ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বিতর্কিতদের আইডিআরএ’র সদস্য করলো মন্ত্রণালয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ২৩ জুন ২০২২

একজন তো তথ্য গোপনের অপরাধে বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। আর একজনের শিক্ষাগত যোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ তাদের বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ দুজন হলেন কামরুল হাসান এবং নজরুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) কামরুল হাসানকে সদস্য (লাইফ) এবং নজরুল ইসলামকে সদস্য (নন-লাইফ) পদে নিয়োগ দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দুজনকেই তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে তথ্য গোপন করায় পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদ থেকে কামরুল হাসানকে অপসারণ করেছিল আইডিআরএ।

আর প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পান নজরুল ইসলাম। এমনকি তিনি বিতর্কিত দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সাভার ক্যাম্পাস থেকে এমবিএ পাসের সনদ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) পদটি প্রায় দুই বছর এবং সদস্য (নন-লাইফ) পদটি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে খালি রয়েছে। সবশেষ গেলো বছরের ২২ নভেম্বর এসব পদে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইডিআরএ সদস্য পদে তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪১টি আবেদন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ১৪ জনকে করা হয় শর্ট লিস্ট। এর মধ্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (লাইফ) পদে আট এবং সদস্য (নন-লাইফ) পদে ছয়জন রাখা হয়।

সদস্য (লাইফ) পদে শর্ট লিস্টে রাখা হয় মো. এনায়েত আলী খান, মো. সামসুল আলম, কামরুল হাসান, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল, দুলাল চন্দ্র নন্দী, আবুল কালাম মো. আজাদ, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এবং মো. আনোয়ার হোসেনকে।

অপরদিকে সদস্য (নন-লাইফ) পদের শর্ট লিস্টে রাখা হয়- মো. নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ খাইরুল আলম, পাপিয়া রহমান, কে এম সাইদুর রহমান, মো. আব্দুল হাই সরকার এবং এস এম জসিম উদ্দিন আহমেদকে। এখান থেকেই কামরুল ও নজরুলকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে কামরুল হাসানকে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তথ্য গোপন করায় অনুমোদনের মাত্র ২৬ দিনের মাথায় তার নিয়োগ বাতিল করে আইডিআরএ।

২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কোনো রকম যাচাই-বাছাই না করেই আবেদন পাঠানোর মাত্র ১২ দিনের মাথায় কামরুল হাসানকে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। এসময় তার নিয়োগপত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ‘আবেদনে উল্লেখিত তথ্যাদি পরবর্তীতে সঠিক প্রমাণিত না হলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তার অনুমোদন প্রত্যাহার হবে।’

পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) থেকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, কামরুল হাসান ক্রেডিট কার্ডে ঋণ খেলাপি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদনপত্রে দেওয়া শর্তের ভিত্তিতে কামরুল হাসানের নিয়োগ বাতিল করে আইডিআরএ।

অন্যদিকে নজরুল ইসলাম প্রবিধান অনুসারে যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করেই এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পান। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ অনুসারে, এই পদে নিয়োগ পেতে হলে তিন বছর মেয়াদী স্নাতক ও এক বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা চার বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

অথচ নজরুল ইসলাম এইচএসসি পাস করেন ১৯৮৫ সালে এবং বিএসসি পাস করেন ১৯৮৭ সালে। অর্থাৎ তার বিএসসি ডিগ্রিটি দুই বছর মেয়াদী। পরে ২০১১ সালে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সাভার ক্যাম্পাস থেকে এমবিএ পাস করেন তিনি।

অর্থাৎ প্রবিধানমালার শর্ত অনুসারে নজরুল ইসলাম শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেননি। শিক্ষাগত যোগ্যতার এসব তথ্য তিনি মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য করা আবেদনে উল্লেখ করেন।

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই নয়, বিমা খাতে নজরুল ইসলামের কর্ম অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তিনি প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে চাকরি করেছেন বলে জীবন বৃত্তান্তে দাবি করেন। কিন্তু প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘মো. নজরুল ইসলাম’ নামের কোনো ব্যক্তির নাম নেই।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ‘মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার’। তিনি ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তবে গত বছরের ১৬ জুন প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সাখাওয়াত হোসেন মামুন সই করা একটি সনদে উল্লেখ করা হয়, নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।

সনদটিতে আরও বলা হয়, শেষ তিন বছর তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কোম্পানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে চাকরি করেন। তবে কত তারিখ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতি পান তার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি সনদটিতে।

এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম