এমারেল্ড অয়েলের অস্বাভাবিক দাম, সতর্ক করল ডিএসই
গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এ জন্য রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে জানানো হয়েছে- এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার দাম কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক বেড়েছে।
ডিএসই জানিয়েছে, শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ জানাতে ১৫ এপ্রিল কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৩০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ টাকা ৫০ পয়সা।
হঠাৎ কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। জড়িয়েছে ঋণ কেলেঙ্কারিতেও। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় উদ্যোক্তা পরিচালকরা জড়িয়ে পড়ায় মূলধন সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চার বছর ধরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ফলে স্থান হয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানির তালিকায়। এসব কারণে সম্প্রতি এমারেল্ড অয়েলের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে বিএসইসি। পরিচালনা পর্ষদের অন্য স্বাধীন পরিচালকরা হলেন- বিআইবিএমের প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার, সজীব হোসেইন ও সন্তোষ কুমার দেব।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালকদের কেউ পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধিত্ব কিংবা নির্বাচিত হতে পারবেন না। একইসঙ্গে বর্তমান পর্ষদের ধারণ করা শেয়ারও বিক্রয় বা স্থানান্তরে পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এছাড়া কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির কোনো সম্পদ বিক্রি, জামানত রাখা কিংবা স্থানান্তর করা যাবে না।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে ২০১৬ সালে কোম্পানিটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অনিয়মের মাধ্যমে এমারেল্ড অয়েল বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৭৪ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নেয়, যা বর্তমানে সুদে-আসলে প্রায় ১২৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ওই ঋণ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক পরিচালক মিলিয়ে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এ মামলায় কোম্পানির প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব কিছুদিন জেলও খেটেছেন। পরে জামিন নিয়ে গনিসহ মোট তিন উদ্যোক্তা পরিচালক বিদেশে পালিয়ে যান, যাদের হাতে কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের বড় অংশ রয়েছে। এরপর থেকেই চরম সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। ২০১৬ সালের পর কোনো নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি এই প্রতিষ্ঠানটি।
এমএএস/বিএ/এমএস