ট্যানারি স্থানান্তরে অনড় শিল্পমন্ত্রী
হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে নিজের দেয়া ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামে অনড় রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারিগুলোর গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সোমবার থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করলে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন শিল্পমন্ত্রী। আগামীকাল (বুধবার) দুপুর ২টায় শেষ হবে মন্ত্রীর আল্টিমেটাম।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে আর সময় বাড়াবে না সরকার। শিল্পন্ত্রীর দেয়া ট্যানারি স্থানান্তরের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামই বহাল থাকছে। পাশাপাশি বুধবার ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে উকিল নোটিশও পাঠানো হবে। বেঁধে দেয়া সময়েও যেসব ট্যানারি হাজারীবাগে থাকবে তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
অন্যদিকে, সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে চামড়া শিল্প মালিকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, মন্ত্রীর বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। আজ (মঙ্গলবার) শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, স্থানান্তরের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি আমরা।
বেঁধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা সময় বাড়ানোর দাবি করলেও মন্ত্রী তার নির্দেশনায় অটল রয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার জাগো নিউজকে বলেন, সাভারে স্থানান্তরের বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। কিন্তু তারা সেসব সুবিধা গ্রহণ করে তালবাহানা করছে। কারখানা স্থানান্তরে কালক্ষেপণ করছে। এখন মন্ত্রী যে সময় বেঁধে দিয়েছেন সে সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে। যারা ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সম্পর্কে লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু তাহের জানান, মন্ত্রীর আল্টিমেটাম সবার জন্য নয়, মূলত যারা সাভারে প্লট বরাদ্দ পেয়েছে পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনো স্থানান্তরের কাজ শুরু করেনি তাদের জন্যেই এই আল্টিমেটাম। মন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিক ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার শিল্পমন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপির বর্জ্য পরিশোধন কাজ শুরু করতে হবে। যেসব ট্যানারি মালিক নির্মাণ কাজে বিলম্ব করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন, তাদের হাজারীবাগের কারখানার মালামাল ক্রোক করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০০৯ সালে হাজারীবাগের চামড়া শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করেছে সরকার। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা অর্থিক সহযোগিতাও সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের দিক থেকেও ওই এলাকায় ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তরের চাপ রয়েছে। এমনকি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত শিল্পের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞারও আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তর জরুরি বলে মনে করছে সরকার।
চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইউম জানান, ১২১টি ট্যানারিকে সরকার ক্ষতিপূরণও দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ নিয়েও স্থানান্তরের কাজ শুরু করেনি ২৮টি ট্যানারি।
এসআই/এসএইচএস/আরআইপি