ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মতবিনিময়ে ভোক্তার ডিজি

যার যত চিনি লাগে দেবো, সংকটের অজুহাতে দাম বাড়াবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২২

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশে গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে চিনির রিফাইনারিগুলোতে। পাঁচটি রিফাইনারির উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ থেকে সব রিফাইনারিতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা হবে। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে বাজারে আগের মতোই চিনির সরবরাহ থাকবে।

তিনি বলেন, তবে সরবরাহ কম হলেও দাম বাড়ার কথা নয়। সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো যাবে না। কেন দাম বাড়ানো হলো তা নিয়ে আজ থেকে কঠোর অবস্থা থাকবে আমাদের টিম। চিনির সংকটও থাকবে না। যার যত চিনি লাগবে সরবরাহ করা হবে।’

রোববার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চিনির পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় চিনির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: টাকা দিয়েও মিলছে না চিনি, হু হু করে বাড়ছে দাম

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী চিনির ডিলার জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ফ্রেশের প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করি। গত ১৯ তারিখে ২০০ বস্তার বেশি চিনি কিনেছিলাম। মাত্র দেড় ঘণ্টায় সব বিক্রি হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মেঘনা গ্রুপের কাছে অর্ডার করে এখনো চিনি পাইনি। আমরা কোম্পানি থেকে চিনি পাচ্ছি না। চিনির ব্যবস্থা করেন, আমরাও বাজারে সরবরাহ করবো।’

Suger-Inner-2

জবাবে ভোক্তার ডিজি শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা চিনি পান না বা পাচ্ছেন, তাহলে আমাদের অভিযোগ কেন দিচ্ছেন না। আপনারা আজ আমাকে বলুন কোন কোন কোম্পানি আপনাদের চিনি সরবরাহ করছে না। আমি নিজ উদ্যোগে আজ থেকে ৫-১০ বস্তা করে সরবরাহ করবো। আজ থেকেই আপনাদের দেওয়া হবে, তবুও কেউ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন না।’

আরও পড়ুন: ডলারের চাপে অস্থির তেল-চিনির পাইকারি বাজার

কারওয়ান বাজারের চিনি ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, এখন ডিলারদের কাছ থেকে চিনি কিনলেও রশিদ দেওয়া হয় না। এখন বিক্রি বন্ধ করেছি রশিদ না দেওয়ায়। মোকাম নামে একটি অনলাইনে কিছু কিছু মাল কিনছি এবং বিক্রি করছি।

এ ব্যবসায়ীর বক্তব্যের জবাবে ভোক্তার ডিজি বলেন, চিনি কিনবো অথচ আমাকে রশিদ দেবে না, এটা কি মানা যায়? এটা হতে পারে না। রশিদ অবশ্যই দিতে হবে। আর আমরা অভিযানের সময় আপনাদের মালের ক্রয় রশিদ না পেলে ধরে নেবো আপনি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আপনাকে রশিদ দেখাতে হবে এবং বেশি দামে মাল বিক্রি করা যাবে না।

Suger-Inner-2

তিনি বলেন, খুচরা পর্যায়ে চিনি কেজিপ্রতি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এটা সবার মতামত নিয়ে সমন্বয় করা হয়েছিল। কিন্তু বাজারে সংকট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা বাজারে আছে, বাজার মনিটরিং ও মিলে মনিটরিং করা হচ্ছে। আজ থেকে আমাদের অভিযান আরও কঠোর থেকে কঠোর হবে। আবার বড় বড় পাঁচ রিফাইনারির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা গ্যাস সংকটের কথা আমাদের জানিয়েছিল। আমরা সরকারের কাছে এ সংকটের কথা জানিয়েছি আজ থেকে এসব রিফাইনারিতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে উৎপাদন আগের মতোই হবে।

আরও পড়ুন: ৫ বছরে ১ কোটি সাড়ে ১১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি

ডিজি বলেন, দেশের সুগার মিলগুলোতে গত বছর ৩০ হাজার টন চিনির উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ২৪ হাজার টন উৎপাদন করেছে। দেশি চিনি বাজারে নেই বা আসেও না। যেগুলো দেশি বলে বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো মূলত কেমিক্যাল মেশানো। যেখানে উৎপাদন নেই, সেই দেশি চিনি বাজারে আসার কথাও নয়। এমন চিনি আপনারা বাজারে রাখবেন না, ভোক্তারাও কিনবেন না।

শফিকুজ্জামান আরও বলেন, আমাদের চাহিদা ১৮ লাখ টন। সেখানে সব আমদানিনির্ভর। দেশি কারখানায় মাত্র ২৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে যেটা খুবই নগণ্য। এলসি মাধ্যমের ম্যাটারিয়াল আছে, এটা রিফাইন করা যাচ্ছে না। আমরা সেখানে উৎপাদনটা ঠিক রাখতে পারলে সমস্যা থাকবে না। আজ থেকে গ্যাস সংকট থাকবে না।

jagonews24

অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, চিনির দাম বাড়ার কারণে আমরা এরই মধ্যে অভিযান জোরদার করেছি। রোববার সকালে বৈঠক করেছি, অভিযান জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। ক্রয়ের রশিদ থাকতে হবে কত দামে কিনছেন আর কত দামে বিক্রি করছেন। পাকা রশিদ যদি রাখেন তাহলে দাম কে বাড়ালো সেটা বোঝা যাবে। আমরা মিলগুলোতেও অভিযানে যাচ্ছি।

মতবিনিময়ে ক্যাবের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, চিনির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের হট নম্বরে অভিযোগ আসছে। আমরা কয়েকটি মার্কেট পরিদর্শনে যাই, সেখানেও ব্যবসায়ীরা বলেছেন সরবরাহ নেই। ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে রশিদ চাওয়া হয়, রশিদ না পেলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু কেন রশিদ রাখা হয় না বা দেওয়া হয় না, এটা দেখার বিষয়। আবার সংকটের মধ্যেও কেন দেশি চিনি বাজারে রাখা হচ্ছে না। অথচ ভোক্তার কাছে দেশি চিনির চাহিদা বেশি।

ইএআর/এএএইচ/এমএস