কাঁচা চামড়ার আড়ত গড়ে উঠেছে হেমায়েতপুরে
বাংলাদেশে প্রথম একটি ট্যানারি স্থাপন করা হয় ঢাকার নারায়ণগঞ্জে। সেই ১৯৪০ সালে, এরপর ট্যানারিটি হাজারীবাগে নিয়ে আসা হয়। সেই ট্যানারিকে কেন্দ্র করেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় গড়ে ওঠে আরও অনেক ট্যানারি। হাজারীবাগকে ঘিরে চামড়ার ব্যবসা প্রসার লাভ করলেও বিরূপ প্রভাব পড়ে পরিবেশ ও জনজীবনে। ফলে সচেতন মহল থেকে বার বার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার দাবি ওঠে। দুই যুগ ধরে তোলা এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকা থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পর হেমায়েতপুরের ঝাউচর এলাকায় এখন নতুন করে গড়ে উঠছে কাঁচা চামড়ার আড়ত। হাজারীবাগ, পোস্তগোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা কাঁচা চামড়ার আড়তগুলো সরিয়ে এখন ঝাউচরে নিয়ে আসা হচ্ছে। গত এক বছরে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর সামনে ঝাউচর এলাকায় নতুন করে ৫০টির বেশি কাঁচা চামড়ার আড়ত গড় উঠেছে।
সম্প্রতি সাভারের হেমায়েতপুরের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর ঝাউচরে সরেজমিনে গিয়ে কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ট্যানারি মালিকদের চাহিদার সিংহভাগ জোগান দেয় কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। হেমায়েতপুরে বিসিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে ওঠায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারও ঝাউচর এলাকায় নতুন করে আড়ত গড়ে তুলেছে। এরই মধ্যে ৫০টির বেশি আড়ত গড়ে উঠেছে স্থানটিতে।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে জড়ো হয়েছেন তারা। গড়ে তুলেছেন কাঁচা চামড়ার আড়ত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে আড়তে নিয়ে আসেন। অনেকে আবার পাইকারদের কাছ থেকে চামড়া কিনে আড়তে সংগ্রহ করেন। তারা গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।
সিরাজগঞ্জ ট্রেডার্সের আড়তদার মো. জহুরুল ইসলাম নতুন করে আড়ত দিয়েছেন ঝাউচরে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার আড়ত ছিল সিরাজগঞ্জে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের পর আমি এখানে এসে কাঁচা চামড়ার আড়ত দেই। ট্যানারি শিল্প এখানে স্থানান্তর হওয়ার পর আড়তগুলো গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানকার আড়তে কাঁচা চামড়া আসে। ৫০টি আড়ত এখানে গড়ে উঠেছে এই ট্যানারিকে কেন্দ্র করেই।’
নোয়াখালী থেকে আসা আরেক আড়তদার বলেন, কাঁচা চামড়ার ব্যবসা বহু আগে থেকেই করি। চামড়া শিল্প সাভারে নিয়ে আসার পর এখানে একটি আড়ত নেই। কাঁচা চামড়ার বাজার এখন স্বাভাবিক।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর ঝাউচর এলাকায় ৫০টিরও বেশি আড়ত রয়েছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখানে আড়ত দিয়েছেন।
এদিকে লালবাগের পোস্তগোলা থেকেও ঝাউচরে আড়ত স্থানান্তর করেছেন অনেক আড়তদার। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পোস্তগোলায় থাকা এসব আড়তদারের অনেকেই এখনও আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ফলে সহজেই কাঁচা চামড়ার আড়ত সরাতে পারছেন না তারা।
এই এলাকায় নতুন করে ৫০টির বেশি কাঁচা চামড়ার আড়ত গড় উঠেছে-ছবি জাগো নিউজ
আড়তদারদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, কাঁচা চামড়ার বড় মার্কেট এখন এখানেই। ৫০টির মতো আড়ত আছে। নতুন করে আরও কয়েকটির কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১৬টি আড়ত পোস্তগোলা থেকে এসেছে। আড়তদারদের বিভিন্ন সমস্যা দেখার জন্য আমাদের এই সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে আড়তদারদের যেসব সমস্যা হবে তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তবে যেসব আড়তদার আগের স্থানে দেনা-পাওনা করেছে সেটা তারা নিজেরা মেটাবে। এখানে এসে কোনো ধরনের সমস্যা বা দেনা-পাওনা বিষয়ে আড়তদাররা সমস্যায় পড়লে সেটা আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। সমিতির ৭১ জন সদস্য রয়েছেন, যাদের আড়ত রয়েছে ঝাউচর এলাকায়।
এদিকে বিসিক চামড়া শিল্পনগরী এলাকায় আড়ত গড়ে ওঠায় কম পরিবহন খরচেই কাঁচা চামড়া পাচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। কাঁচা চামড়ার প্রয়োজন হলেই নতুন করে গড়ে ওঠা এসব আড়ত থেকে বিভিন্ন আকারের চামড়া কিনতে পারছেন তারা। আড়তগুলো থেকে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকায় চামড়া পাওয়া যায়।
প্রয়োজন হলেই নতুন আড়ত থেকে চামড়া কিনতে পারছেন ব্যবসায়ীরা-ছবি জাগো নিউজ
তাজিন করপোরেশনের মালিক আশিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন কিছু কাঁচা চামড়ার আড়ত গড়ে উঠেছে বিসিক এলাকার পাশেই। কাঁচা চামড়ার প্রয়োজন হলে সেখান থেকে সহজেই নিয়ে আসা যায়। এতে পরিবহন খরচ কিছুটা কমই হয়।
কাঁচা চামড়ার ব্যবসার জন্য গড়ে ওঠা এসব আড়তে চামড়া বিক্রি স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে আড়তদাররা।
আরএসএম/এসএইচএস/জেআইএম