তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
একদিকে চলছে রমজান মাস, অন্যদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ। এই দুই মিলে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তরমুজের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান ও বাজার ভেদে তরমুজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, যা রোজা শুরু হওয়ার আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। আর এবার বাজারে প্রথম যখন তরমুজ আসে, সে সময় কেজি ছিল ৫০ টাকার মধ্যে।
তরমুজের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিধিনিষেধের কারণে ঢাকায় তরমুজ কম আসছে। এছাড়া তরমুজের মৌসুমও শেষ হয়ে আসছে। এসব কারণেই তরমুজের দাম বেড়ে গেছে।
তারা আরও বলছেন, তরমুজের মৌসুম খুব বেশি দিন থাকে না। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আসে পটুয়াখালী থেকে। ইতোমধ্যে পটুয়াখালীর তরমুজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে তরমুজ বেশি আসছে।
রামপুরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি তরমুজ বিক্রি করা ইব্রাহীম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের দাম বেশি। গত বছর এমন সময় ৬-৮ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি করেছি ২০০ টাকার মধ্যে। এবার পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রিই হয়নি। শুরু থেকেই কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে যখন তরমুজ নতুন আসে সে সময় কেজি বিক্রি করেছি ৫০ টাকা। মাঝে দাম কমে ৩০ টাকা হয়েছিল। রোজার আগেও ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু গত তিনদিন ধরে যে দামে কেনা পড়ছে তাতে বড় তরমুজের কেজি ৬০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।
ইব্রাহীম আরও বলেন, রোজার কারণে এখন তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। আবার লকডাউনের কারণে তরমুজ আসা কমেছে। আমরাও অনেক কষ্ট করে আড়ত থেকে তরমুজ আনছি। এছাড়া তরমুজের মৌসুম আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে। সবকিছু মিরিয়ে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে। এবার তরমুজের দাম আর কমার সম্ভাবনা কম।
বাড্ডায় ভ্যানে তরমুজ বিক্রি করা ইসমাইল বলেন, ছোট তরমুজের কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। আর বড় তরমুজের কেজি ৬০ টাকা। রোজার আগে ছোট তরমুজের কেজি ২৫ টাকা এবং বড় তরমুজের কেজি ৩০ টাকা ছিল।
তিনি আরও বলেন, ছোট হোক বা বড় এখন সব তরমুজই লাল ও মিষ্টি। তবে অবশ্যই বড় তরমুজের চাহিদা বেশি। এ কারণে দামও বেশি।
পটুয়াখালীর তরমুজ চাষি বেল্লাল কেদা বলেন, এবার আমি ৫ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। আমার সব তরমুজই উঠে গেছে (বিক্রি হয়ে গেছে)। বড় তরমুজ একশ পিস ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছি। ছোটগুলো একশ পিস ৮ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার মতো পটুয়াখালীর প্রায় সবার তরমুজ শেষ হয়ে গেছে। এখন তরমুজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে রাঙ্গাবালীতে। পটুয়াখালীতে অল্প যে তরমুজ আছে তার দাম অনেক বেশি। ৫-৬ কেজি ওজনের একশ তরমুজ ২৫ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। রাঙ্গাবালীতেও এখন তরমুজের এমন দাম।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তরমুজে খুব সামান্য ক্যালোরি আছে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ। মৌসুমি এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না। তরমুজের আরো একটি গুণ হলো, এটি চোখ ভালো রাখতে কাজ করে। তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় এ ফলটি চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। সেই সঙ্গে চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে তরমুজ।
চিকিৎসকরা বলেন, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তরমুজে প্রচুর পানি এবং কম ক্যালরি থাকায় পেট পুরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা উচ্চ পরিমাণে সিট্রুলিন মানবদেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
এমএএস/এমএসএইচ/জেআইএম