভবনা নেই।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মুদ্রানীতি ও সুদের হার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকারদের পক্ষে এবিবি ও বাফেদার চেয়ারম্যান সুদের হার তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি।

সুদের হার তুলে দেওয়ার যুক্তি হিসেবে সভায় এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন ও বাফেদার চেয়ারম্যান আফজাল করিম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সুদের হার তুলে দেওয়ার বিষয়ে বিরোধিতা করেন। ওই সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দেশীয় কারণে নয়, মূলত বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বাড়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ মুহূর্তে বাজার ভিত্তিক সুদের হার করলে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়বে, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। ব্যবসায়ীরাও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো আগামী মুদ্রানীতিতে প্রতিফলিত হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এ বিষয়ে করণীয় পদক্ষেপ নির্ণয় করা হবে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি এখন বিবেচনায় নাও আসতে পারে। গভর্নরের জন্য প্রথম মুদ্রানীতি একটু ব্যতিক্রম হতে পারে। তিনি অর্থ বিভাগের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে চান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, বৈঠকে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন। সুদের হার ছাড়াও তাদের দেওয়া পরামর্শের মধ্যে ছিল শরিয়া আইনে পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আমানতের অবস্থা, ডলারের একক রেট চালু করা, খেলাপি ঋণ কমানো, মূল্যস্ফীতি এবং পণ্য আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার বন্ধে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব। মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান আইন, নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কেও নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন তারা।

মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির কাজ হলো, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের জোগান ধার্য এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও নতুন মুদ্রানীতি আসার আগেই তিনবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ সদ্য বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে রেপো সুদহার বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

রেপো সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। মূলত টাকার প্রবাহ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে ব্যাংকগুলো বেশি সুদের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম টাকা ধার করে।

কিছুটা সংকোচনমুখী ঠিক করে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ জোগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ, এর আগের বার যা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়াও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে যা ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। জাতীয় বাজেটে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে আলোচ্য অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রাখার পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সরকার।

ইএআর/কেএসআর