চট্টগ্রাম বন্দর
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ছাড়পত্র দিয়ে সরকারের গচ্চা ১০ কোটি!
জাহাজ থেকে কনটেইনার নামাতে হলে শিপিং এজেন্টের হিসাবে (রিভলভিং একাউন্ট) হ্যান্ডলিং বিলের পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হয়। অর্থ থাকলে তখন কনটেইনার নামতে পারে বন্দরে। কিন্তু এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে দেখা গেছে ব্যত্যয়। রিভলভিং একাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্ত্বেও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ছাড়পত্র দিয়ে প্রায় সোয়া ১০ কোটি টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব গচ্চা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২০১৬ সালে এ ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে ওই ঘটনার বিবরণ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দর চেয়ারম্যানকে একাধিক চিঠি দিয়েছে দুদক।
মূলত অভিযোগটি উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের বর্তমান পরিচালক এনামুল করিমের বিরুদ্ধে। কিন্তু জাগো নিউজের কাছে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিভলভিং একাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে বন্দর চেয়ারম্যানকে দেওয়া দুদকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এনামুল করিম শিপিং এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশ করে বন্দরের মাসুলের টাকা আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
ওই চিঠিতে ২০১৪ সালের শুরু থেকে ২০১৬ সালের শেষ পর্যন্ত- এই তিন বছরে বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, পদবি এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ছাড়করণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক বিবরণ জানতে চেয়েছে দুদক। এছাড়া এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কি কি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, তার রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বন্দর একটি বিধিবদ্ধ আইন ও বিধি মোতাবেক পরিচালিত হয়। রেগুলেশন অনুযায়ী, বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার আগে শিপিং এজেন্টের হিসাবে অর্থাৎ রিভলভিং একাউন্টে হ্যান্ডলিং বিলের পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হয়। কনটেইনার হ্যান্ডলিং বা ছাড়ের পর সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টকে বিল উপস্থাপন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর শিপিং এজেন্টের অনুমোদন সাপেক্ষে বিলের সমপরিমাণ অর্থ রিভলভিং একাউন্টের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে নেয়। অন্যদিকে কনটেইনার বন্দরে আসার আগে যদি রিভলভিং ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে তাহলে নগদ পরিশোধ করেই বন্দরের ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভিন্ন ঘটনা ঘটে বন্দরে। শিপিং এজেন্ট মেসার্স ইউনিবেঙ্গল কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের রিভলভিং হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও রেগুলেশন অনুসরণ না করে তাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ছাড়পত্র (পোর্ট ক্লিয়ারেন্স) দেয় বন্দর ট্রাফিক বিভাগ। ওই সময় এই বিভাগের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (অপারেশন) ছিলেন এনামুল করিম। তিনিই ছাড়পত্র দিয়েছিলেন।
এ কারণে ওই অর্থবছরে মেসার্স ইউনিবেঙ্গল কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৬২ হাজার ৮১৬ টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে বকেয়া টাকা আদায়ে মামলায় যেতে হয়। এরই মধ্যে ওই টাকা বকেয়া রেখে দেউলিয়া হয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে পাওনা আদায়ে সংকটে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৬শ কনটেইনার আটকে রেখেও পাওনা আদায় করতে পারেনি বন্দর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, বিষয়টির অনুসন্ধান চলছে।
তবে বন্দর ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক (অপারেশন) এনামুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, যেই শিপিং এজেন্টের কাছে আমরা টাকা পাই, তাদের মূল প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের ১৬শ কনটেইনার আমরা আটক রেখেছি। এসব কনটেইনারের বাজারমূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। তাদের নামে আমরা ওই সময়ই মামলা করেছি।
ইকবাল হোসেন/জেডএইচ/জিকেএস