ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

‘করোনাকালে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিচ্ছে সরকার’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০০ পিএম, ৩১ মে ২০২১

আগামী বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন হবে। এই বাজেট নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে নিজ দলের পরিকল্পনা নিয়ে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান। ২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ এক দশক জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন কাজে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। আগামী বাজেট নিয়ে উত্তর দিয়েছেন বেশ কিছু প্রশ্নের।

জাগো নিউজ : কেমন হবে করোনাকালে বাজেট?

সাদরুল আহমেদ খান : করোনাকালে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। মহামারি করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের জন্য কর ও ভ্যাট ছাড়ের বিশাল বাজেট দেয়া হবে। বাজেটে করের বোঝা না বাড়ায় স্বস্তি পাবেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ আয়ের মানুষ। কর দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যায় পড়তেন, সেক্ষেত্রেও ব্যবসাবান্ধব কিছু পদক্ষেপ আসছে। ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি হয়রানিমুক্ত থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। যে ব্যক্তির যত বেশি সম্পদ তিনি তত বেশি কর প্রদান করবেন। এ জন্য আসন্ন বাজেটে সম্পদশালীদের সারচার্জ (সম্পদ কর) আরও বাড়ানো হবে। দাম বাড়বে বিলাসী পণ্যের, তবে কমবে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের।

জাগো নিউজ : কেমন হবে বাজেটের আকার?

সাদরুল আহমেদ খান : জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা আগামী বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বড় ব্যয়ের এই বাজেটে অর্থসংস্থানে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং বিদেশি ঋণ ও অনুদানের ওপর। এবারই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণ নেয়া হবে বাজেট বাস্তবায়নে। এছাড়া কর আদায় বাড়াতে সক্ষম ব্যক্তিদের করনেটের আওতায় নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অর্থনীতি সচল রাখতে এবারও করছাড় দিয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট ঘোষণা করা হবে।

জাগো নিউজ : বাজেট কি ব্যবসাবান্ধব হবে?

সাদরুল আহমেদ খান : আগামী বাজেট হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব বাজেট। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল রেখে উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগকারীদের নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে। নতুন করে কোনো খাতে ভ্যাট ও কর আরোপ করা হচ্ছে না। করোনায় সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে বড় চাপ তৈরি হলেও বাংলাদেশ দ্রুত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করায় সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। করোনার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ধাক্কা যাতে সামলানো যায় সেভাবেই আগামী বাজেট দেয়া হবে। মহামারি করোনার ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

জাগো নিউজ : কর ও ভ্যাট কি বাড়বে?

সাদরুল আহমেদ খান : কর ও ভ্যাট ছাড়ের বাজেট। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করতে কর ও ভ্যাট ছাড় দিয়ে আগামী বাজেট ঘোষণা করা হবে। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার কমলেও বাড়বে গাড়ির মতো বিলাসী পণ্যের। স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সবধরনের দ্রব্যের দাম কমবে। আর সিগারেট, বিড়ি ও জর্দার মতো পণ্যের দাম বাড়বে। দামি প্রসাধনী পণ্য আমদানিতে শুল্কহার বাড়লেও কমবে সবধরনের ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের। এছাড়া ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ও ভ্যাটছাড় পাবেন। আমদানি পর্যায়ে আগাম আয়কর (এআইটি) হার কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত আগাম আয়কর দিতে হয়, যা কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এ হার কমিয়ে ১ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারে এনবিআর। আমদানি পর্যায়ে আগাম কর (এটি) ও ভ্যাট কমতে পারে। কাঁচামাল আমদানিতে বর্তমানে ৪ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এ হার ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। এতে ব্যবসায়ীদের কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়বে।

jagonews24

জাগো নিউজ : করপোরেট ও ব্যক্তি পর্যায়ে কর কেমন হবে?

সাদরুল আহমেদ খান : অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, সরবরাহ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। এ সুবিধা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়, উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেয়া হতে পারে। তবে ব্যাংক, বীমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ও তামাকজাত পণ্যেও কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির করমুক্ত লভ্যাংশের সীমাও বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লাভের ৫০ হাজার টাকা করমুক্ত। ব্যক্তি-শ্রেণির আয়কর অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে। সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

জাগো নিউজ : অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে আনার উদ্যোগ আছে কি?

সাদরুল আহমেদ খান : আগামী অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকতে পারে। শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার পরিকল্পনা রয়েছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে এ খাতে। ব্যবসায়ীদের চলতি পুঁজির ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন পর্যায়ে উৎসে কর কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার ভ্যাটমুক্ত সীমা ৫০ লাখ টাকা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে কর সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য সরকার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় জোর দেবে। আগামী অর্থবছর থেকে ভ্যাট রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হবে। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) ব্যবহার বাড়ানো হবে।

জাগো নিউজ : বিত্তবানরা কি কোনো ছাড় পাবেন?

সাদরুল আহমেদ খান : সম্পদশালীরা বেশি কর দেবেন। যার যত বেশি সম্পদ তিনি তত বেশি কর প্রদান করবেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই নীতি অবলম্বন করা হবে। এ জন্য সম্পদশালীদের সম্পদকর বা সারচার্জ বাড়ছে আগামী বাজেটে। ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করে স্ল্যাব পুনর্গঠন করা হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক লেনদেনে ব্যাপক করছাড় আসছে। বর্তমানে নিট সম্পদের মূল্যমান তিন কোটি টাকা পর্যন্ত হলে সারচার্জ দিতে হয় না। তবে সম্পদের মূল্যমান তিন কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা হলে বা একাধিক মোটরগাড়ি থাকলে বা যেকোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুটের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকলে ১০ শতাংশ কর বা তিন হাজার টাকা ন্যূনতম সারচার্জ দিতে হয়। রাজস্ব আদায়েও কঠোরতা আনা হচ্ছে। বছরে ১০০ কোটি টাকা বা এর বেশি ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে- এমন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে আমদানি-রফতানি, ভ্যাট পরিশোধের তথ্য মিলিয়ে দেখতে আসছে বাজেটে নতুন সফটওয়্যার বিআইএস (বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার) ব্যবহারের নির্দেশ থাকবে। অডিটের তথ্য খতিয়ে দেখতেও এ প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হবে।

সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন বাজেট দেশবাসীর জন্য নিয়ে আসছে একগুচ্ছ সুখবর। আর সে সুখবর কাছে পেতে ৩ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এইচএস/বিএ/এএসএম