মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনা চার্জে লেনদেন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপিত সময়ে এটিএম বুধ, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট, অ্যাপ ও ইউএসএসডিভিত্তিক সব লেনদেন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি পরিপালনের নির্দেশের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সেবায় প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে গ্রাহককে কোনো চার্জ দিতে হবে না।
রোববার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করে।
দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ব্যাংক ও সব ধরনের আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আইসিটিসহ স্ব স্ব ক্রিটিকার সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ‘কি পারসন’ চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবা চালু রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবসায় ধারাবাহিকতা পরিকল্পনা (বিসিপি) প্রণয়ন করবে।’
‘গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের জন্য ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার, এটিএম, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট পয়েন্ট এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) এজেন্ট পয়েন্টে নগদ অর্থ ও ই-মানি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সরবরাহের সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করবে। লেনদেনের স্থান অর্থাৎ ব্যাংক, এটিএম, পোজ ও এজেন্ট পয়েন্টে নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত ও তদস্থলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংক ও সকল ধরনের আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পরিশোধ সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সবার জন্য সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করবে।’
‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণের স্ব স্ব ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব, এমএফএস হিসাব, এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব ও পিএসপি হিসাবকে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।’
মোবাইল ব্যাংকিং
‘এমএফএস-এর ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনের সর্বোচ্চ মাসিক সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল পদ্ধতি সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে মাসিক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জবিহীন লেনদেন করা যাবে। চার্জবিহীন ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) একক লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা লকডাউন চলাকালে এ সুবিধা পাবেন।’
ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে ছাড়
‘ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের তারিখ সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপকালীন সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত থাকলে ওই বিল পরিশোধের তারিখ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হওয়ার পর ৫ কর্মদিবস পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ বা বর্ধিত করতে বলা হয়েছে। পরিশোধের সময়সীমা পর্যন্ত লেট পেমেন্ট ফি আরোপ না করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপকালীন সময়সীমার মধ্যে শুধুমাত্র প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্টের ওপর সুদ আরোপ করা যাবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী মাসের বিলে, পূর্ববর্তী মাসের বিলের সুদের ওপর কোনো প্রকার নতুন সুদ আরোপ করা যাবে না। এনএফসি সুবিধাযুক্ত কার্ডের লেনদেন সীমা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে।
ক্লিয়ারিং হাউসের লেনদেন
‘জরুরি আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পন্নের সুবিধার্থে সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের কার্যক্রমও সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।’
‘লকডাউনে পাঁচ লাখ টাকার বেশি অঙ্কের চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য সকাল ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে। এসব চেক বেলা ১২টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর যেকোনো রেগুলার চেক সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউজে পাঠাতে হবে। এসব চেক নিষ্পত্তি হবে বেলা ১টার মধ্যে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই সময়ে চেক ক্লিয়ারিং করবে বিএসিএইচ। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপকালে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে লেনদেন হবে ১০টা হতে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।’
‘সার্বক্ষণিকভাবে এটিএম, পোজ, ইন্টারনেট, অ্যাপ ও ইউএসএসডিভিত্তিক লেনদেন সেবা চালু রাখতে হবে। এজন্য সকল ব্যাংক, এমএফএস, পিএসপি এবং পিএসওসমূহ স্ব স্ব সিস্টেম অবকাঠামোর ওপর সতর্ক নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী সকল অবকাঠামো যথারীতি চালু রাখতে হবে এবং এ সংক্রান্ত নিরাপত্তা ও সাইবার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকবে।’
‘ব্যাংক ও পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অভিযোগ গ্রহণ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ২৪/৭ হটলাইন ও ইন্টারনেটভিত্তিক গ্রাহক সেবা চালু রাখতে বলা হয়েছে।’
ইএআর/এআরএ