২০২৪ সালে ৮১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় চাই: বাণিজ্যমন্ত্রী
২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, দেশের পোশাকখাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর মাসে যে রপ্তানি আয় এসেছে, সেটা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গত বছর ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম, বছর শেষে সেটা ৬১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। সেই সাহস নিয়ে এবার ৬৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ২০২৪ সালে আমরা ৮১ বিলিয়ন ডলার চাই।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ‘অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, উন্নত অর্থনীতির দেশে ৫০ শতাংশের বেশি টাকা পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া হয়। আমাদের দেশে সেই অবস্থা নেই। দেশে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হচ্ছে। যার জন্য বেশকিছু সমস্যাও হচ্ছে। যদি ৫০ শতাংশ অর্থও পুঁজিবাজার থেকে আসতো, তবে আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হতে বাধ্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন একটা বৈশ্বিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছি। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটা গোষ্ঠী খুব চালাকির সঙ্গে গুজব ছড়াচ্ছে। তারা মিথ্যা বলছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ গোষ্ঠী দেশের উন্নয়ন চায় না।
তিনি আরও বলেন, শুধু পুঁজিবাজার না, রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও উন্নয়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান। তারা কিন্তু এ দেশটার উন্নতি চান না। এ লোকগুলা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এরপর ‘জয় বাংলা’কে তারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ করার অপচেষ্টা করেছে। মূল রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা।
টিপু মুনশি আরও বলেন, আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে মহাক্রান্তিকাল এসেছিল, যখন রানা প্লাজা ধসে যায়। বহু শ্রমিক নিহত হলেন। পৃথিবীর ক্রেতারা অস্থির হয়ে পড়েন। গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরাও অস্থির হয়ে পড়েন, আমাদের কী জানি হয়! ক্রেতার যদি মুখ ফিরিয়ে নেন! কিন্তু একটা জিনিস লক্ষণীয়, আমরা সেই বিপদের পরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমরা কম্পলাইনস করেছি। আজ পৃথিবীর সব থেকে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি আমাদের।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট আনিস উদ দৌলা, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাজারে না বুঝে বিনিয়োগ করলে অন্যের কাছে আপনার বিনিয়োগ চলে যাবে। তাই বিনিয়োগ শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা অনেক বেশি জরুরি। এজন্য আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলেছি।
তিনি বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ পুঁজিবাজার গড়তে যা যা দরকার, এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এমন একটি মার্কেট গড়তে যা প্রয়োজন আমরা তাই আনবো। আর এতে আমাদের ভুল-ত্রুটি হবে, সমালোচনা হবে। কিন্তু এর রেজাল্ট আপনারা দু-তিন অথবা চার বছর পর পাবেন।
‘বাজারে হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান। এজন্য আমাদের হয়তো সময় এবং মানবসম্পদের কারণে অত বেশি সুপারভিশন করা সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ডাবল গতিতে কাজ করে। তারপরও কিছু ভুল আমাদের হতেই পারে, আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি’ বলেন অধ্যাপক শিবলী।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে ক্যাপিটাল মার্কেট বলতে সবাই সেকেন্ডারি মার্কেট ভাবতো। আমরা নতুন নতুন যে প্রোডাক্ট নিয়ে আসছি, তা সারা পৃথিবীর সব মার্কেটে আছে। ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। সেটা আনা দরকার এবং আনবো। কাজ করতে গেলে সমালোচনা হবেই। কিন্তু তারপরও এর রেজাল্ট বা ভালো ফলাফল আমরা পাবো। তখন একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাপিটাল মার্কেটে শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা যদি আসে, তখন রেজাল্টটা সবচেয়ে ভালো হবে। মানুষ বুঝে-শুনে অপশন অপরচুনিটি দেখে বিনিয়োগ করবে, তখনই বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলে সঞ্চয় বাড়বে। আর সঞ্চয় বাড়লে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এভাবে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুব ভালো করছে। তারা একদিকে যেমন আমাদের সমালোচনা করে সাহায্য করে, অন্যদিকে আমাদের পরামর্শের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দেয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার রিউমার, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং অপমান করা হয়। এগুলো আমাদের বাধাগ্রস্ত করছে। তারপরও আমার কাজ করছি।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, খুব শিগগির আমরা উত্থানে উঠে যাবো। তখন অনেকেই আফসোস করবেন, যারা এখন পুঁজিবাজার থেকে সরে গেছেন।
বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এ মাধ্যমে সহজেই গুজব ছড়ানো হয়। তাই সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব তথ্য বিশ্বাস করার আগে যাচাই করে নিতে হবে।
এমএএস/এএএইচ/জিকেএস