বাণিজ্যমেলায় সেই চিরাচরিত ‘ঠকঠক শব্দ’
নতুন রূপে স্থায়ী ঠিকানায় প্রথমবারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হলেও প্রথমদিকের অবকাঠামোগত চিত্রের পরিবর্তন আসেনি। অস্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণের মতো স্থায়ী প্রাঙ্গণেও মেলা শুরু হওয়ার পরও চলছে স্টল তৈরির কাজ। ফলে মেলার উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সবদিক থেকেই হাতুড়ি, কাঠ, পেরেকের ঠকঠক শব্দ কানে আসছে। এতে বিরক্ত হচ্ছেন মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।
শনিবার (১ জানুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চারদিকেই অসম্পূর্ণ স্টল রয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে যেমন দেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তেমনই বিদেশি প্যাভিলিয়নও রয়েছে। এমনকি মেলা প্রাঙ্গণের কমপ্লেক্সের মধ্যেও বেশিরভাগ স্টল তৈরির কাজ চলছে। তবে দেশি বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্টল তৈরি করে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে।
মেলা প্রাঙ্গণের উত্তর-পশ্চিম দিকে অসম্পূর্ণ স্টলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কমপ্লেক্সের বাইরে উত্তর-পশ্চিম দিকের প্রায় প্রতিটি স্টলের কাজই অসম্পূর্ণ রয়েছে। বাঁশ, কাঠ, পেরেক দিয়ে চলছে এসব স্টল তৈরির কাজ। ফলে মুহুর্মুহু কানে ভেসে আসছে ঠকঠক শব্দ। এমনকি কমপ্লেক্সের ভিতরেও পশ্চিম দিকের প্রায় সবকটি স্টল অসম্পূর্ণ দেখা গেছে।
মেলায় ঘুরতে আসা নাদিয়া বলেন, গত বছর আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলায় অনেকবার গিয়েছি। এখানে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্রাঙ্গণ হওয়ায় প্রথমদিনই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু মেলা শুরু হলেও প্রায় সব স্টল অসম্পূর্ণ রয়েছে। এটা দেখে বিরক্ত লাগছে। স্থায়ী ঠিকানার মেলা এমন হবে কেন! উচিত ছিল মেলা শুরু হওয়ার আগেই সব স্টলের কাজ শেষ করা।
তিনি বলেন, আমরা মিরপুর থেকে এসেছি। এই মেলা প্রাঙ্গণ অনেক দূরে। আসতে অনেক সময় লাগে। আসতেও অনেক কষ্ট। এতো কষ্ট করে মেলায় আসলাম, কিন্তু মেলার পরিস্থিতি দেখে হতাশ হতে হয়েছে। মেলার সব স্টল পুরোদমে চালু হলে দেখতে কিছুটা হলেও ভালো লাগতো।
যাত্রাবাড়ী থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, স্থায়ী আঙ্গিনায় মেলা হওয়ায় ভেবেছিলাম প্রথমদিনই সব স্টলে বিক্রি শুরু হবে। কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকে দেখতে পাচ্ছি এখনো ১০ শতাংশ স্টল তৈরি হয়নি। চারদিকে স্টল তৈরির বিরক্তিকর ঠকঠক শব্দ। পরিবার নিয়ে এসে চরম হতাশ হলাম।
তিনি বলেন, আজ ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার নিয়ে এসেছি। যাত্রাবাড়ী থেকে এখানে আসতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। রাস্তায় অনেক সময় চলে গেছে। এতো দূরের মেলায় এবার আর আসা হবে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে এখানে মেলা হলে আর আসবো কি না বলতে পারছি না। রাস্তার পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, তাহলে হয়তো আসতে পারি।
কুড়িল থেকে মেলায় আসা আশিকুর রহমান বলেন, ৪০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মেলায় ঢুকেছি। কিন্তু মেলায় তো কিছুই দেখতে পারছি না। শুধু স্টল তৈরির দৃশ্য দেখছি, আর কানে ঠকঠক শব্দ শুনছি। আগারগাঁয়ও মেলার শুরুতে এমন দৃশ্য দেখতাম। স্থায়ী ঠিকানায়ও মেলার কাঠামোগত পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।
তুরস্কের একটি স্টল তৈরির কাজ করছিলেন সাঈদ। তিনি বলেন, আমরা দ্রুত স্টল তৈরি ও গোছানোর কাজ শেষ করতে চেষ্টা করছি। তবে স্টল পুরোপুরি প্রস্তুত করতে আরও পাঁচ-সাতদিন সময় লাগবে। আসলে প্রথমদিকে বিক্রি কম হয়, তাই মেলা শুরু হওয়ার আগে স্টল প্রস্তুত করা হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এবারই প্রথম স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো মাসব্যাপী এবারের মেলাও সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত) চলছে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা, শিশুদের ২০ টাকা।
এবার মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য ও হোম ডেকর।
এবারের বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল রয়েছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্কসহ মেলায় ১১টি দেশের স্টল রয়েছে।
এমএএস/কেএসআর/জেআইএম