দায় নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, সমাধানের চেষ্টা করছি
ই-কমার্সে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দায় নিয়েই আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে সমাধান করা যায়।’ বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা বিষয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে অর্থনৈতিক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ই-কমার্সে প্রতারণার জন্য প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন দায় এড়ানো যায় না, আমরা দায় এড়াতে চাচ্ছি না। এজন্যই সভাগুলো করছি। দায় নিয়ে নিচ্ছি কীভাবে, একটা ঘটনা ঘটে গেছে বলেই যে সব নষ্ট হয়ে যাবে বন্ধ হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। আমরা দায় নিচ্ছি যে হাজার হাজার লোক ই-কমার্সের ওপর বেঁচে আছে। তাদের তো আমরা ডোবাতে পারবো না। এজন্য দায় নিয়েই আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে সমাধান করা যায়। তবে টাকা-পয়সার বিষয়টা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
১০ থেকে ১২ কোম্পানি যে জালিয়াতি করলো সেখানে গ্রাহকের টাকা উদ্ধারের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা ফেরত দেবো... সরকার তো টাকা নেয়নি। যে লোকটা বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছে সরকার তো সে লাভের ভাগিদার নয়। আমরা যেটা বলতে চাই, মানুষকে সতর্ক হওয়া দরকার। আমরা কী করতে পারি। এখন যেটা করা হয়েছে, মানুষ জিনিস পাওয়ার আগে যেন কোনো পেমেন্ট না করে।
তাহলে কী আমরা বলবো যারা ইভ্যালিতে টাকা পায়, তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম? এমন প্রশ্নেন জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলবো তাদের কী সম্পদ আছে। তাদের সে সম্পদ দিয়ে কতটুকু অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। সেটা দেখতে হবে। সরকার যেটা করেছে, আইন প্রয়োগ করেছে। সরকার যেটা করেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে বিচার হবে। সেক্ষেত্রে সরকার তার দায়িত্ব পালন করেছে। পরবর্তীকালে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আজও আলোচনা হয়েছে, আগামীতে যাতে কেউ চিটারিতে না পড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া লাগবে। যেটা ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত করে দেখা যেতে পারে তাদের কাছে কতটুকু সম্পদ আছে, সেটা নিয়ে এসে মানুষের দেনা দেওয়া। যদি আমি ইভ্যালিকে ধরি তাহলে দেখতে হবে কোম্পানি চালানোর আগে তার সক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটা দেখতে হবে। তার কাছ থেকে শুনতে হবে। এই পরিকল্পনা তাকে নিয়ে আসতে হবে যে, আমি এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আর ব্যবসা করবো না, ব্যবসা করবে সে। তার সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। তাকে জেলে ভরে রাখলে তো কিছু পাবে না গ্রাহকরা। কোনো কিছু নাই, শূন্য, এ রকম অবস্থায় বের করে দিলে তো হবে না। কাউকেই কোনো টাকা দিতে পারবে না। সত্যিকার অর্থে তাদের যদি কোনো পরিকল্পনা থাকে যে, আমি এভাবে আবার ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই, সেটা যদি আমাদের দেওয়া হয়, তা আমাদের কাছে যদি লজিক্যাল মনে হয়, আমরা সেটা কনসিডারে নেবো যে এবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
ই-কমার্সের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ৪ জুলাই যেই নীতিমালা চালু হয়েছে। বিশেষ করে এসক্রো সিস্টেম চালু হয়েছে। এখন কিন্তু কোনো কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারছে না। এখন আর চিট করার কোনো সুযোগ থাকছে না। আমরা একটা হিসাব পেয়েছি। গত জুলাই মাসের আগ পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার মতো বেচাকেনা হয়েছে ই-কমার্সে। নীতিমালা চালুর পর ৪০০ কোটি টাকার অর্ডার পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অর্ডার এসক্রো সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।
ইভ্যালির রাসেলকে মুক্তি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তার হাত যদি শূন্য হয়, যদি তার কাছে গ্রাহককে ফেরত দেওয়ার মতো কোনো টাকা না থাকে তাহলে তাকে মুক্তি দিয়ে মুক্ত বাতাসে ঘুরতে দিয়ে লাভ কী। আর যদি দেখা যায় তার সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়া যাবে তাহলে মুক্তির বিষয়টি আইন বিবেচনা করবে।
সবমিলিয়ে ১০-১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ইভ্যালির মতো একই পদ্ধতির ব্যবসা চলেছে এবং সেখানে গ্রাহকের টাকা আটকা পড়েছে। তাদের টাকা ফেরতের বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার তো আর টাকা নেয়নি। যারা কেনাকাটা করে লাভবান হয়েছিল সেই লাভের ভাগও পায়নি। সরকার কীভাবে টাকা ফেরত দেবে। তারপর এ বিষয় নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করবো।
সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আইএইচআর/ইএ/জিকেএস