নিরীক্ষা হবে ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রশাসক মোল্লার কার্যক্রম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স প্রশাসক পদ থেকে বাদ পড়া সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার কার্যক্রম নিরীক্ষা করা হবে। মাসিক ৪ লাখ টাকা সম্মানীতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।
প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার কিছু কার্যক্রম বিতর্কের জন্ম দেয়। বিশেষ করে কয়েকজন কর্মীকে অস্বাভাবিক পদোন্নতি ও বদলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ৬ মার্চ ‘বদলি-পদোন্নতি, উকিল নোটিশে ডেল্টা লাইফে ভয়ার্ত পরিবেশ’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে চার মাসের মাথায় গত ৯ জুন সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার নিয়োগ বাতিল করে ডেল্টা লাইফে নতুন প্রশাসক বসিয়েছে আইডিআরএ। সেই সঙ্গে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের বিশেষ অডিট (নিরীক্ষা) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই বিশেষ নিরীক্ষা করতে দেশি বা বিদেশি একচুয়ারি ফার্ম নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নতুন প্রশাসককে।
সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত আইডিআরএর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সর্বাত্মক মিতব্যায়িতা ও কর্মদক্ষতার সাথে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বীমা আইন ২০১০ এর ৯৫(২) ধারা অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে আপনার নিযুক্তি বাতিল করা হলো।’
এদিকে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার নিয়োগ বাতিল করে সাবেক যুগ্ম সচিব প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলামকে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন প্রশাসকের সম্মানী আগের প্রশাসকের মতোই রাখা হয়েছে।
নতুন প্রশাসককে দেয়া এ সংক্রান্ত চিঠিতে আইডিআরএ বলেছে, বীমা আইন ২০১০ এর ৯৬ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডেল্টা লাইফের নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রশাসককে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আপনার মাসিক সম্মানী সর্বমোট ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। তবে উৎসব ভাতা মোট সম্মানীর ৬০ শতাংশ প্রাপ্ত হবেন। প্রশাসক হিসেবে ডেল্টা লাইফের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক মিতব্যায়িতা ও কর্মদক্ষতার সঙ্গে বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী রুটিন কার্যক্রম পরিচলনা করবেন।’
প্রশাসক যথাশিগগির সম্ভব নিয়োজিত অডিট ফার্ম এবং প্রয়োজনে দেশি বা বিদেশি একচুয়ারিয়াল ফার্ম দিয়ে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির নিরীক্ষা কর্যক্রম সম্পন্ন করবেন। সেই সঙ্গে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের বিশেষ অডিট সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন- বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলন করে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্ধেষপূর্ণ আচারণেরও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ সম্মেলনে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমানের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান অভিযোগ করে বলেন, ‘আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন এক সময় ডেল্টা লাইফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। এ জন্য তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের একচ্যুারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস অনুমোদন দেননি। এছাড়া মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নবায়ন অনুমোদন না দিয়ে এবং কোম্পানিকে নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে বহিষ্কার করে নতুন প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিচ্ছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।’
চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি কোম্পানির কাছে প্রথমে ২ কোটি, পরবর্তীতে ১ কোটি ও সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ও ট্রান্সক্রিপটি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন।’
এমএএস/এমআরআর/জেআইএম