ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সিরামিক শিল্প

গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমায় লোকসান, ছাঁটাই হচ্ছে শ্রমিক

মফিজুল সাদিক | প্রকাশিত: ১২:৫৫ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২২

দেশি সিরামিক শিল্পের উত্থানের সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাস সংকট। কয়েক বছর ধরে দ্রুত প্রসারমান এ শিল্পে সম্প্রতি নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে উৎপাদন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করা এ খাতের বিনিয়োগকারী রয়েছেন বিপাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচের লাগাম টানতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। বিদেশি সিরামিক পণ্য আমদানিও বর্তমানে বন্ধ। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে মোট চাহিদা মেটানোও শঙ্কার মুখে।

এক সময় সিরামিক ও কাচকে বলা হতো আমদানিপণ্য। দেশীয় শিল্পের প্রসারে গত চার-পাঁচ বছর সিরামিক পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ। ফলে সিরামিক শিল্পে এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে দেশে। চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৫০ দেশে। ক্রমেই বড় হচ্ছে এই শিল্পের বাজার। বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। তবে গ্যাস সংকটের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ খাতের রপ্তানি লক্ষ্য।

গ্যাস সংকট ছাড়াও এখন বিদেশ থেকে সিরামিক পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশে ব্যাপক হারে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চাপে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশের বাজারে সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। এমন সময়েও আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। এতে একদিকে আগের খোলা এলসির (ঋণপত্র) দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো, অন্যদিকে নতুন এলসি খুলতেও পড়তে হচ্ছে নানামুখী জটিলতায়। ফলে সিরামিক পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে অর্ধেক সময় বন্ধ থাকছে সিরামিক কারখানা। ফলে উৎপাদনও কমে গেছে ৫০ শতাংশ। এতে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। বারবার অফ-অন করার কারণে শিল্পের মেশিনগুলোও কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে।

jagonews24

জানা যায়, সিরামিক কারখানায় পণ্য প্রস্তুতে চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। সেই হিসেবে এই শিল্পে গ্যাস একটি অন্যতম কাঁচামাল। পণ্য উৎপাদনে ১০-১১ শতাংশ খরচই হয় গ্যাসের পেছনে। দিনে অনেক সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। চুল্লি বন্ধ করলে আবারও গরম করতে গ্যাস বেশি লাগে। গ্যাসের প্রেশারও দরকার হয়, কারণ চুল্লি রাখতে হয় সাড়ে ১১ থেকে ১২শ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তাপমাত্রা কমে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ) সূত্র জানায়, দেশে সিরামিক কারখানার সংখ্যা ৬৬টি। এসব কারখানায় যেমন সস্তা দামের পণ্য তৈরি হয়, তেমনি মধ্যম দামের মানসম্মত পণ্যও তৈরি হয়। কারখানাগুলোর মধ্যে ২৮টি টাইলসের, ২০টি তৈজসপত্রের ও ১৮টি স্যানিটারিওয়্যারের। নতুন আরও চার-পাঁচটি কারখানা আসছে, যারা দু-এক বছরের মধ্যেই উৎপাদনে যাবে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) বোর্ড অব ডিরেক্টর আব্দুল হাকিম সুমন জাগো নিউজকে বলেন, গ্যাসের সমস্যা ছয় মাস ধরে। আমরা বিশাল লোকসানে আছি। গ্যাস ১২ ঘণ্টা থাকে ১২ ঘণ্টা থাকে না। কিন্তু আমাদের নিয়ম হচ্ছে কারখানা ২৪ ঘণ্টা সচল রাখা। গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকা শিল্পগুলো ১০ থেকে ২০ শতাংশ লোকসানে পড়ছে। প্রোডাকশন কমে নেমেছে অর্ধেকে। আমরা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছি। বসে বসে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার সক্ষমতাও নেই। বারবার বন্ধ করার জন্য মেশিনের কাজের দক্ষতা কমে গেছে। রোলারগুলোও ঠিকঠাক কাজ করছে না। অনেক মালামাল নষ্টও হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এলসি খুলতে পারছি না। ফলে কাঁচামালেরও সংকট। ইউরোপ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি না।

jagonews24

দেশে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কাচ ও সিরামিক উৎপাদন করা হয়। আমদানি করা হয় বাকি ১০ শতাংশ। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আকিজ, আবুল খায়ের, ডিবিএল, শেলটেকসহ আরও অনেক কোম্পানি সম্প্রতি সিরামিকে বিনিয়োগে এসেছে। নতুন করে জেবি, তুষার, বিএইচএল, মেঘনা গ্রুপসহ ১০-১২টি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। শুধু দেশি নয়, বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে। সিবিসি, নিউ জং ইয়ান, ফু-ওয়াং, আরএকে ও চায়না-বাংলাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিনিয়োগ আছে। ফলে কমেছে আমদানি। বিগত কয়েক মাস পুরোপুরি বন্ধ কাচ ও সিরামিক আমদানি। এক কেজি সিরামিক পণ্য আমদানি করতে মাত্র ৫০ সেন্ট ডিউটি লাগতো, এটা এখন বেড়ে আড়াই ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিক অ্যান্ড গ্লাসওয়্যার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. জয়নাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, চার-পাঁচ মাস সিরামিক পণ্য ইমপোর্ট বন্ধ। ডিউটি বাড়তি। আমরা এনবিআর ও সরকারকে বলে কোনো লাভ হয়নি।

সিরামিক পণ্য আমদানি বন্ধের পরও ক্রেতা ঠকছে দাবি করে মো. জয়নাল হোসাইন বলেন, সিরামিক পণ্য চীন থেকে আমদানি করতাম। এখন সেটা বন্ধ। দেশীয় শিল্পকে প্রমোট করতেই এটা করা হয়েছে। তারপরও ক্রেতারা কি ভালো আছে? আগে এক ডজন ভাতের প্লেট ৪শ টাকায় পাওয়া যেত, এখন লোকালি ১২শ টাকা লাগে। সিরামিক পণ্য আমদানি করে দেশি শিল্প-কারখানা মালিকদের লাভ হয়েছে, ক্রেতাদের সেই সুফল মেলেনি।

এমওএস/এএসএ/এমএস