বিশ্ববাজারে অর্ধেকে নেমেছে পাম তেলের দাম, কমছে না দেশে
পাঁচ মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে পাম তেলের দাম। মালয়েশিয়ার বাজারে প্রতি টন পাম তেল ৭ হাজার ৭৫৭ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত সমান ২২ টাকা) থেকে নেমেছে ৩ হাজার ৭৫৯ রিঙ্গিতে। দেশের পাইকারি বাজারে এর প্রভাবে দাম কমলেও তার কোনো প্রভাব নেই খুচরা বাজারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম কিছুটা কমেছে। সবাই হয়তো সামনে বসবে। তখন যদি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় তবে সে দামেই বিক্রি করা হবে। আর কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বক্তব্য, বিশ্ববাজারের সঙ্গে পুরোপুরি সঠিক অনুপাতে সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। দু-চার টাকা কমিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া নয়।
তথ্য বলছে, গত মে মাসে যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম অস্থিতিশীল হয়, তখন দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করে তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। সে সময় কয়েক দফায় দাম প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। কিন্তু এরপর তিন মাস ধরে দাম কমতে থাকলেও দেশে কমেনি। বরং বাড়তি দামে তেল বিক্রি হচ্ছে এখনো।
তবে পাইকারি বাজারে পাম তেলের দাম কিছুটা কমেছে। বুধবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা প্রতি লিটার। আর সয়াবিন ১৫৫ টাকায়। কিন্তু তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো দাম সমন্বয় না করার কারণে খুচরা বাজারে তাদের আগের নির্ধারিত দাম প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৫ টাকা এবং খোলা পাম তেলের ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছে।
পাইকারিতে পড়েছে বিশ্ববাজারের প্রভাব
আরও পড়ুন: খাতুনগঞ্জে কমেছে পাম-সয়াবিন তেলের দাম, আরও কমার আশা
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, এখন তেলের দাম কমানো উচিত। পাইকারি বাজারে তেল আগের নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাড়তি দাম নির্ধারিত থাকায় খুচরা ব্যবসায়ী ও তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বাড়তি মুনাফা করছে। সরকারের উচিত হবে দ্রুত তেলের দাম সমন্বয় করা।
এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। কিন্তু কমলে দীর্ঘ সময়েও তার প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ দাম বাড়লে শতভাগ মাশুল দিতে হয় ভোক্তাকে, কিন্তু কমলে তার সুফল পান না। সেজন্য তারা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার প্রতি টন পাম তেল ৩ হাজার ৭৫৯ রিঙ্গিতে লেনদেন হয়েছে। গত জুন মাসের পর থেকে তেলের দামে এ পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। মাঝে আগস্টে দাম সামান্য কিছুটা বাড়লেও তা সেপ্টেম্বর থেকে আবারও কমছে। চলতি মাসেই প্রথম দুই সপ্তাহে তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি প্রায় ৫শ রিঙ্গিত।
আরও পড়ুন: এখনো চড়া নিত্যপণ্যের দাম, প্রসাধনীতেও অস্বস্তি
দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি পাম তেল আমদানি হয় মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে। ওইসব দেশে এবার পামের ভালো ফলন হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় কমেছে তেলের চাহিদা। সে কারণে দ্রুত এসব দেশের বাজারে তেলের দাম কমছে বলে জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষক সংস্থাগুলো।
দেশের বাজারে দাম কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউজকে বলেন, তেলের দাম বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বসে নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আমরা বলেছি তেলের দাম কিছুটা কমেছে। সবাই হয়তো সামনে বসবে। তখন যদি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় তবে সে দামেই বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, দাম কমানোর ক্ষেত্রে ডলারের দাম হিসাবে নিতে হবে। এছাড়া আমদানি খরচ, ভাড়া এগুলো বিবেচনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ এখনো অনেক বেশি।
ফলন ভালো হওয়ায় পাম তেলের দাম কম ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায়
অন্যদিকে দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। ফলে দেশের বাজারে তা সমন্বয় করা হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে দেড় মাসে পাম তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি ১৯ হাজার টাকা
মন্ত্রী বলেন, আগামী মাসে (অক্টোবর) ভোজ্যতেলের দাম আরও একধাপ কমতে পারে। এরই মধ্যে এ নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এসব বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দীর্ঘদিনেও দেশের বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না। দাম কমলে ব্যবসায়ীরা উল্টো সুর দেন, নানা অজুহাত দেখান।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে দ্রুত দাম কমানো প্রয়োজন। সেটি বিশ্ববাজারের সঙ্গে পুরোপুরি সঠিক অনুপাতে সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। দু-চার টাকা কমিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া নয়।
এনএইচ/এমএইচআর/এএসএ/এএসএম