ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

চামড়ার ভালো দাম না পাওয়ার কারণ খোঁজার তাগিদ এনবিআরের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:১৭ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

কমপ্লায়েন্স বা বিধিবিধান অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের অভাবে রপ্তানিকারকরা চামড়ার ভালো দাম পাচ্ছেন না বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, শুধু কর প্রণোদনা দিয়ে চামড়া খাতের বিকাশ সম্ভব নয়। চামড়ার ভালো দাম না পাওয়ার কারণ খুজেঁ বের করার তাগিদও দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রেই রপ্তানিকারকরা চামড়ার দাম পান না। আপনাদের (রপ্তানিকারক) অনেক সমস্যা আছে। শুধু কর প্রণোদনা দিলে এই শিল্পের বিকাশ ঘটবে, উন্নয়ন হবে, তা কিন্তু নয়। আপনারা এখন বাইরে থেকে চামড়া কেনেন। তাহলে এই কমপ্লায়েন্স করতে হলে কী করতে হবে, চামড়ার ভালো দাম পাওয়ার অন্তরায় কী আছে, সেগুলো বের করা ও সমাধান করার ব্যবস্থা নিয়ে আপনাদের নিজেদের মনে হয় একটু চিন্তা করা দরকার। মিনিস্ট্রির সঙ্গে বসা দরকার।

চামড়াখাত নিয়ে নিজের দুর্বলতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ট্যাক্স ছাড় দিয়ে এই শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। যতদিন আমরা কমপ্লায়েন্সে যেতে পারবো না, ততদিন দাম পাবো না।

আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এই সেক্টরের প্রতি আমার সফট কর্নার আছে। এ সুযোগ (ট্যাক্স ছাড়) দেওয়ার পরও এর বিকাশ কেন হয়নি। খুবই আশাবাদী ছিলাম এটা ভালো করবে। কোরবানির ঈদের সময় কাচাঁ চামড়া পাচার রোধে বর্ডার বন্ধ করে দেওয়া, ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করার পরও চামড়াখাত পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না।

এ খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য চাই। সেজন্য চামড়াজাত পণ্য একটা ভালো খাত। এই খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। এই খাতকে সাহায্য করতে চাই। তবে ভোক্তাদের দিকটাও আমরা দেখতে চাই। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে আমাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হবে।

এদিন চামড়াখাতের দুটি সংগঠন তাদের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- চামড়া প্রক্রিয়াকরণে অপরিহার্য কেমিক্যাল আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করা, রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত নগদ প্রণোদনার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ করা, সিইটিপি পরিচালনার কেমিক্যালস ও যন্ত্রাংশ বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়া, মহিষের মাংস আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা ইত্যাদি।

আর লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- শতভাগ রপ্তানিতে নিয়োজিত সিনথেটিক ফেব্রিক্স এর মিশ্রণে তৈরি পাদুকা প্রস্ততকারী কোম্পানি স্থাপনকালে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত নির্মাণ সামগ্রীর ওপর আয়কর, ভ্যাট মওকুফ। এছাড়া এ খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ হারে নির্ধারণ করা, শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইনপুট ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।

এ সময় অনেক ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেন জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড অটোমেশন প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। এটার বিভিন্ন মডিউল যখন সাকসেসফুলি রান করবে, তখন বন্ড ফ্যাসিলিটির জায়গাগুলো বৃদ্ধি করা যায় কি না সেটা দেখা হবে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করা হয়। এটা সবাই জানে। এই অপব্যবহার রোধ করতে হবে। অপব্যবহার যখন রোধ করতে পারবো, ভয়টা যখন চলে যাবে, তখন আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হবে। যে ২২টি আইটেমের কথা বলেছেন তার মধ্যে যেগুলো শুধু ট্যানারিতে ব্যবহার হয়, সেগুলোতে বন্ড সুবিধ দেওয়া যায় কি না সেটা আমরা ভেবে দেখবো। নগদ সহায়তার বিষয়টিও পরীক্ষা করা হবে।

বিটিএ চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, মানুষের কাপড় লাগবে, কিন্তু চামড়া পণ্য শৌখিন আইটেম। গত দুই বছরে মানুষ কম কিনেছে। এজন্য এ খাত সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিনোভেশন ও সিইটিপিতে আমাদের সমস্যা আছে। এসবের জন্য কমপ্লায়েন্স হয় না। ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি হয়েও পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। এর কারণে কাচাঁ চামড়ার ভালো দাম পাই না।

এলএফএমইএবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, করোনার কারণে রপ্তানিতে শৌখিন জিনিসের দাম যেমন পাচ্ছি না, আবার কাচাঁমাল কিনতে গেলেও সেখানে সার্টিফিকেশন, সিইটিপিতে সমস্যা। বিক্রি করতে গেলেও সমস্যা, প্রকিউরমেন্ট করতে গেলেও সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, বর্ডার দিয়ে গরু না আসায় আমাদের দেশে খামারি গড়ে উঠেছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে মহিষের মাংস আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করতে হবে। মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ হলে দেশী খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে উৎসাহী হবেন।

সভায় এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসএম/ইএ/এএসএম