নামাপাড়ার ছিপ যাচ্ছে সারাদেশে
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা সদর থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার ভেতরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম নামাপাড়া। ইউনিয়ন মইলাকান্দা। সোনালি ধানের ক্ষেত আর গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পথ। বসতি খুব ঘন নয়। ধানক্ষেতের উত্তর পাশে কিছু ছন-টিনের ঘর। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক চোখে পড়লো ভঙ্গুর দশার। এর পাশ দিয়ে চলা এক বৃদ্ধ বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ছিপের গ্রাম খোঁজ করতেই দেখিয়ে দিলেন।
একটু এগোতেই দেখা হলো যুবক সুমনের সঙ্গে। জানালেন তিনি নিজে ছিপের কারবার করেন। সকাল থেকে কাজ শেষে তখন বিশ্রাম করছিলেন। আবার শুরু করলেন ছিপ বানানোর কাজ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জানালেন তাদের নানান চড়াই-উৎরাই, অভিজ্ঞতার কথা।
জেলার সবচেয়ে বড় ছিপের গ্রাম মুক্তাগাছার বাদেমাঝিরা। তবে নামাপাড়ারও বেশ নাম আছে ছিপ তৈরিতে। বর্তমানে এখানকার ৩৫-৪০ ঘর এ কাজ করছে। ছিপ ফিরিয়েছে তাদের ভাগ্যের চাকা। সুমন তৃতীয় পুরুষ হিসেবে তৈরি করছেন ছিপ। তার বাবা-দাদাকেও দেখেছেন ছিপ তৈরি করতে। শিখেছেন তাদের কাছ থেকেই। অবসর বা অফ সিজনে কৃষিকাজ করেন। ছিপ তাদের বাড়তি আয়। সিজনে একেক পরিবার মাসে লাভ করে ১৫-২০ হাজার টাকা। তবে আয়ের অংকটা নির্ভর করে পরিবারের সদস্য সংখ্যার ওপর।
সুমনকে দেখা গেলো কয়লার চুলার পাশে বসে কাজ করতে। জানালেন, তারা বাঁশ সংগ্রহ করেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে। ট্যাঙ্গারু বাঁশ তারা গাঁটি বেঁধে কিনে আনেন। এই বাঁশ দেখতে কঞ্চির মতো। জাতটাই এমন। পরে বাঁশগুলো প্রথমে চাঁছা হয়। চাঁছ দেওয়ার পর আসে ছিপের শেপে নেওয়ার কাজ। অনেক বাঁশ বাঁকা থাকে। আগুনে পুড়িয়ে সোজা করতে হয়। এজন্য লাগে কয়লা, ছিদ্র করার যন্ত্র, করাত ও আগুন। আগে হাতে বাতাস করে বা চোঙায় ফুঁকে আগুন জ্বালিয়ে রাখলেও এখন ব্যাটারিচালিত ফ্যান দিয়ে বাতাস দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। বাঁশগুলো এক গিঁট পরপর ছিদ্র করতে হয়, না হলে ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কয়লার টিন কিনতে খরচ হয় প্রতিটি ৫০ টাকা।
সুমন বলেন, আমরা শ’ হিসেবে বাঁশ কিনি। একশ’ বাঁশ কেনা পড়ে ১৫শ’ টাকা। একটা ছিপ বানাতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট। বাড়ির নারীরা সাধারণত চাঁছার কাজটি করেন। একটি বাঁশ চাঁছতে গড়ে ২-৩ মিনিট লাগে। একদিনে একজন ৫০-৭০টি ছিপ বানাতে পারেন। পুড়িয়ে গিঁট সোজা করে দেখতে হয় সোজা হয়েছে কি না।
‘বাংলাদেশের সব জায়গায় আমাদের তৈরি ছিপ যায়। ঢাকা, রাজশাহী, নাটোর, বরিশাল সব জায়গায়। তবে উত্তরাঞ্চলে বেশি যায়। আমরা বিক্রি করি প্রতি শ’ আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হয়। চৈত্র থেকে কার্তিক মাস হলো সিজন। বিক্রি করার সিজন চার মাস। বাকি সময় আমরা বানিয়ে রাখি। এক সিজনে আমরা ১৫-২০ হাজার বাঁশ থেকে ছিপ তৈরি করে বিক্রি করতে পারি। যাদের লোক সংখ্যা বেশি তারা হয়তো আরও একটু বেশি পারে। এটা করেই আমাদের ঘর-সংসার চলে যায়।’
১৪ বছর ধরে ছিপ বানাচ্ছেন সুমন। জানালেন, ছোট ছিপে খরচ ১৫-১৮ টাকা। বিক্রি ২৫ টাকা। বড়গুলোর খরচ ২৫-২৮ টাকা। বিক্রি ৪০ টাকা। এই বাঁশ সহজে নষ্ট হয় না। পুঁটি, বাইলাসহ বিল-হাওরের মাছ ধরতেই মূলত এই ছিপ ব্যবহার করা হয়। রাজশাহী, বগুড়ায় বেশি চলে। পাইকাররা গাড়ি পাঠিয়ে কিনে নিয়ে যায়।
সুমন ও তার বড়ভাই আতাউরের ঘর-বারান্দায় দেখা গেলো কয়েক হাজার তৈরি ছিপের স্তূপ। সবই বিক্রির অপেক্ষায়। প্রধান পেশা না হলেও কৃষিকাজের অবসর সময়ে এই ছিপ তৈরিই বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেলো আরেক বাড়িতে কাজ করছেন ফারুক। উঠানে ছিপে চাঁছ দিচ্ছেন তার স্ত্রী ও ভাবি। পাশের ছাপড়া ঘরে আগুন জ্বেলে সকাল থেকে শুরু করে দুপুর অব্দি কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে ৪০টির বেশি ছিপ তৈরি করে ফেলেছেন। এই এলাকার আরও কয়েক ঘরেও দেখা গেলো একই কাজ চলছে। সবার ঘরে ছিপ রাখার জন্য আলাদা ঘর আছে। কেউ রেখেছেন গোয়ালের আড়ার ওপর।
সুমন ছিপ তৈরি করছেন দুই বছর হলো। আগে কাজ করতেন সোয়েটার কারখানায়। এখন কাজ নেই। ছিপ তৈরি করেই সংসার চলছে তার। সুমনের স্টকে আছে ১৪ হাজারের মতো ছিপ। বিক্রি হবে মূলত বর্ষা মৌসুমে। পায়ের আঙুলের ফাঁকে বাঁশের আগা চেপে ধরে পিঁড়িতে বসে দা দিয়ে চাঁছ দিচ্ছিলেন অঞ্জনা। তিনি বলেন, আমরা সারাদিন যখনই অবসর পাই কাজ করি। একদিনে একশোর বেশি ছিপ চেঁছে ফেলতে পারি। প্রায় ১৫ বছর হলো একাজ করছি।
পুঁজি খুব বেশি লাগে না। সুমন, আতাউর, ফারুকসহ অন্যরা জানান, সরকারি সহায়তা পেলে আরও বেশি কাজ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ৬ নম্বর নামাপাড়া ওয়ার্ডের মেম্বার খায়রুলের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বাঁশ এনে এটা তৈরি হয়। কিশোরগঞ্জ আর নামাপাড়া, মুক্তাগাছা ছাড়া অন্য কোথাও তৈরি হয় না। এটা এলাকার অর্থনীতির অন্যতম অংশ। তবে সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ জাগো নিউজকে বলেন, আমি শুনেছি ওখানে বড়শির ছিপ তৈরি করে। আমরা তাদের প্রমোট করবো। বিআরডিবি বা যুব উন্নয়নের মাধ্যমে অথবা সমিতিভুক্ত করে দেখি কোনো লোনের ব্যবস্থা করা যায় কি না। আমরা চেষ্টা করছি।
এএ/এইচএ/এমকেআর
টাইমলাইন
- ০১:২৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ‘বিনার সূর্যমুখী জাত অবমুক্ত হলে তেল ফসলে বিপ্লব ঘটবে’
- ০৮:৫৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ‘সড়ক’ যেন গলার কাঁটা
- ০৮:৪৯ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ বোরোর চরের কাঁচামরিচ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে
- ০৯:০৫ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ বিলুপ্তির পথে লাফা বেগুন, বেশি ফলনের বেগুনে ঝুঁকছেন কৃষক
- ০৮:৩০ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ বারোমাসি টমেটোয় ১০ গুণ লাভ
- ০৩:৫৬ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ সম্ভাবনার কুমির চাষে ‘বাধা’ আইনি জটিলতা!
- ১২:১৫ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে মালচিং চাষ, কম খরচে ভালো ফলন
- ০৮:৩৩ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ লেবু-মাল্টার জোয়ারে হারাতে বসেছে ফুলবাড়িয়ার হলুদ
- ১১:১২ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ শ্বশুরের দেওয়া ৪০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকার মালিক রাণী
- ০৮:০৪ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ নামাপাড়ার ছিপ যাচ্ছে সারাদেশে
- ১০:১৬ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ এক গাছে ৪ সাইজের বরই, মিলবে আমের মৌসুমেও
- ০৮:২০ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০২১ ‘তেল আমদানির ১৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বিনাসরিষা’
- ০৪:২১ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ মুক্তা চাষে সম্ভাবনা, বিক্রি নিয়েই দুর্ভাবনা
- ০২:০৭ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ আধুনিক নগর গড়তে দরকার জনগণের ইতিবাচক সাড়া ও দপ্তরের সমন্বয়
- ১০:৫১ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১ মেঘালয় ঘেঁষা দুই স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির নতুন দুয়ার
- ০৭:৫৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২১ তিনবার এমপি হলেও এলাকাবাসীর কাছে প্রায় অচেনা
- ০৯:২৪ এএম, ২৫ নভেম্বর ২০২১ ফুলবাড়িয়ার লেবু যাচ্ছে ইউরোপে
- ০২:০৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২১ কৃষকের ধানের মণ ৪৩ কেজিতে, ব্যবসায়ীর সাড়ে ৪০
- ০৬:৩৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২১ ২২ পদের ভর্তার পিঠায় মাসে আয় ২ লাখ টাকা
- ০৮:২২ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২১ চিকিৎসকের পরামর্শে মাল্টাচাষ, লাখ টাকা খরচে আসছে কোটি টাকা
- ০২:৫৩ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ ‘কৃষ্ণা কেবিন’র মিষ্টিতে ‘কৃতকার্য’ তিন প্রজন্ম
- ১০:৫৯ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ দেশি ছোট মাছ ফিরিয়ে আনতে বিপ্লব ঘটাবে জিন ব্যাংক
- ১২:১০ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২১ বছরে নষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল, আসছে পরমাণু প্রযুক্তি
- ০৮:৫৮ এএম, ১৮ নভেম্বর ২০২১ তেলাপিয়ার নতুন প্রজাতি, প্রতিটির ওজন আড়াই কেজি
- ০৩:২৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১ পাতে ফেরার অপেক্ষায় জারুয়া-আঙরাসহ আরও ৮ দেশি মাছ
- ১১:৫০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১ আ’লীগের দুর্গ গফরগাঁও, একগুচ্ছ দাবি ভোটারদের
- ০৯:৫৯ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ ‘গরু শিথানে নিয়া হুতি, চোরে নিলে আগে আমারে নেওয়া লাগবো’
- ০৮:৫৭ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ এটাই বাংলাদেশের ‘প্রথম’ সৌদি খেজুর গাছ
- ০৪:৪৬ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ ‘এখানে আ’লীগ-বিএনপি-জাপা এক পরিবার’
- ০২:১৬ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ সৌদি খেজুর চাষে ‘পাগল মোতালেব’র বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা
- ১২:১২ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ চুলে খুলেছে হাজারো নারীর ভাগ্য