ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

টিকা প্রাপ্তিতে দেরি: বৈদেশিক চাকরির বাজার হারাচ্ছেন মেরিনাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশি মেরিনাররা সমুদ্র তথা বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মেলে ধরছেন লাল-সবুজের পতাকা, প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশকে। দেশের জন্য বয়ে আনছেন বার্ষিক প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। তবে বৈশ্বি মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে মহাসংকটে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে টিকা প্রাপ্তির কারণে এ সংকট বেড়েছে কয়েকগুণ। সময়মতো টিকা না পাওয়ায় বৈদেশিক চাকরির বাজার হারাচ্ছেন মেরিনাররা। সেই সঙ্গে দেশ হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

শনিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিশ্বায়নের যুগে মেরিটাইম সেক্টরের আধুনিকায়ন পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন গোলাম মহিউদীন কাদরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার চিফ অফিসার মো. আলী হোসেন, এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. আবু সায়ীদ, অফিস এক্সিকিউটিভ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অঙ্গন দাস প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেরিতে এসএমএস পাওয়ায় টিকা গ্রহণে মেরিনারদের অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অনেকের পক্ষে সময়মতো চাকরিতে যোগদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ চাকরিতে যোগদানের সময় মেরিনারদের টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণের সনদ দেখাতে হচ্ছে। এতে বাংলাদেশি মেরিনাররা বৈদেশিক চাকরির বাজার হারাচ্ছেন। এর মাধ্যমে দেশ হারাচ্ছে বিপুল পবিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা। এজন্য বাংলাদেশি মেরিনারদের টিকা প্রাপ্তিতে দ্রুত এসএমএস প্রদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।

তারা জানান, জাহাজ হতে একটি দেশে প্রত্যাবর্তনের সময় করোনা টেস্টের সার্টিফিকেট প্রদর্শনের নিয়ম রয়েছে। এ কারণে জাহাজে চাকরিরত বাংলাদেশি মেরিনারদের সাইন অফ প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সিঙ্গাপুর মেরিটাইম অথরিটির সার্কুলার অনুসারে সিঙ্গাপুরে কোনো মেরিনারকে সাইন অফ করতে হলে পূর্ববর্তী পোর্টে পিসিআর টেস্ট করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় পূর্ববর্তী পোর্টে পিসিআর টেস্ট করা সম্ভব হয় না বা জটিল হয়ে পড়ে। আবার সিঙ্গাপুর এসে সাইন অফ করে দেশে আসার জন্য নিয়ম অনুযায়ী পুনরায় পিসিআর টেস্ট করতে হয়। ফলে সামগ্রিক প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশি মেরিনারদের অনেকাংশকেই সিঙ্গাপুর থেকে সাইন অফ করতে হয়। এই জটিল প্রক্রিয়ার কারণে বিশ্বের জাহাজ কোম্পাণিগুলো বাংলাদেশি মেরিনার নিয়োগের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেীশ মেরিনারদের সাইন অফ প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য অনতিবিলম্ব উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংগঠনটির নেতারা জানান, উচ্চ করোনা ঝুকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ভ্ৰমণকারী/যাত্রী র্যাপিড টেস্টের (অ্যান্টিজেন টেস্ট) নেগেটিভ ফলাফল ব্যতীত বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশসমূহে প্রবেশ করতে পারছে না। সে সকল দেশ থেকে বাংলাদেশি মেরিনারদের সাইন অনের জন্য র্যাপিড টেস্টের (অ্যান্টিজেন টেস্ট) ফলাফলের প্রয়োজন হচ্ছে। উক্ত র্যাপিড টেস্ট বিমানে ওঠার চার ঘণ্টা পূর্বে করতে হয়। সেজন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে র্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে বাংলাদেশি নাবিকদের নতুন পাসপোর্ট প্রদান ও নবায়ন কার্যক্রম আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক নাবিকদের পক্ষে সশরীরে দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন এবং ইলেকট্রনিক ট্রাভেলপাস সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে যায়। এজন্য সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস/মিশনসমূহে পাসপোর্টের কপির মাধ্যমে নাবিকদের জন্য ইলেকট্রনিক ট্রাভেলপাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংগঠনটি এসটিসিডব্লিউ (বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের সনদায়ন নির্ধারণ করা হয়) অনুসারে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন সিওপি এক্সাম (সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি/জাহাজে যোগদানের জন্য নাবিকদের প্রয়োজনীয় শর্ট কোর্সসমূহের অধিকতর মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষা) না নিতে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের কাছে দাবি করে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া বাতিল করে শুধুমাত্র অনলাইন মূল্যায়ন বা শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার (যেকোনো একটি) মাধ্যমে সিওপি প্রদান করার দাবি জানান তারা।

তারা জানান, এসটিসিডব্লিউ অনুসারে এই সিওপি করা বাধ্যতামূলক নয়। তাই মানোন্নয়নের জন্য সিওপি সিস্টেম বজায় রাখতে চাইলে তা হওয়া উচিত সম্পূর্ণভাবে ফি মুক্ত। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর স্বেচ্ছামূলকভাবে এটি করতে পারে। কিন্তু এর জন্য চাপিয়ে দেয়া ফি গ্রহণযোগ্য নয়।

ইএআর/ইএ/এএসএম