যেমন বাজেট চান তরুণ উদ্যোক্তারা
মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে হুমকির মুখে বিশ্ব অর্থনীতি। করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন দেশে লকডাউন দেয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। ফলে লোকসান গুনছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও।
এছাড়া করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আসছে নতুন (২০২১-২০২২) অর্থবছরের বাজেট। এ বাজেট নিয়ে কী প্রত্যাশা তরুণদের? কেমন বাজেট চান তারা? এ বিষয়ে জাগো নিউজ কথা বলেছে কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে।
‘উৎসে কর শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে’
আসন্ন বাজেট কর অবকাশ সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের যে ট্যাক্স হলিডে (কর অবকাশ সুবিধা) আছে, সেটাকে বাড়িয়ে আমরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত করতে বলছি। আমাদের সামনে কিছু টার্গেট রয়েছে, আর বিদেশি বিনিয়োগ যদি আনতে চাই সেক্ষেত্রে এমন লংটার্ম (দীর্ঘমেয়াদি) সুযোগ দেয়া হলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনরে ডিজিটাল ট্রানজেকশন থেকে ভ্যাট সরিয়ে নিতে বলছি। সেটা ক্রেডিট কার্ড হোক আর যাই হোক, সেটা ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পরিষেবায় উৎসে কর সাড়ে ৪ শতাংশ, সেটাকে আমরা পুরোপুরি শূন্য করতে বলছি। দেখা যাচ্ছে, আমরা একটা বিল করলাম, ইনভয়েসটা (রসিদ) জেনারেট হলো, তখন আমরা ভ্যাটটা দিয়ে দিলাম। কিন্তু পরে আমরা যখন বিলটা পাই তখন ক্লায়েন্ট (গ্রাহক) হয়তো আমাদের পুরো বিল দেন না। যেহেতু এটা সার্ভিস, তাই বিভিন্ন সময় বিলের তারতম্য হয়।’
‘তাঁতশিল্প বাঁচাতে তাঁতপণ্য থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে’
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ফোরামের সভাপতি ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ‘করোনাকালে দেশের ই-কমার্স সুদিন দেখছে। তবে এখন ঢাকার বাইরে এটার সেভাবে বিস্তৃতি ঘটেনি। গ্রামে ডেলিভারির মতো লজিস্টিকস ঠিকমতো পৌঁছায়নি। নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন উদ্যোক্তারা। ট্রেড লাইসেন্সে ই-কমার্সের খাতটা রাখতে হবে। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কিছু করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করতে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। সেখানে নারীরাও আছেন। ৪ শতাংশ সুদে দুই বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা চাইছি, সময়টা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হোক। কারণ উদ্যোক্তারা দুই বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না। সময় না বাড়ালে এই লোনের প্রেসারে কাজটা ঠিকমতো করতে পারবেন না তারা।’
এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের তাঁতিদের বাঁচাতে হলে তাঁতপণ্যের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমাতে হবে। তাঁতপণ্য বিক্রি করতে গেলে কাস্টমাররা বলেন, তাঁতের জিনিসের এত দাম কেন! এত দাম দিয়ে কেন কিনব? তাঁতপণ্যের যে কাঁচামাল সেগুলোর দাম অনেক বেশি। এ কারণে তাদের পণ্যেরও দাম বেশি। দেশীয় এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে।’
নিশা আরও বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে ডেলিভারি ও অন্যান্য লজিস্টিকস চালু করতে হবে। উদ্যোক্তারা যেন প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে পারেন, সরকারকে সেই সুযোগটা করে দিতে হবে। এটা চালু করতে পারলে যারা গ্রামে ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছেন তারা সামনে আসতে পারবেন। প্রচুর নারী গ্রামীণ সেক্টর থেকে কাজ করছেন। তাদের সামনে আনতে হলে ঢাকার বাইরে ডেলিভারি সিস্টেমকে নিয়ে যেতে হবে।’
‘আইটি খাতে বাজেট বাড়িয়ে ঋণের সহজশর্ত দেয়া উচিত’
প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মস্থানে গুরুত্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ভ্যাক্যান্সি অ্যানাউন্সমেন্ট ইন বিডির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু জাফর বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের একটা বাজে সময় যাচ্ছে। অনেক তরুণ চাকরি হারিয়েছেন। সরকারের উচিত, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করা এবং দ্রুত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করে দেয়া। তা না হলে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে দেশে ছোট ছোট ক্রাইম (অপরাধ) বেড়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণসমাজ এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে। এ সুযোগটি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ৪০ লাখের মতো শিক্ষিত বেকার আছেন। একসঙ্গে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির পরিবেশ তৈরি করতে অনেক সময় লেগে যাবে। প্রযুক্তিভিত্তিক চাকরির প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো উচিত। এ খাতে ছোট ছোট উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের মেধা ও সেবা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটা ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। একজন ছোট উদ্যোক্তা গড়ে ১০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম। আইটি খাতে বাজেট বাড়িয়ে ব্যাংক ঋণের সহজশর্ত দেয়া উচিত।’
অনলাইন পণ্য ট্র্যাকিংভিত্তিক কুরিয়ার কোম্পানি ই-কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘আমাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। সেটা কমিয়ে ৪ শতাংশে আনা হোক। আমরা যেহেতু সার্ভিস অপারেটর, সার্ভিসের ক্যাটাগরিতে আনার একটা প্রস্তাবনা আমরা করছি। আমরা কোনো প্রোডাক্ট সেল (বিক্রি) করি না, সার্ভিস সেল করি। এখানে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট অনেক বেশি।’
এসএম/এমএসএইচ/এইচএ/এমকেএইচ