ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

স্বাভাবিক পণ্য সরবরাহ, বাজারও স্থিতিশীল

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২১

নিত্যপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা লকডাউনের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও গত বছর লকডাউনের সময় বিভিন্ন কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে চলতি বছর লকডাউনের কারণে এখনো পণ্য সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সম্প্রতি ঘোষিত লকডাউনের প্রথম দিনে সোমবার (৫ এপ্রিল) সবজি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়তদার সমিতির সভাপতি এটিএম ফারুক সোমবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোববার (লকডাউনের আগের দিন) গ্রামে ফেরা মানুষের চাপে রাস্তায় প্রচুর যানজট ছিল। এ কারণে সবজির সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে আজ (সোমবার) রাত থেকে কোনো সমস্যা হবে না। গ্রামগঞ্জের হাট থেকে নির্বিঘ্নে সবজি আসছে।’

রাজধানীর ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার মৌলভীবাজার। তেল, চিনি, লবণের মতো নিত্যপণ্যের বেচাকেনা পুরান ঢাকার এ বাজারেই সবচেয়ে বেশি।

সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনে এখনো কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বরং লকডাউনের প্রথম দিন তেল-চিনির দাম পাইকারি বাজারে নিম্নমুখী ছিল। দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে সবাই খুব আন্তরিক। শিল্পকারখানারও উৎপাদন-বিপণন খোলা রয়েছে। সবমিলিয়ে এ বছর আগের মতো পণ্য নিয়ে উদ্বেগ নেই।’

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পণ্য সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছি। নিজস্ব পরিবহনে দেশের সবখানে পণ্য যাচ্ছে। ফলে সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ফলে দাম বাড়বে না।’

এদিকে চলমান লকডাউনে রাজধানীর কাঁচাবাজার খোলা থাকছে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ কারণে প্রথম দিনে বিক্রি খুব বেশি হয়নি পাইকারি বাজারে। তবে গত বছর ক্রেতারা অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাজারে চাপ তৈরি করায় লকডাউনের শুরুর দিকে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছিল, এবার তেমন হয়নি।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত পণ্য মজুদের কারণে গত লকডাউনে পণ্যের দাম বেড়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরাও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছিলেন। ক্রেতারা সচেতন হলে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না।’

jagonews24

লকডাউনে আতঙ্কিত হয়ে ভোক্তাদের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে অস্বাভাবিক কেনাকাট না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত বছর লকডাউনে পণ্যের সংকটের বড় কারণ ছিল বন্দরে পণ্যের জট। সে সময় পণ্য ডেলিভারি মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। এবারের লকডাউনে কন্টেইনার জট এড়াতে পণ্য ডেলিভারি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেছেন, ‘দেশে লকডাউন দেয়া হলেও বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না। পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পণ্য সরবরাহে যেন সমস্যা না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে।’

অন্যদিকে লকডাউনে কৃষি পণ্যের সরবরাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সড়ক, নৌ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। নিয়মিত পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েতে ফ্রিজিং ওয়াগন চালু করে ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ।

jagonews24

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের শুরুতে কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের ক্ষতি হয়েছিল। এবার যেন সেই ক্ষতি না হয় সেজন্য আগেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

পাশাপাশি এ লকডাউনে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম পরিবহন-বিপণনের সংকট কাটাতে করোনায় ও রমজানে মানুষের কাছে এসব পণ্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এছাড়া রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ বছর বাড়তি চাহিদার পণ্যগুলোর ১০-১২ শতাংশ মজুত করেছে। বাড়তি দামের কারণে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল কেনার জন্য ইতোমধ্যে টিসিবির ট্রাকেও অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এনএইচ/এমএইচআর/এইচএ/জেআইএম