ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

স্বল্প বাজেটেই গ্যাসে ৩৪ হাজার কোটি ব্যয় কমানো সম্ভব

মাহবুবুল ইসলাম | প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২২

দেশের চলমান জ্বালানি সংকট পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিশেষ করে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে দেশের জ্বালানি খাতে যে ব্যয় বেড়েই চলছে, সেখান থেকেও বের হয়ে আসা সম্ভব শুধুমাত্র সদিচ্ছা ও স্বল্প বাজেটেই। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে ১০ হাজার কোটি টাকার সঠিক ব্যবহারেই ৩৪ হাজার কোটি টাকা আমদানি ব্যয় খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহযোগী অধ্যাপক পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার ড. আমিরুল ইসলাম তার এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে আমিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির চাইতে নিজস্ব গ্যাস উত্তোলন খরচ অনেক কম। তাহলে কেন আমরা আমদানি করবো? বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানিতে ২০২২ সালে পেট্রোবাংলা যে হিসাব দিয়েছে, তাতে গড় হিসাব করলে আমাদের দেশি-বিদেশি গ্যাস ফিল্ডগুলো গড়ে আড়াই টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন টাকায় প্রতি স্ট্যান্ডার্ড ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন করে দিচ্ছে।

‘তার বিপরীতে যদি জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) দীর্ঘমেয়াদি কন্ট্রাক্টের আওতায় ১২ ডলার করেও এলএনজি (প্রতি এমএমবিটিইউ) ধরি, তবে বাংলাদেশে আনতে প্রতি ঘনমিটারে ট্রান্সপোর্ট খরচ আছে, এফএসআরইউ (ভাসমান টার্মিনাল ও পুনঃ গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট) দিয়ে রিগ্যাসিফিকেশন করতে হয়, তার পরেই গ্যাস পাইপলাইনে গ্যাসটা দেবে। সেই গ্যাসের খরচ প্রতি ঘনমিটারে গিয়ে ঠেকবে ৫০ টাকা ৩৮ পয়সায়। দেশীয় উৎপাদনের চাইতে কতগুন খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে? তার চাইতে বরং দেশীয় পরিত্যক্ত গ্যাসগুলোকেও যদি আমরা উত্তোলন করতে পারি, তবে খরচ কমে যায়।’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এবার গণশুনানিতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে সাড়ে ৮০০ মিলিয়িন ঘণফুট এলএনজি আমদানির হিসাব দেখানো হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, তাতে ৪৪ হাজার কোটি টাকা খরচ পড়বে। আমি তখন দেখালাম, ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করলে ২৭টি গ্যাস ফিল্ড থেকে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা দিতে পারবো।

আমিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার ফলে অনেক গ্যাসকূপ পারফোরেশন হয়ে (ছিদ্র) ড্যামেজ হয়ে পড়ে আছে। সেগুলোকে রিপারফোরেশন (ছিদ্র বন্ধ) এর মাধ্যমে আমরা আবার গ্যাস নিতে পারবো। আমাদের অনেক গ্যাসকূপ ড্যামেজ হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা যদি ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে ড্যামেজগুলো ক্লিন করতে পারি, তবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা খরচে আমরা ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাবো। আমাদের ৩২টি কূপ বন্ধ হয়ে আছে। ৭০টি প্রসেসিংয়ে আছে। সালদা নদীতে আমরা রিপারফোরেশন করেছিলাম। সেখানে ৪টি কূপ আছে। ২ কোটি টাকা খরচ করলে ৪০ মিলিয়ন গ্যাস সেখান থেকে পাওয়া সম্ভব। যেসব ফিল্ডে উৎপাদন কম, সেখানে ওয়ার্কওভার করে ডাউনহোল কপ্রেসার বসিয়ে দিলে আবার গ্যাস উত্তোলন হবে।

দেশীয় সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে আমিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ছোট ছোট অনেক সম্ভাবনা আছে। আগামী দুই বছরে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানো অসম্ভব কিছু না। বাপেক্সের ৫টি ড্রিলিং রিড আছে। বুয়েট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চুয়েট- এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে অন্তত ১০০ ইঞ্জিনিয়ার বের হচ্ছেন। তাদের কাজে লাগানো যাবে।

এলএনজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান গ্যাস ক্রাইসিসের একমাত্র কারণ এলএনজি। আমরা প্রেডিকশন (ভবিষ্যদ্বাণী) করেছিলাম, ২০৪০ বা ৫০ সালের পর থেকে এলএনজি আনবো। আমরা তো অনেক আগেই নিয়ে আসছি। আমাদের অফসোরের (সমুদ্রসীমা) গ্যাস যখন শেষ হয়ে যাবে, তখনই তো আমরা এলএনজির দিকে যাবো। আমাদের বর্তমান গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৪ হাজারে। তখন আমাদের নিজেদের উত্তোলনকৃত গ্যাস লাগবেই।

এমআইএস/ইএ/জেআইএম