ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সুদহার কমানোকে ইতিবাচক দেখছেন অর্থনীতিবিদরা

প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন’ ২০১৬) মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে ব্যাংকিং খাতে যে সুদের হার কমানো হয়েছে তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে মূল্যস্ফীতি যেন বেড়ে না যায় সেই দিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- ঋণ সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারকে সহায়তা করা।

ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে সুদের হার কমানো হলেও জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জন বা বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

নতুন ঘোষিত মুদ্রানীতিকে সমর্থনমূলক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এটা সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি, যা বাস্তবায়ন কঠিন। বৃহস্পতিবার অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন’ ২০১৬) সতর্ক, সংযত ও সমর্থনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

মুদ্রানীতিতে সুদের হার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে রেপোতে ছয় দশমিক ৭৫ এবং রিভার্স রেপোতে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ফলে ব্যাংকগুলো কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল পাবে। অন্যদিকে, রিভার্স রেপোর সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে মুনাফা না তুলে ব্যবসা ও উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়াবে।

এছাড়াও ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা আগের ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর পাবলিক সেক্টরের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান অবস্থার বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তাকে সতর্ক, সংযত না বলে আমি সমর্থনমূলক মুদ্রানীতি বলবো।

একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধিও অর্জন করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথমার্ধের বেশির ভাগ লক্ষ্যমাত্রাই অর্জন হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ। ফলে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তিনি বলেন, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে সুদের হার কমিয়েছে এটা ভালো দিক। তবে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর। একই সঙ্গে শহর ও গ্রামের সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতি প্রসারের তাগিদ দেন তিনি।

মুদ্রানীতিতে ছোট ছোট খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে উদ্যোগ তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, ব্যাংকারদের নীতি চেঞ্জ করতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ব্যাংকাররা সব সময় বড় ঋণ দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়াও ব্যাংকিং খাতে বেশিরভাগ ঋণ বড় গ্রাহকদের দখলে থাকে। তাদের কাছ থেকে ঋণের অর্থ তুলে আনাও কঠিন।

নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সব সময় পার্শ্ববর্তী দেশের কম সুদের হার উল্লেখ করে তা কমানোর কথা বলে। তাই সুদের হার কমানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। তবে আমাদের দেশের তুলনায় পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক কম। সুদহার বাড়ানোর ফলে যেন মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে না যায় সেই দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নজর রাখার তাগিদ দেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিকে স্ববিরোধী বলছে উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল বলেন, একদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানো কথা বলছে। অন্যদিকে, প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবারের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মুদ্রানীতিতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে তা অর্জনে মোট জিডিপির ৩১ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২৯ শতাংশ, যার সিংহভাগ হয়েছে সরকারি খাতে। বেসরকারি খাতে তেমন অগ্রগতি হয় নাই। ফলে ঋণের চাহিদা না থাকায় প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় নাই। এ কারণে এবার টার্গেট কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

মুদ্রানীতিতে বড় বিনিয়োগে উৎসাহ না দিয়ে ছোট বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ ভালো হলেও তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। ছোট বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর তেমন আগ্রহ নেই। পরিচালন ব্যয় কমাতে বড় বিনিয়োগে আগ্রহ বেশি। গত বছর কৃষিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জানান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

এসআই/একে/বিএ