ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা কমছে
নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে টার্নওয়ার কর দাখিলপত্র পেশ না করার ব্যর্থতা বা অনিয়মের পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি দেশের ৫১তম ও বর্তমান সরকারের ২৩তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট।
আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় বলে অভিমত অর্থমন্ত্রীর।
এজন্য মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এ জরিমানা ও সুদের হার সহনীয় করার লক্ষ্যে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে-
>> নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ না করার ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা।
>> ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের সমপরিমাণের পরিবর্তে ‘অন্যূন অর্ধেক এবং অনূর্ধ্ব সমপরিমাণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
>> করদাতাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ না করা ও বন্ধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার মধ্যবর্তী সময়ে দাখিলপত্র পেশ না করা হলে জরিমানা আরোপ না করার বিধান সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানা ব্যতিরে শুধুমাত্র দাবি করা করের অংশবিশেষ জমার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> আপিলাত ট্রাইব্যুনালে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান আপিল দায়ের করতে না পারলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বর্ধিত করার বিধান সন্নিবেশকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> বকেয়া মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে সুদ আরোপের সময়সীমা সর্বোচ্চ ২৪ মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর আদায় কার্যক্রমে তদারকি নিশ্চিত করা এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিতে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে-
>> আন্তর্জাতিক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সেবার ক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসরে শূন্য হারের সুবিধা বলবৎ রয়েছে, যার ফলে মাঠ পর্যায়ে প্রায়োগিক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> ভ্যাট খেলাপি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে মূসক কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার বিধান আইনে সন্নিবেশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) প্রক্রিয়া অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের পেন্ডিং মামলাগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> ‘চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের’ ন্যায় ‘কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের’ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সহায়তাকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা বিষয়ে কোনো তদন্তকারী সংস্থা এ বিষয়ে কোনো তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না মর্মে বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
>> বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় দাখিল করা বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সাথে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির রিপোর্ট পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়। তাই, আইনে মূসক কর্মকর্তাকে সহায়তার লক্ষ্যে সহায়তাকারী হিসেবে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি-কে অন্তর্ভুক্তকরণের বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।
অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।
এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমএএস/এমআরএম/এমএস