ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সি পার্লের শেয়ারের দাম বাড়ছেই, কাজ হচ্ছে না সতর্কবার্তায়ও

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

সার্বিক শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এমন একটি কোম্পানি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। কোম্পানিটির আর্থিক ভিত খুব একটা শক্তিশালী না হলেও শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে মাত্র একমাসেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এ মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তবে সেই সতর্কবার্তায় কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম।

কারসারিজ মাধ্যমে কোনো বিশেষচক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়চ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সি পার্ল বিচ রিসোর্টের লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো না। শেষ দুই বাজারে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের মাত্র এক শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কয়েকজনকে বড় অংকের জরিমানা করেছে।

তবে সার্বিক বাজারে যে ধরনের কারসাজি হচ্ছে, জারিমানার পরিমাণ তার তুলনায় বেশ কম। বেশরভাগ ক্ষেত্রে কারসাজি চক্র রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তারা বারবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৫৭ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ২৭ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ একমাসের কম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭৭ টাকা ৯০ পয়সা বা ১৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

sea-pearl-2

সি পার্ল রিচ রিসোর্ট/ফাইল ছবি

অন্যভাবে বললে ৪ সেপ্টেম্বর কোনো বিনিয়োগকারী সি পাল বিচ রিসোর্টের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ধরে রাখছে, এখন তার বাজারমূল্য ২৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা একমাসের কম খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এ যেন রূপ কথার আলাদিনের চেরাগ!

কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ডিএসই থেকে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছ এবং লেনদেন বেড়েছে, তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

কোম্পানিটির দেওয়া এ তথ্যের ভিত্তিতে ৭ সেপ্টেম্বর ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে ডিএসইর সেই সতর্ক বার্তা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রুখতে পারেনি। বরং ডিএসইর সতর্কবার্তা প্রকাশের পর শেয়ারের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। ডিএসই থেকে সতর্কবার্তা প্রকাশের পর ২০ দিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়লেও নতুন করে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ডিএসই।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

এদিকে, ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের (২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৭ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমে গেছে।

১২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি সাত লাখ ৫০ হাজার। এরমধ্যে ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিদেশিদের কাছে কোম্পানিটির কোনো শেয়ার নেই।

কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ডিএসইর একাধিক সদস্য জানান, সর্বশেষ ঘোষিত দুই বছরের লভ্যাংশ বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট একটি শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। এমন একটি কোম্পানির শেয়ার দাম হু হু করে বেড়ে ১৩৫ টাকায় উঠে যাওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না।

তারা বলেন, ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে, তাও না। বরং গত বছরের তুলনায় মুনাফা কমেছে। শেষ তিনমাসে যত ভালো ব্যবসায় হোক কোম্পানিটি থেকে খুব বড় ধরনের লভ্যাংশ পাওয়া যাবে এমনটা আশা করা যায় না।

শুধু সি পার্ল বিচ রিসোর্ট না, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গুটিকয়েক কোম্পানির শেয়ারের দাম এভাবে বাড়া সার্বিক বাজারের জন্য খারাপ লক্ষণ।

এমএএস/এএএইচ/এমএস